তোমার নিজের কথা টাটা, আউড়ালো মেমনন। শত্রুরা এগিয়ে আসার আগে সতর্ক প্রতিরক্ষা, এরপর দ্রুত, ভয়ঙ্কর আক্রমণ ।
তোমার জ্ঞানার্জন যথার্থ হয়েছে, মহান ফারাও।
এতে কোনো সন্দেহ নেই, আমরা সংখ্যায় অনেক কম। প্রথমে, আপাচান তার পাঁচ বহর রথ পাঠাবে–আমার ধারণা।
আমি একমত, মেম। কিন্তু আমরা আমাদের কাজ জানি, নয় কি? তার ইশারায় পিছনে, আমাদের রথ বহরের কাছে ফিরে চললাম।
প্রথম রথবহরের নেতৃত্বে আছে রেমরেম, আসূতেস দ্বিতীয়টির, লর্ড আকের তৃতীয় বাহিনীর দায়িত্বে আছে। সদ্য দশ হাজারের সেরা উপাধিপ্রাপ্ত, হুই রয়েছে চতুর্থ বাহিনীর নেতৃত্বে। দুই বাহিনী শিলুক আমাদের মালামাল এবং বাড়তি ঘোড়ার দায়িত্বে আছে।
বেজে উঠলো রণ দামামা।
শুরু হলো, সামনের দিকে হাত তুলে দেখালো মেমনন। ধুলোর ঘূর্ণি তুলে ছুটে আসতে শুরু করেছে হিকসস্ রথবহর। আপাচান তার প্রথম চাল চেলেছে।
আমাদের বাহিনীর দিকে ফিরে তাকালাম। নিজের তলোয়ার উঁচু করে ধরে রেমরেম। প্রথম বাহিনী তৈরি, ম্যাজেস্টি। ব্যগভঙ্গিতে বলে সে। কিন্তু তাকে উপেক্ষা করে লর্ড আকেরের উদ্দেশ্যে ইশারা করলো মেমনন। চার সারিতে বিন্যস্ত হয়ে সামনে এগিয়ে গেলো তৃতীয় রথবহর। ফারাও রইলেন নেতৃত্বে।
ভারী, কারুকার্যখচিত হিকসস্ রথ গড়িয়ে এগিয়ে আসে, ঠিক আমাদের সারির কেন্দ্রে নিশানা করেছে তারা। সামনে, তাদের বাধা দিতে এগিয়ে যায় মেমনন, বিশাল শত্রু সৈন্য এবং আমাদের সংখ্যায় কম বাহিনীর মধ্যখানে। এরপর, তার নির্দেশে, শত্রু বাহিনীর উদ্দেশ্যে সজোরে রথ হাঁকালাম আমরা। অবস্থাদৃষ্টে আত্মহত্যারই নামান্তর মনে হলো এই ধাওয়া।
এগিয়ে যাওয়ার মাঝেই, হিকসস্দের উদ্দেশ্যে তীরের ঝাঁক বর্ষণ শুরু করলো আমাদের তীরন্দাজেরা। তীরের আঘাতে হুড়মুড় করে ঘোড়া উল্টে পড়তে শত্রু বহরের সামনের সারিতে ফাঁকা স্থান তৈরি হতে লাগলো। শেষমুহূর্তে, বাতাসে নাড়া খাওয়া ধোয়ার পর্দার মতো অনায়াসে ঘুরে গেলো আমাদের রথ বহর। অপেক্ষাকৃত দ্রুতগতি এবং ভালো প্রশিক্ষণ পাওয়া আমাদের রথ চালকেরা নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করলো আরো একবার। শত্রু বহরের সামনের সারির ফাঁক গলে ভিতরে ঢুকে পড়তে লাগলো তারা। সব রথ অবশ্য সেই ফাঁক গলে বেরিয়ে যেতে পারলো না, কিছু কিছু ধ্বংসপ্রাপ্ত হলো উল্টে গিয়ে, তবে প্রতি পাঁচটির চারটিকে বাঁচাতে সক্ষম হলো লর্ড আকের।
হিকসস্ বাহিনীর পিছনে চলে এসেছি এখন আমরা। পুরো এক পাক ঘুরে, অপেক্ষাকৃত দ্রুত গতি কাজে লাগিয়ে আবারো পিছন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়লো আমাদের রথ বহর। তীরের বৃষ্টি দিয়ে সহযোগিতা করে চললো তীরন্দাজ বাহিনী।
সামনে থেকে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে হিকসস্ রথে; তাদের তীরন্দাজেরাও পাদানীর সম্মুখ দিকে তীর ছুঁড়তে পারে শুধু। দ্বিধা ছড়িয়ে পড়লো তাদের মাঝে, তাড়া খেয়ে পিছন ফিরে আমাদের সামনা-সামনি মোকাবেলা করতে চাইলো কোনো কোনো চালক; পাশের সহযোগী রথের সাথে সংঘর্ষ ঘটলো তাদের। কাছাকাছি ঘোড়ার পায়ে সেঁধিয়ে যেতে থাকলো ভয়ঙ্কর ঘুরন্ত ফলা–হেরব করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো অসহায় জানোয়ারগুলো ।
মেমননের নির্দেশে হিকসস্দের তাড়া করে শিলুক বাহিনীর সামনে মাটিতে গাঁথা প্রতিবন্ধকের উদ্দেশ্যে নিয়ে চললাম আমরা। ভয়ঙ্কর ধারালো সেই কাটা যুক্ত পিপের সামনে পরে খোঁড়া বা পঙ্গু হলো অর্ধেক হিকসস্ ঘোড়া। যেগুলো বেঁচে গেলো, তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো শিলুকেরা হাতে গুলতি, বর্শা নিয়ে হিংস্র আক্রোশে হুঙ্কার ছেড়ে শত্রুর কচুকাটা শুরু হলো।
এখনো অক্ষত রথবহর এবারে শিলুক বাহিনীর দিকে ধেয়ে যায়। কিন্তু লম্বা, কালো অবয়বের এই জংলীগুলো এক একজন দক্ষ শরীর কসরকারী। চলন্ত রথের পাদানীতে এক লাফে চড়ে বসে তারা, হাতের ছোরা আর বর্শা দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করতে থাকে রথ-চালক আর তীরন্দাজদের। অনায়াস দক্ষতায় প্রথম বহর রথ গিলে নিলো যেনো তারা।
রথ বহরের আক্রমণের সাহায্যে সামনে এগিয়ে এসেছিলো হিকসস্ বর্শধারীরা। এবারে অরক্ষিত হয়ে পড়লো তারা। লাগাম ছেঁড়া ঘোড়া বা পালিয়ে যাওয়া রথ তাদের উপর চড়াও হলো, উপায়ান্তর না দেখে পিছু হটতে শুরু করলো তারা। যুদ্ধের ময়দানের মাঝখানে এলোমেলো ভাবে ছুটলো।
সুযোগটা নিলো মেমনন। লর্ড আকেরের ঘোড়াগুলোকে ফিরে আসার নির্দেশ দিলো সে। ও আর আমি জায়গা বদল করলাম এবারে। দ্রুততার সাথে নতুন ঘোড়া
জুড়ে দেওয়া হলো রথে। বাহিনীর পিছনে ছয়হাজার তাজা ঘোড়া তৈরি আছে আমাদের। হিকসস্দের কয়টি ঘোড়া হলুদ-ফাঁস থেকে বেঁচে ফিরে তৈরি আছে তাই নিয়ে ভাবলাম আমি।
আবার যখন সামনে এগিয়ে গেলো আমাদের রথ, রেমরেম চিৎকার করে আবেদন জানালো, মহান ফারাও! প্রথম বহর! আমার প্রথম বহরকে আক্রমণের অনুমতি দিন!
তাকে উপেক্ষা করে আসতেস-এর উদ্দেশ্যে ইশারা করলেন ফারাও। আমাদের রথের পিছনে এক সারিতে ছুটে এলো দ্বিতীয় রথ বহর।
তখনন, মাঝ ময়দানে জটলা পাকিয়ে আছে বর্বর হিকসস্ বাহিনী। অভিজ্ঞ সমরনায়কের চোখে তাদের বাহিনীর অপেক্ষাকৃত দুর্বল বাম কোণা চিহ্নিত করলো মেমনন।
দ্বিতীয় রথ বহর আক্রমণে এগোও! ছুটে চলো! এগোও?