হোরাসের কসম! ওটা রেমরেম! আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম আমি। বুড়ো যোদ্ধা ঠিকই উঁচু-নিচু পথের উপর দিয়ে নিয়ে এসেছে প্রথম রথ বহর। মাত্র দুই দিনের মধ্যে কেমন করে এটা পারলো সেভেবে কোনো কূলকিনারা পেলাম না। আমার ধারণা ছিলো, ওই পথে রথ চলাচল সম্ভব নয়।
চার সারিতে বিন্যস্ত হলো মিশরীয় রথ বহর। হুই আর আমি যথার্থ প্রশিক্ষণ দিয়েছি ওদের। চমৎকার ভাবে আক্রমণ শানালো রেমরেম। তখনো অর্ধেক পথ পেরোও নি হিকসস্ রথ। শত্রু চালকেরা তখনো টের পায় নি, তাদের ভোলা পাশ থেকে ধেয়ে আসছে মিশরীয় রথবহর। একেবারে শেষ মুহূর্তে রেমরেম-এর আক্রমণের প্রতুত্তর করতে চাইলো সে। কিন্তু দেরি হয়ে গেছে ততক্ষণে। বরঞ্চ পালিয়ে গেলো ভালো করতো শক্ত রথবহর নেতা।
একটা ঢেউয়ের মতো তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো রেমরেম-এর দুরন্ত যোদ্ধারা। নীলের স্রোতধারায় খড়-কুটোর মতো উড়ে গেলো দখলদার বর্বরেরা। হিকসস্ ঘোড়গুলোকে অবশ্য ধরতে সক্ষম হলো রেমরেম। ওটা নিশ্চিত করে, নিচে শহরের দিকে তাকালাম আমি।
মুক্তির আনন্দে যেনো পাগল হয়ে গেছে জনতা। রাস্তায় নেচে নেচে হাতের কাছে পাওয়া সমস্ত নীল কাপড় উড়াতে লাগলো তারা নীল হলো ফারাও টামোসের রঙ। মেয়েরা নীল রঙের ফিতা দিয়ে সাজিয়েছে চুল, ছেলেরা কোমরে ঝুলিয়েছে নীল কোমড়বন্ধনী।
এখনো বিচ্ছিন্ন কিছু লড়াই চলছে এখানে সেখানে। শীঘ্রই অবশ্য স্মিমিত হয়ে গেলো তা–কল্লা হারালো হিকসস্ যোদ্ধারা। বেশ কিছু যোদ্ধা সমেত আগুন ধরিয়ে দেওয়া হলো একটি হিকসস্ সেনা ক্যাম্পে। মাংস পোড়ার গন্ধে ভারী হয়ে গেলো বাতাস।
লুটপাটও চলছিলো সমানে। রাস্তার ধারে মদের দোকান থেকে একের পর এক পাত্র চুরি করে নিয়ে গেলো ভবঘুরের দল।
আমার অবস্থান থেকে দেখতে পেলাম, তিনজন ছেলে মিলে একটা মেয়েকে টেনে নিয়ে চলেছে গলির ভিতরে । মেয়েটাকে শুইয়ে দিয়ে কোমড়ের স্কার্ট খুলে ফেললো তারা; দুই জনে মিলে ধরে রাখলো হাত-পা, তৃতীয়জন চড়ে বসলো মেয়েটার উপর। বাকি অংশ আর দেখতে পারি নি আমি।
হিকসস্দের শেষ প্রতিরোধ যতক্ষণে চুরমার করে দিয়েছে কাতাস এবং মেমনন, শহরের ভিতরের শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালালো ওরা। অস্ত্র হাতে রাস্তায় নেমে এলো মিশরীয় বাহিনী, লাঠির গুতোয় পরিস্থিতি শান্ত করার অভিপ্রায় পেলো।
ধর্ষণ এবং লুটপাটের সময় হাতে-নাতে ধরা পড়াদের জায়গার ফাঁসির আদেশ এবং শাস্তি পালিত হলো। তাদের শবদেহ গোড়ালিতে বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হলো শহরের প্রধান ফটকে। রাত নামার আগেই স্বাভাবিক হয়ে আসলো পরিস্থিতি, নিঃস্ত ব্ধতা জেঁকে বসলো গজ-দ্বীপে।
ফারাও মামোসের প্রাসাদে নিজের আস্তানা গাড়লো মেমনন। একদা এটাই ছিলো আমাদের আবাসস্থল। প্রাসাদে প্রবেশ করেই সোজা হারেমের উদ্দেশ্যে চললাম আমি।
লুটপাটকারীরা এখানে প্রবেশ করতে পারে নি। যে বা যারাই ছিলো এখানে, আমার আঁকা দেয়ালচিত্রের পরিপূর্ণ মর্যাদা দিয়েছে সে বা তারা। জলবাগানে ফুটে আছে নানান রঙের চমৎকার ফুল, পুকুরে মাছের ঝাঁক।
মিশরীয় বুড়ো মালি আমাকে জানালো, যে হিকসস্ সেনাপতি ছিলো এখানে, মিশরীয় জীবনধারা পছন্দ করে ফেলেছিলো সে। নিজেও চেষ্টা করেছে সেই মান বজায় রাখার। তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
কয়েকদিনের মধ্যেই আমার কর্ত্রীর পছন্দমতো কক্ষগুলো গোছগাছ করে ফেললাম। এরপর, মেমননের কাছে গিয়ে রানিকে নিয়ে আসার অনুমতি চাইলাম আমি।
রাজ্যের শাসভার হাতে নেওয়ার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ইতিমধ্যেই চিন্তান্বিত হয়ে পড়েছে রাজা। এক বিষয়ে ভাবনা শেষ না হতে অন্য একটা জরুরি বিষয় এসে পড়ে। অবশ্য, আমাকে দেখে আলিঙ্গন করলো মেম।
সবকিছু ভালোয় ভালোয় হয়েছে, টাটা।
শুভ প্রত্যাবর্তন, ম্যাজেস্টি, আমি বললাম উত্তরে। কিন্তু অনেক কাজ বাকি পড়ে আছে এখনো।
এ হলো আমার নির্দেশ–যখন এ রকম একা থাকবো আমরা দু জন, আমাকে মেম বলে ডাকবে তুমি। হাসলো ফারাও। ঠিকই বলেছো, এখনো অনেক কাজ বাকি। স্যালিতিস তার বাহিনীর নিয়ে অগ্রসর হওয়ার আগে খুব অল্প সময় আছে আমাদের হাতে। একটা খণ্ডযুদ্ধ জিতেছি আমরা। মূল লড়াই এখনো শুরুই হয় নি।
আর একটি দায়িত্ব পালন করতে পারলে দারুন আনন্দিত হবো, মেম। রানি মাতার জন্যে তার প্রকোষ্ঠ প্রস্তুত করেছি আমি নিজে। নদীর উজানে গিয়ে, তাকে কী গজ-দ্বীপে নিয়ে আসতে পারি আমি? মিশরের মাটিতে পা রাখার জন্যে ব্যাকুল হয়ে আছে সে।
এই মুহূর্তে রওনা দাও, টাটা, নির্দেশ দিলো রাজা। রানি মাসারা কেও সাথে নিয়ে এসো।
নদীর পানি অনেক বেড়েছে। মরুর রাস্তাও বেশ কর্কশ। নীল নদের তীর ধরে দুই রানিকে বহনকারী পালকি কাঁধে করে বয়ে নিয়ে এলো একশ দাস। অবশেষে, জলপ্রপাতের এধারে, মিশরের সবুজ উপত্যকায় পা রাখলো তারা।
এ কোনো দৈবাৎ ঘটনা নয়, প্রথম যে স্থাপনা আমাদের সামনে পড়লো, তা ছিলো একটি মন্দির। আমি নিজেই এই পথে আসার পরিকল্পনা করেছিলাম।
কিসের শ্রাইন ওটা, টাইটা? পালকির পর্দা সরিয়ে বললো আমার কর্ত্রী।
এটা আকহ্-হোরাসের মন্দির, মিসট্রেস। প্রার্থনা করতে চাও তুমি?
ধন্যবাদ, ফিসফিস করে বললো ও। জানতো, আমিই নিয়ে এসেছি এই পথে।