আমি নিজেও যে একই ধরনের নায়কোচিত একটা কাজ করবার প্রাক্কালে ছিলাম, সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হলো ব্যাপারটা। আমার মেজাজটা আরো খারাপ হলো তাতে। হঠাৎ টের পেলাম, পানিতে ওর স্কার্ট হারিয়েছে লসট্রিস; ঠান্ডা আর ভেজা আমার দেহের সাথে লেপ্টে থাকা শরীর সম্পূর্ণ নগ্ন ওর। যোদ্ধাদের কর্কশ দৃষ্টির সামনে পুরো মিশরের সবচেয়ে সুদর্শন, কমনীয় জোড়া-পুচ্ছ প্রদর্শন করছে সে এই মুহূর্তে।
কাছের একটা ঢাল তুলে নিয়ে আমাদের দুজনের শরীরই আড়াল করলাম আমি, দাসী মেয়েগুলোকে চিৎকার করে বললাম লসট্রিসের জন্যে আরেকটি স্কার্ট নিয়ে আসতে। ওদের খিলখিল হাসি আমার রাগ আরো বাড়িয়ে দিল; শেষমেষ আমি এবং লসট্রিস দুজনেই ভদ্রস্থ অবস্থা ফিরে পেতে ট্যানাসের উদ্দেশ্যে বললাম:
আর তুমি! অসাবধান বর্বর! আমার প্রভু, ইনটেফের কাছে তোমার ব্যাপারে বলব আমি! তোমার পাছার ছাল যদি না তুলে নেওয়া হয়েছে–
তুমি এমন কিছু করবে না, হেসে বললো ট্যানাস। শক্তিশালী দুই হাতে মতো জোরে জড়িয়ে ধরলো আমাকে, প্রায় শূন্যে উঠে গেলো পুরো শরীর। কেননা, সত্যিই স্বানন্দে আমার পাছার ছাল তুলে নেবেন উনি; যাই হোক, তোমার উদ্বেগের জন্যে ধন্যবাদ, বুড়ো বন্ধু।
দ্রুত ঘুরলো সে, এক হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে ভুরু কোঁচাকালো। বাহিনীর অন্যান্য জাহাজগুলো থেকে আলাদা হয়ে গেছে হোরাসের প্রশ্বাস, এতক্ষণে অবশ্য শিকার অভিযান শেষ হয়েছে। আমাদেরটা ছাড়া অন্য সবগুলো গ্যালি পুরোহিতদের নির্দেশিত পরিমাণ নিয়ে ফেলেছে।
মাথা নাড়ল ট্যানাস। আমরা সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারি নি, তাই না? হতাশার ধ্বনি বেরুলো তার গলা থেকে; বাহিনীকে ফিরে আসার জন্যে নতুন বার্তা সম্বলিত পতাকা উত্তোলনের নির্দেশ দিলো সে।
জোর করে হাসলো এরপরে আমার উদ্দেশ্যে। চল, এক জগ সুরা পাণ করা যাক। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে, বেশ তৃষ্ণা পেয়ে গেছে। গলুইয়ের কাছে, যেখানে দাস-মেয়েগুলো গুজুড়-গুজুড় করছিল লসট্রিসের সাথে, সেই দিকে হেঁটে গেলো সে। প্রথমটায় এতো রেগে ছিলাম আমি, ভাবলাম এই পিকনিকে যোগ দেব না। স্টার্নের উদ্দেশ্যে হেঁটে যেতে থাকলাম দৃষ্টিতে বিরক্তি নিয়ে।
ওহ, ওকে কিছুসময় একা থাকতে দাও, ইচ্ছাকৃত জোরাল শব্দে ট্যানাসের কানে ফিসফিস করছে লসট্রিস; শুনতে পেলাম। ওর পাণ-পাত্র ভরে দিচ্ছে মেয়েটা। বুড়ো প্রিয়তমা আজ বেশ ভয় পেয়ে গেছে। তবে খিদে পেলে ঠিক হয়ে যাবে ও। খাওয়া ভালবাসে সে।
এই হলো আমার মিসট্রেসের বিচার; আমি মোটেও পেটুক নই, আর সেই সময় আমার বয়স ছিলো মাত্র ত্রিশ বছর। অবশ্য চৌদ্দ বছরের বালিকার পক্ষে ত্রিশ বছরের কাউকে বুড়ো মনে হতেই পারে, সেটা আমি মানি; তবে এটা সত্যি, খাওয়া-দাওয়ার বেলায় আমার রুচি একটু উঁচুই । বুনো হাঁসের ঝলসানো মাংস, ওটা এখন শোভা পাচ্ছে ওর থালায়, আমার খুব প্রিয় সেটা; বোধকরি, লসট্রিসও জানে এটা।
আরো কিছুক্ষণ ওদেরকে শাস্তি দিলাম আমি। শেষমেষ ট্যানাস নিজে এসে একটা পাত্রে সুরা বাড়িয়ে ধরে আহ্বান করতে ওর সাথে যোগ দিতে এগুলাম। এরপরেও, বেশ খানিকটা আড়ষ্ট বোধ করছিলাম, তবে লসট্রিস আমার দুই গালে চুমো খেতে বরফ গললো একটু; সবাইকে শুনিয়ে সে বললো, মেয়েরা আমাকে বলেছে, ঠিক বয়োজেষ্ঠ্য যোদ্ধার মতোই জাহাজের নির্দেশ দিয়েছিলে তুমি; আর একটু হলে নাকি নিজেই লাফিয়ে পানিতে পড়তে, আমাকে উদ্ধার করতে । ওহ টাইটা, তোমাকে ছাড়া কেমন করে চলতো আমার? কেবলমাত্র এই কথার পড়েই ওর এগিয়ে দেওয়া হাঁসের মাংস নিলাম আমি, হাসলাম একটু। দারুন ছিলো খাবারটা, আর সুরাটাও প্রথম শ্ৰেণীর। খুব কম করেই খেলাম, নিজের স্বাস্থ্যের দিকেও তো নজর রাখতে হবে– আমাকে। আর তাছাড়া, আমার ক্ষুধা সম্পর্কিত লসট্রিসের কিছুক্ষণ আগের উপহাসও ভূমিকা রাখলো এতে।
ল্যগুনের চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছিলো ট্যানাসের বাহিনী। এতক্ষণে একত্র হতে কে করেছে জাহাজগুলো। কিছু কিছু গ্যালি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে–লক্ষ করলাম। শিকারের উত্ততায় মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটেছিল দুটো জাহাজের; বাকি চারটে আক্রান্ত হয়েছে জলহস্তির দ্বারা। যাই হোক, দ্রুতই একত্র হয়ে ফিরে যেতে উদ্যত সব কয়টা। হোরাসের প্রবাসের সমান্তরালে আসতে হর্ষ ধ্বনি করলো নাবিকেরা। মুঠি বদ্ধ হাত উঁচিয়ে অভিবাদনের প্রতুত্তর জানাল ট্যানাস; আমাদের মাস্ট হেডে শোভা পাচ্ছে নীল কুমীর বাহিনীর প্রতীক। হয়তো একটু ছেলেমানুষি কিন্তু সামরিক বাহিনীর উদ্যাপনের প্রকার তো এমনই।
প্যাডল এবং হালের অপূর্ব সমন্বয়ে জাহাজগুলো ধীরে নিজ নিজ অবস্থানে চলে এলো; মৃদু-মন্দ নীল নদের বাতাসের বিপরীতে। শিকার করা জলহস্তির কোনো চিহ্ন অবশ্য দেখা যাচ্ছে না, প্রতিটি গ্যালি কমপক্ষে একটি ক্ষেত্র বিশেষে দুই কি তিনটি করে জন্তু মেরেছে। ভারী মৃতদেহগুলো হারিয়ে গেছে হ্রদের গভীর জলের তলায়। আমি জানি, ট্যানাস মনে মনে অনুতাপ করছে, হোরাসের প্রশ্বাস শিকার অভিযানে সবচেয়ে সফল না হওয়ায়। আসলে, মদ্দাটার সাথে আমাদের যুদ্ধে বেশ খানিকটা সময় চলে যাওয়ায় কেবল ওই একটি জানোয়ার মারতে সক্ষম হয়েছি আমরা। নিজের জন্যে সর্বোচ্চ স্থান সব সময় ট্যানাসের আরাধ্য। হোরাসের প্রশ্বাসের জখমি হাল মেরামতের তদারকি করতে চললো সে।