কী হয়েছে, টাটা?
উত্তর থেকে বার্তা এসেছে। হিকসস্ ক্যাম্প থেকে। তাদের এলাকায় এক অদ্ভুত মহামারী দেখা দিয়েছে। অর্ধেক ঘোড়া ইতিমধ্যেই মারা গেছে, প্রতিদিন আরো হাজারে হাজারে প্রাণী আক্রান্ত হয়ে পড়ছে।
তুমি একজন জাদুকর, টাটা। কেমন করে তোমার ন্যূ-এর পালকে উপহাস করেছিলাম আমরা। আমার কাঁধ আঁকড়ে ধরে, সরাসরি চোখে তাকালো মেমনন। চলো, যাবে আমার সাথে বিজয়ের পথে?
আমি তৈরি, ফারাও।
তবে অজেয় আর শেকলকে রথে জুড়ো। উঁড়িয়ে দাও নীল নিশান। বাড়ি ফিরছি আমরা– থিবেস-এ।
*
কাজেই, একশ দরোজার নগরী থিবেস-এর সামনে চার বাহিনী রথ এবং ত্রিশ হাজার পদাতিক সৈন্য নিয়ে পৌঁছুলাম আমরা। রাজা স্যালিতিস-এর বাহিনী আমাদের সামনে; অসংখ্য শত্রু সৈন্যের পিছনে থেকে হোরাস যেনো হাতছানি দিয়ে ডাকছে আমাদের। প্রথম সূর্যালোকে ঝকমক করছে থিবেস-এর দেয়াল। আমাদের সামনে প্যাঁচ খুলতে থাকা বিশাল অজগরের মতো সারির পর সারি হিকসস্ বহর বিন্যস্ত হচ্ছে। চকমক করছে তাদের বর্শার ডগা, তরুণ সূর্যালোকে জ্বলছে তাদের সোনালি শিরস্ত্রাণ।
আপাচান আর তার রথবহর কোথায়? রাজা জানতে চাইলেন। নদীর ধারেই স্থাপিত হোরাসের আঙুলের দিকে চাইলাম আমি। উঁচু সেই টাওয়ারের মাথায় বিন্দু বিন্দু কাঠামো চোখে পড়ছে।
আপাচানের পাঁচ বহর রথ রয়েছে কেন্দ্রে, আরো ছয় বাহিনী মজুদ রেখেছে সে বিপদের কথা ভেবে। শহরের দেয়ালের ওপারে আছে তারা। লম্বা টাওয়ারের উপরে আমার গুপ্তচরদের উত্তোলন করা পতাকা সংকেতের পাঠোদ্ধার করে বললাম।
এতো কেবল এগারো বাহিনী হলো, টাটা, রাজা উন্মা প্রকাশ করলেন। আমরা জানি, বিশটি বাহিনী আছে তার। বাকিরা কোথায়?
হলুদ-ফাঁসে মরেছে, উত্তরে জানালাম আমি।
হোরাসের কসম! তোমার কথাই যেনো সত্যি হয়। আমরা ধারণা, আপাচান আমাদের জন্যে কোনো একটা বিস্ময় উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। আমার কাঁধ ছুঁলো মেমনন। এখন আর কিছু করার নেই, টাটা। দেবতাদের সাহায্য কামনা করে ঝাঁপিয়ে পড়া ছাড়া গতান্তর নেই এখন।
লাগাম আঁকড়ে ধরে সেনাবাহিনীর সামনে রথ চালিয়ে নিলাম আমি। নিজের বাহিনীর কাছে উপস্থিতি জাহির করছেন রাজা। তার উপস্থিতিতে সাহস বাড়বে তাদের, জান দিয়ে লড়বে তারা। সারি সারি রথ বহরের সামনে দিয়ে রথ ছুটিয়ে নিলাম আমি। অজেয় আর শেকল ঘেমে নেয়ে উঠলো । স্বর্ণের পাতার মতো করে নকশা করা হয়েছে। রাজকীয় রথের।
প্যাপিরাসের পাতার মতো পাতলা করে তৈরি করা হয়েছে স্বর্ণের পাতগুলো। কাজেই মাত্র এগারো ডেবেন স্বর্ণের ওজন হয়েছে রথের, অত্যন্ত দ্রুতগামী। বন্ধুই হোক বা শত্রু দেখামাত্রই যে কেউ বুঝে নেবে এটা ফারাও-এর রথ। আমাদের মাথার উপরে বাতাসে পতপত করে উড়ছে নীল পতাকা। হর্ষধ্বনিতে মুখর হয়ে হুঙ্কার দেয় সৈনিকেরা।
প্রত্যাবর্তন অভিযান যেদিন শুরু হয়েছিলো সেই কেবুই-এ, সেদিনই থিবেস-এ হোরাসের মন্দিরে পূজো না দেওয়া পর্যন্ত চুল না কাটার পণ করেছি আমি। এখন কোমড় পর্যন্ত লম্বা হয়েছে ওগুলো। ইন্দুস নদীর ওপার থেকে আমদানি করা হেনায় ওগুলোকে রাঙিয়েছি আমি। শ্বেত-শুভ্র লিনেনের আঁটো জামা কোমড়ে, নগ্ন বুকে ঝুলছে প্রশংসার স্বর্ণ শেকল। কোনো প্রসাধনি বা গহনা পরি নি গায়ে ।
বাহিনীর কেন্দ্রে থাকা শিলুক বর্শাধারীদের সামনে চলে এলাম আমরা। রক্তপিপাসু এই বর্বরেরা আমাদের বাহিনীর বড়ো সম্পদ। ফারাও-এর রথ এগিয়ে যেতে হুঙ্কার দিয়ে উঠলো তারা, কাজান! ট্যানাস! কাজান! টামোস! জলপ্রপাতের ফেনার মতোই সাদা তাদের মাথার অসট্রিচের পালক। বর্শা উঁচিয়ে রাজাকে সালাম জানালো তারা। সবার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আমার উদ্দেশ্যে চেঁচালো ক্ৰাতাস। হাজার কণ্ঠের শোরগোলো হারিয়ে গেলো তার কথা, কিন্তু ঠোঁটের নড়াচড়া থেকে বুঝলাম, ও বলছে, আজ রাতে, থিবেস-এ মদ পান করে মাতাল হবো আমরা দুজন। বুড়ো জোচ্চর কোথাকার!
সারি সারি শিলুক বাহিনী সুশৃঙ্খলভাবে বিন্যস্ত হয়ে দাঁড়িয়ে। চমৎকার প্রশিক্ষণ দিয়েছে কাতাস ওদের। লম্বা বর্শা ছাড়াও ভারী গোলক বহন করছে তারা, চামড়ার ফিতে আর কাঠের তৈরি গুলতি রয়েছে সেগুলোকে ছুঁড়ে দেওয়ার জন্যে। বাহিনীর সামনে মাটিতে কাঠের প্রতিবন্ধক পুঁতে রেখেছে শিলুকেরা। ওই বাধা পেরিয়ে আসতে হবে শক্র রথ বহরকে।
তাদের পিছনেই রয়েছে মিশরীয় তীরন্দাজেরা। সুযোগ পেলেই সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে আক্রমণে যাবে, নয়তো পিছিয়ে আসা বাহিনীকে তীরের বৃষ্টি দিয়ে প্রতিরক্ষা প্রদান করবে তারা যখন যেটার প্রয়োজন। প্রান্ত-বাঁকানো ধনুক মাথার উপর তুলে ধরে ফারাও-এর উদ্দেশ্যে সম্মান জানায় তারা। টামোস! মিশর এবং টামোস!
নীল যুদ্ধ-মুকুট পরেছেন ফারাও, স্বর্ণের বৃত্তাকার ইউরিয়াস ভ্র-এর চারপাশে। দুই রাজ্যের প্রতীক, শকুন এবং কোব্রার জড়াজড়ি করে থাকা অবয়ব জ্বলছে সেখানে। নীল তলোয়ারের মুক্ত ফলা খাড়া রেখে সৈন্যদের অভিভাদনের প্রত্যুত্তর করলেন তিনি।
বাম ধারের দিকে রথ ঘুরিয়ে নিলাম এবারে আমরা। ফিরে যাওয়ার আগে আমার কাঁধে হাত রেখে রথ থামলো মেমনন। এক মুহূর্তের জন্যে পিছনের মাঠের দিকে তাকালাম দু জন। ইতিমধ্যেই সামনে এগুতে শুরু করেছে হিকসস্ বাহিনী। আমাদের দ্বিগুন আকৃতির তাদের সম্মুখসারি ।