- বইয়ের নামঃ কমেডি
- লেখকের নামঃ উইলিয়াম শেকসপিয়র
- প্রকাশনাঃ দেব সাহিত্য কুটীর প্রাইভেট লিমিটেড (ভারত)
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, নাটকের বই
কমেডি
অলস ওয়েল দ্যাট এন্ডস ওয়েল
রুসিলন ফরাসি সাম্রাজ্যের অধীনস্থ একটি প্রদেশ। সেখানকার শাসনকর্তা কাউন্টের মৃত্যুর পর নতুন কাউন্ট হলেন তারই যুবক পুত্র বারট্রাম। তার বাবা ছিলেন এক সাহসী যোদ্ধা। যুদ্ধে বীরত্ব দেখিয়ে তিনি ফরাসি সম্রাটের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছিলেন। কাউন্টের মৃত্যুর খবর শুনে মনে খুব আঘাত পেলেন ফরাসি রাজ। তিনি তার প্রৌঢ় অমাত্য লর্ড লাফিউকে রুসিলনে পাঠালেন কাউন্টের ছেলে বারট্রামকে রাজসভায় নিয়ে আসতে। বারট্রামের বিধবা মার কানে যথাসময়ে পৌঁছে গেল সে খবরটা। ছেলেও তার বাবার মতো সাহসী, যুদ্ধবিদ্যায় পারদশী। সে সময় পার্শ্ববতী দেশগুলির ফ্রান্সের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকত। কাজেই যুদ্ধ-বিগ্রহের প্রয়োজনেই যে বারট্রামকে নিয়ে যাওয়া হবে তা বুঝতে বাকি রইল না বিধবা কাউন্টেসের। যথা সময়ে লর্ড লাফিউ এলেন রুসিলনের প্রাসাদে! এগিয়ে গিয়ে তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানাল বারট্রাম। লর্ড লাফিউকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন কাউন্টেস। লাফিউ এর কারণ জানতে চাইলে তিনি দুচোখমুছে ধরা গলায় বললেন, মি লৰ্ড, আপনি তো জানেন সামান্য কিছুদিন আগে আমি স্বামীহারা হয়েছি। এখন ছেলে বারট্রামই আমার একমাত্র অবলম্বন। ও যদি যুদ্ধে চলে যায় তাহলে আমার কী অবস্থা হবে, কীভাবে আমার দিন কাটবে–এসব ভেবেই কাদছি আমি।
তাকে আশ্বস্ত করে লর্ড লাফিউ বললেন, আপনি মিছামিছিই ছেলের জন্য চিন্তা করছেন কাউন্টেস। যুদ্ধ করতে গিয়ে যদি ওর কোনও ক্ষতি হয়, তাহলে স্বয়ং সম্রাট আপনার ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবেন।
কাউন্টেস বললেন, আমি শুনেছিলাম সম্রাট খুব অসুস্থ। তা এখন তিনি কেমন আছেন?
মনোেবল ভেঙে পড়ছে। এমন কি রাজবৈদ্যের উপর ভরসা রাখতে না পেরে কদিন আগে তাকেও বিদায় করে দিয়েছেন। দুরারোগ্য রোগের দরুন হতাশা সম্বল করে কোনও মতে বেঁচে আছেন তিনি।
এ কথা শুনে আক্ষেপের সুরে কাউন্টেস বললেন, আজ যদি হেলেনার বাবা জীবিত থাকতেন তাহলে তিনি অবশ্যই সম্রাটকে সারিয়ে তুলতে পারতেন।
কার কথা বলছেন কাউন্টেস? জানতে চাইলেন লর্ড লাফিউ। কাউন্টেসের পাশে বসে একটি সুন্দরী যুবতি চুপচাপ চোখের জল ফেলছিল। তাকে দেখিয়ে কাউন্টেস বললেন, আমি এরই কথা বলছি। এর নাম হেলেনা। ওর বাবা গেরার্দ দ্য নিরবোন ছিলেন একজন নামি চিকিৎসক। বাবার মৃত্যুর পর থেকেই ও আমার কাছে আছে, লেখা-পড়া শিখছে। তাছাড়া আরও অনেক গুণ আছে ওর।
মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হেলেনাকে বললেন কাউন্ট বারট্রাম, হেলেনা, আমি যাচিছ। এখন থেকে মার দেখা-শোনার সব ভার রইল তোমার উপর। আর তুমিও নিজের শরীরের যত্ন নেবে। —এই বলে লর্ড লাফিউয়ের সাথে চলে গেলেন।
আশ্রিতা হলেও কাউন্টেসের ছেলে বারট্রামকে ভালোবাসে হেলেনা, যদিও তার মতো বংশমর্যাদা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠা তার নেই। নামি চিকিৎসক হলেও হেলেনার বাবা ছিলেন সমাজের এক সাধারণ স্তরের লোক। এই সামাজিক ব্যবধানের দরুন বারট্রামকে ভালোবাসলেও সে তার স্ত্রী হবার স্বপ্নও দেখেন। ওদিকে বারট্রামও জানেনা হেলেনা তাকে এত ভালোবাসে। মৃত্যুর আগে হেলেনার বাবা তাকে হাতে-কলমে শিখিয়ে গিয়েছিলেন অনেকদুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসা পদ্ধতি। দুস্তপ্রাপ্য শেকড়-বাকড় আর জড়িবুটির গুণাগুণ। সম্রাটের দূরারোগ্য ব্যাধির বিবরণ শুনে সে স্থির করল। প্যারিসে গিয়ে সম্রাটের চিকিৎসা করবে। তার বিশ্বাস, বাবার শেখানো চিকিৎসা পদ্ধতিতে সম্রাট অবশ্যই আরোগ্যলাভ করবেন। তার মনে এই আশাও উকি দিল প্যারিসে গেলে হয়তো বারট্রামের সাথে তার দেখাও হয়ে যেতে পারে।
হেলেন যে বারট্রামকে ভালোবাসে এ কথা অজানা নেই। কাউন্টেসের একদিন তিনি মুখ ফুটেই বললেন, হেলেনাকে তিনি পুত্রবধূ হিসেবে চান। তিনি তাকে প্যারিসে গিয়ে সম্রাটের চিকিৎসা করার অনুমতি দিলেন। সেই সাথে প্রয়োজনীয় টাকা-কড়ি আর কয়েকজন বিশ্বস্ত লোকও দিয়ে দিলেন তার সাথে।
শুরুতে রাজি না হলেও যখন শুনলেন হেলেনা গেরার্ড দ্য নিরবোনের মেয়ে, সম্রাট রাজি হলেন তাকে দিয়ে নিজের চিকিৎসা করাতে। তবে শর্ত রইল দু-দিনের মধ্যে সম্রাট সুস্থ হয়ে না। উঠলে প্ৰাণদণ্ড হবে হেলেনার। আর সম্রাট সুস্থ হয়ে উঠলে রাজসভার যে কোনও অভিজাত যুবককে বিয়ে করতে পারবে হেলেনা। সম্রাট নিজে দাঁড়িয়ে সে বিয়ে দেবেন। হেলেনা রাজি হল সম্রাটের প্রস্তাবে।
হেলেনার দেওয়া ওষুধ খেয়ে দুদিনের মধ্যেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলেন সম্রাট। তার মনে হল তিনি যেন নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন। এবার সম্রাটের আদেশে রাজসভার অবিবাহিত অভিজাত যুবকেরা সবাই সারি দিয়ে দাঁড়াল একপাশে। সম্রাট হেলেনাকে বললেন, সে এদের মধ্য থেকে কাউকে স্বামী হিসেবে বেছে নেয়।
তাদের মধ্যে খুঁজতে খুঁজতে হেলেনার চোখে পড়ল রুসিলনের কাউন্ট বারট্রামকে। সে সরাসরি তার কাছে গিয়ে বলল, আমি আপনাদের আশ্রিতা। সেহেতু আপনাকে আমার স্বামীরূপে ভেবে নেবার সাহস বা অধিকার আমার নেই। আমি শুধু এটুকু আশ্বাস দিতে পারি। যতদিন বেঁচে থাকব। প্ৰাণ দিয়ে আপনাদের সেবা করে যাব।