কী অসাধারণ এক জোড়া ডিম আছে! দাঁত বের করে হেসে হাতের ছুরিটা আমাকে দেখিয়েছিল র্যাসফার । কিন্তু আফসোস, ওগুলো কুমীরের খাদ্য হবে, তোর মাগীর মতোই। ফলাটাকে চুমো খায় সে।
দয়া করুন, মালিক, আমি প্রার্থনা করেছিলাম। দয়া করুন। কিন্তু আমার আবেদন তীক্ষ্ণ আর্তনাদে পর্যবসিত হয়েছিলো, সেই মুহূর্তেই ছুরি চালিয়ে দিলো র্যাসফার। মনে হলো যেন, গনগনে লাল লোহার কাঠি কেউ ঢুকিয়ে দিয়েছে আমার পেটের ভেতর।
ওগুলোকে বিদায় বলো, ছোকরা, বিষণ্ণ, ভজ পরা চামড়ার দুটো থলে আর ওগুলোর ভেতরের জিনিস দেখালো আমাকে রাসফার। উঠে দাঁড়াতে গিয়েছিল সে, আমার মনিব বাধা দিয়েছিলেন। এখনও শেষ হয় নি, শান্তভাবে তাকে বললেন ইনটেফ। পুরোটা চাই আমার।
প্রথমটায় বোকার মতো তাঁর দিকে চেয়ে রইল র্যাসফার, নির্দেশটা বুঝতে পারেনি। এরপরে হাসির দমকে কেঁপে উঠে তার বিশাল পেট। হোরাসের রক্তের শপথ, গর্জে উঠে সে, এখন থেকে আমাদের ছোকরাকে মেয়েদের মতো বসে পেচ্ছাব করতে হবে! আবারো ছুরি চালায় সে, আঙুলের মতো বিচ্ছিন্ন অঙ্গ আমাকে দেখিয়ে হাসিতে ফেটে পড়ে।
এখন থেকে নিজেকে অনেক হালকা বোধ হবে তোর। হাসির দমকে কাঁপতে কাঁপতে চাতালের প্রান্তে যায় সে, ছুঁড়ে নদীতে ফেলবে ওটা। কিন্তু আবারো আমার মনিব তীক্ষ্ণ কণ্ঠে ডেকে থামায় তাকে।
ওগুলো আমাকে দাও! তাঁর নির্দেশে বাধ্যগতের মতো রক্তাক্ত খণ্ডগুলো হাত বদল করে রাসফার। ক মুহূর্তের জন্যে দারুন মনোযোগর সাথে ওগুলো পরীক্ষা করে দেখেন ইনটেফ, এরপরে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, এত সুন্দর পুরস্কারের থেকে তোমাকে আমি চিরতরে বঞ্চিত করতে পারি না, প্রিয়। এগুলো শব প্রস্তুতকারীদের কাছে পাঠাবো আমি, ওরা ফিরিয়ে দিলে মুক্তো আর ল্যাপিস-লাজুলির সাথে গলার হারে পড়বো। ওসিরিসের আগামী উৎসবে ওটাই হবে আমার পক্ষ থেকে তোমার উপহার। এতে করে, কবরে যাওয়ার দিনে ওগুলো দেওয়া যাবে সাথে; দেবতারা সদয় হলে হয়তো পরের জীবনে ব্যবহার করতে পারবে ওটা।
শব প্রস্তুতির তরল দিয়ে আমার রক্তপাত বন্ধ করার সাথে সাথেই শেষ হওয়ার কথা ছিলো সেই অধ্যায়ের, কিন্তু আজ, এখন, আবারো সেই দুঃস্বপ্নে আটকে গেছি আমি। আবারো ঘটছে সেটা। কেবল এলাইদা নেই এবারে, আর খোঁজা-করা ছুরির বদলে র্যাসফারের লোমশ হাতে শোভা পাচ্ছে জলহস্তির চামড়ার চাবুক।
প্রায় ব্যাসফারের হাতের সমান লম্বা চাবুকটা, প্রান্তে এসে তার কড়ে আঙুলের মতো চিকন। ওটা প্রস্তুত করতে দেখেছি আমি ওকে। তৈলস্ফটিকের মতো রঙ ওটার, র্যাসফারের আদুরে পালিশে কাঁচের মতো ঝকঝক করছে। কতশত হতভাগ্যের রক্ত যে ওতে শুকিয়েছে দানবটা, তার কোনো হিসেব নেই।
একজন শিল্পী যেনো সে, ওই অস্ত্র হাতে। নিজের কাজ ভালবাসে গ্যাসফার, তার সমস্ত হিংসা আর নীচ মন নিয়ে ঘৃণা করে আমাকে; মনিবের আনুকূল্য আর সুদর্শন অবয়বের জন্যে।
আমার নগ্ন পিঠে চাপর দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ইনটেফ। মাঝে মধ্যে এতো চতুর তুমি, প্রিয় টাইটা। যার প্রতি তোমার এতো ঋণ, তাকেই প্রতারিত করতে চাও। না, না, কেবল ঋণ নয়, তুমি বেঁচে আছে যার দয়ায়। আবারো দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ইনটেফ। এই বাজে কাজটা করতে কেন আমাকে বাধ্য কর তুমি? উন্মাদের কাজ ওটা, এই প্রস্তাব আমি অবশ্য জানি, কেন এটা করলে তুমি। বাচ্চাদের মতো আবেগ তোমার বহু দুর্বলতার মধ্যে একটা। কোনদিন হয়তো ওটাই তোমার কাল হবে। যাই হোক, এক সময় ভেবেছিলাম তোমাকে ক্ষমা করে দেব, কিন্তু যে দায়িত্ব আমি তোমাকে দিয়েছি, এতে করে বরখেলাপ করা হলো তার। আমার মুখ ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফেরালেন তিনি। এ জন্যেই তোমাকে শাস্তি দিতেই হবে। বুঝতে পারছো?
জ্বী, মালিক, ফিসফিস করে বললাম। চোখের কোণা দিয়ে ব্যাসফারের হাতের চাবুকটা দেখছি। আবারো তার কোলে আমার মুখ চেপে ধরলেন ইনটেফ, ডাকলেন র্যাসফারকে।
তোমার সেরা কাজ চাই, র্যাসফার। চামড়া যেনো না ফাটে। এতো সুন্দর পেছনটা দাগ পড়ে যাক, চাই না। দশটা দিলেই চলবে, জোরে গুনো যাতে আমরা শুনতে পাই।
একশ বা তার অধিক হতভাগ্যকে এই শাস্তি পেতে দেখেছি আমি, তাদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলো বীর যোদ্ধা। রাসফারের চাবুকের তলায় কেউ শান্ত থাকতে পারে নি। আমি নিজেও তা চাই না, নীরবতাকে ব্যক্তিগত অপমান বলে মনে করে সে। ওটাতো আমি জানিই। যে কোনো রকম বোকা গর্ব গিলে ফেলে তার কাজের প্রশংসা উচ্চ স্বরে করার প্রস্তুতি হিসেবে ফুসফুস ভরে বাতাস নিলাম।
এক! হুঙ্কার করে উঠলো র্যাসফার, বাঁশির মতো শব্দ করে আঘাত হানল চাবুক। সন্তান জন্মদানের সময় কাতর মহিলাদের চেয়েও জোরে চেঁচিয়ে উঠলাম আমি, ব্যথার প্রাবল্য চমকে দিল।
তুমি ভাগ্যবান, প্রিয় টাইটা, আমার কানে নিচু স্বরে বললেন ইনটেফ। ওসিরিসের পুরোহিতেরা কাল পরীক্ষা করে দেখেছে ওকে, এখনও অক্ষত আছে সে। তার কোলে আঁতকে উঠলাম আমি। কেবল ব্যথায় নয়, ওই বুড়ো ছাগলের দল আমার ছোট্ট সোনার সবকিছু খুঁচিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছে–এই আফসোসে।
প্রতিবার আঘাতের পর বারাজ্জার চারপাশে ঘুরে ঘুরে নিজেকেই যেনো প্রশংসা করে রাসফার । শিকারকে আঘাত অনুধাবন করতে দেওয়ার এ তার বিশেষ কায়দা। উৎসবের তলোয়ারের মতো করে মাথার উপরে ধরে রাখে চাবুকটা। বৃত্ত পূর্ণ করে আবারো আঘাত হানতে ফিরে আসে সে, উঁচিয়ে ধরে চাবুকের হাতল।