*
লেখকের বক্তব্য
১৯৮৮ সালের ৫ জানুয়ারি, মিশরীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ডুরেইদ-ইবনে-আল সিমা নীলনদের পশ্চিম তীরে, ভ্যালি অব নোবলস্ এ একটি প্রাচীন সমাধি খুঁড়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। খ্রিস্টের মৃত্যুর পরবর্তী নবম শতকের একটি ইসলামিক মসজিদ সেই সমাধির উপরে নির্মিত হওয়ায় ধার্মিক নেতাদের সাথে দীর্ঘ আলাপচারিতা শেষে অনুমতি মিলেছিলো কবর খোঁড়ার ।
সমাধির যে গলিপথ মূল সমাধি-প্রকোষ্ঠে চলে গিয়েছিলো, তার দেয়াল এবং ছাদের অপূর্ব চিত্রকর্ম দেখে তাক লেগে গিয়েছিলো ড, ডুরেইদ-এর। চিরজীবন ভাস্কৰ্য্য এবং দেয়ালচিত্র নিয়ে কাজ করেও এতো অসাধারণ এবং নিখুঁত শিল্পকর্মের দেখা পাননি তিনি এর আগে।
পরে তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন, তৎক্ষণাৎ তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আবিষ্কারের বোধ জেগেছিলো। দেয়ালে আঁকা হায়ারোগ্লিফিকস–এর মধ্যে রাজকীয় বর্ণমালায় উল্লেখ ছিলো তখনো পর্যন্ত অনাবিস্কৃত এক মিশরীয় রাণীর কথা।
সমাধি-প্রকোষ্ঠে ঢোকার পর তার আগ্রহ আরো বাড়তে থাকে। কিন্তু প্রকোষ্ঠের সীল করা দরোজা ভাঙা অবস্থায় আবিষ্কার করেন তিনি। প্রাচীন সময়ে সমাধি-চোরদের উৎপাত ছিলো বেশ।
যা হোক, ড : সিমা সাফল্লের সাথে সেই সমাধির নির্মাণ-তারিখ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ১৭৮০ সালের কোনো এক দিন দুর্যোগ নেমে এসেছিলো মিশরের ভাগ্যাকাশে। পরবর্তী দুই শতক আলাদা হয়েছিলো এর দুই রাজ্য। সেই সময়ের ঘটনাবলির ভালো কোনো রেকর্ড নেই, তবে কথিত আছে, সেই বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকেই জন্ম নিয়েছিলো রাজকুমার এবং ফারাও-দের এক নতুন বংশধারা, যারা পরবর্তীতে হিকসস্ জবরদখলকারীদের উৎখাত করেছিলো মাতৃভূমি থেকে। ফিরিয়ে এনেছিলো তার প্রাক্তন গৌরব। এটা ভেবে আমি আন্দোলিত হই যে, লসট্রিস, ট্যানাস এবং মেমননের রক্ত বইছে তাদের দেহে।
সমাধি আবিষ্কারের প্রায় এক বছর পরে যখন ড. সিমা এবং তার সহকারীরা দেয়ালের হায়ারোগ্লিফিকস্-এর ছবি তুলে রাখছিলেন, দেয়ালের এক অংশের প্লাস্টার ধসে পড়ে লুকোনো ছোট্ট একটা প্রকোষ্ঠর দ্বার উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। সেই প্রকোষ্ঠের ভেতরে দশটি অ্যালাবাস্টারের ভাস খুঁজে পান তারা।
তার ভেতরে সংরক্ষিত স্ক্রোলগুলো অনুবাদের সময় ড. সিমা আমার সাহায্য কামনা করায় আমি সম্মানিত বোধ করেছি। আগ্রহও কাজ করছিলো খুব। কায়রো জাদুঘর এবং বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক ঈজিপ্টলজিস্টদের সহায়তায় পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিলো মূল স্কোলগুলোর।
বর্তমান সময়ের উপযোগী করে সেই স্ক্রোলগুলোর কাহিনী নতুন করে বলার জন্যে আমাকে অনুরোধ করেছিলেন ড. সিমা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাব্যিক স্বাধীনতা নিয়েছি আমি, উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, দূরত্ব এবং ওজনের হিসেব উল্লেখের সময় বর্তমানে প্রচলিত মাপ ব্যবহার করেছি বিভিন্ন স্থানে। টাইটার ব্যবহার না করা কিছু শব্দও ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন, বর্বর, পতিতা, যৌতুক; তবে আমার ধারণা, টাইটার শব্দভান্ডার বড়ো হলে সে নিজেও এই শব্দগুলো ব্যবহার করতো।
লেখার কাজ শুরু করার পর প্রাচীন এই লিপিকারের কাহিনীতে পুরোপুরি ডুবে গিয়েছিলাম আমি। অনর্থক গর্ব আর অতিশয়োক্তি সত্ত্বেও যুগ যুগ আগে বেঁচে থাকা ক্রীতদাস টাইটা প্রতি গভীর স্নেহ বোধ করেছি।
অবাক লাগে ভাবলে, মানুষের আবেগ এবং অনুপ্রেরণার উৎস এতো হাজার বছরেও একটুও পরিবর্তন হয়নি। হয়তো, আজকের দিন পর্যন্তও আবিসিনিয়ার পর্বতে, নীলনদের উৎসমুখের সন্নিকটে কোনো স্থানে, ফারাও মামোসের অলঙ্খিত সমাধিতে শায়িত আছে ট্যানাসের মমিকৃত দেহ।
-উইলবার স্মিথ।