সত্যিই, একটা ব্যাপার আমার মালিকের গোচরে আনতে চাই, বললাম আমি। আর ব্যাপারটা অবশ্যই লসট্রিসকে নিয়ে। আগেই জানিয়েছি, আপনার কন্যা প্রথমবারের মতো ঋতুমতী হয়েছে এ বছরের বন্যার সময়ে। এরপর থেকে প্রতিমাসেই। জোরালোভাবে হচ্ছে সেটা।
বিতৃষ্ণায় ঠোঁক বাঁকালেন ইনটেফ, নারী শরীরের জৈবিক কার্যাবলি ঘৃণা করেন তিনি। ব্যাপারটা আজব লাগে আমার কাছে, শারীরিক সুখে যিনি মত্ত থাকেন পুরুষ দেহ নিয়ে তার আবার কিসের ঘৃণা।
আমি বলে চলি, লসট্রিস এখন বিবাহযোগ্যা । আবেগী এবং কোমল মন ওর । আমার ধারণা, যত দ্রুত সম্ভব তার জন্যে-একজন পুরুষ খুঁজে বের করা জরুরি।
নির্ঘাত কোনো পরামর্শ আছে তোমার কাছে? শুষ্ক কণ্ঠে জানতে চাইলেন ইনটেফ, সায় দিয়ে আমি বললাম, সত্যিই একজন পাণিপ্রার্থী আছেন, মালিক।
একজন নয়, আমার ধারণা আরও একজনের কথা বলছ তুমি, টাইটা। ছয় জনের কথা ইতিমধ্যেই জানি আমি, আয়ূনের সম্রাট এবং স্বটের প্রশাসক রয়েছেন তাদের মধ্যে। প্রস্তাব দিয়েছেন তারা সবাই।
আর একজনের কথা বলেছি আমি, মালিক; এমন একজন লসট্রিস যাকে মনোনীত করেছে। আপনার হয়তো মনে পড়বে, সম্রাটকে মোটা ব্যাঙ আর প্রশাসককে বুড়ো ছাগল বলে সম্বোধন করেছিল সে।
মেয়ের আপত্তি বা অনুমতির আমার কাছে কোনো অর্থ নেই। মাথা নেড়ে হেসে আমার গাল টিপে দিলেন ইনটে। কিন্তু বলে যাও, টাইটা। এই প্রেম-পাগল পাণিপ্রার্থীর নাম শোনাও আমাকে, মিশরের সর্বোচ্চ পণের বিনিময়ে যে আমার আত্মীয়তা পেতে চায়। দম নিয়ে বলতে যাচ্ছিলাম আমি, কিন্তু আমাকে থামিয়ে দিলেন ইনটেফ। না, থাম! আমাকেই অনুমান করতে দাও
ধূর্ত আর কুটিল হাসিতে পাল্টে যায় তার মুখাবয়ব, বুঝতে পারলাম পুরোটা সময় আমাকে নিয়ে খেলছিলেন তিনি।
লসট্রিসের পছন্দ হলে তাকে হতে হবে তরুণ, সুদর্শন, অভিনয় করছেন ইনটেফ, আর তুমি তার পক্ষ হয়ে বলছ যেহেতু, সে নিশ্চই তোমার বন্ধু এবং সুহৃদ। নিঃসন্দেহে তার দাবি আমার কাছে পৌঁছানোর জন্যে তোমার সাহায্য কামনা করার সুযোগ পেয়েছে সে। কোথায় এবং কখন এমনটি করতে পারে সে? ভাবছি। হয়তো, মাঝরাত্তিরে হাপির মন্দিরে, হতে পারে না? আমি ঠিক বলছি তো, টাইটা?
বিবর্ণ হয়ে গেছি আমি । কেমন করে এতো কিছু জানেন ইনটেফ? আমার ঘাড়ের পেছনে হাত নিয়ে জড়িয়ে ধরলেন তিনি, হালকা করে চাপড় দিচ্ছেন। বেশিরভাগ সময়েই দেহজ সুখে মত্ত হওয়ার আগে এমনটা করেন ইনটেফ। হালকা করে চুমো খেলেন আমার ঠোঁটে ।
তোমার মুখ দেখে বুঝতে পারছি, সত্যির খুব কাছাকছি বলেছি। একগাছি সুন্দর চুল আঙুলে জড়াতে লাগলেন। এখন কেবল নাম বলাটা বাকি আছে এই মহান প্রেমিকের। সেকি ডাক্কা নাকি? না, না, ডাক্কা এতো গর্দভ নয় যে আমার আক্রোশে পড়বে। ধীরে জোর বাড়াচ্ছেন ইনটেফ আমার চুলের গাছিতে, ব্যথায় চোখে পানি চলে এলো। তাহলে কি ক্ৰাতাস? সুদর্শন আর বোকা সেও। চুলের মুঠিতে জোর বাড়াতে শব্দ করে ছিঁড়ে গেলো ক গাছি, গলা দিয়ে উঠে আসা আর্তনাদ গিলে ফেললাম আমি।
উত্তর দাও, প্রিয় টাইটা, ওটা কি ক্ৰাতাস? নিজের কোলে আমার মুখ চেপে ধরলেন ইনটেফ।
না, মালিক, ব্যথায় ফিসফিস করে বললাম। তাকে সম্পূর্ণ উত্তেজিত দেখে এতটুকু অবাক হলাম না। তাকে মুখের ভেতরে নিতে বাধ্য করলেন ইনটেফ, ওভাবেই ধরে রাখলেন আমাকে।
ক্রাতাস নয়? তুমি নিশ্চিত? হতবুদ্ধ হওয়ার ভান করছেন ইনটেফ। যদি ক্ৰাতাস হয়, তবে এই বেকুব, প্রাণের মায়াহীন, হতভাগা কে হতে পারে আমি বুঝতে পারছি না; উচ্চ মিশরের রাজ উজিরের কুমারী কন্যার দাবি করতে পারে, এতো ধৃষ্টতা!
আচমকাই, স্বর উঁচালেন ইনটেফ। র্যাসফার! চেঁচিয়ে ডাকছেন। আমার মুখ বাঁকা হয়ে ছিলো তার কোলে, তাই রাসফারকে আসতে দেখছিলাম।
আসূনের গজ-দ্বীপে, ফারাওয়ের চিড়িয়াখানায় বিশাল এক কালো ভালুক ছিলো একসময়; পুবের ব্যবসায়ী ক্যারাভান থেকে কেনা হয়েছিলো। সেই বিভৎস, দাগপড়া বর্বরটাকে মনে করিয়ে দেয় আমার মনিবের প্রধান রক্ষী র্যাসফার। ওদের দুটিরই বিশাল, বিকৃত দেহ আর বুনো শক্তি রয়েছে যা দিয়ে খালি হাতে কাউকে মেরে ফেলতে পারে। তবে, চেহারা সৌন্দৰ্য্য আর আচরণে সেই ভালুক র্যাসফারের চাইতে অনেক বেশি কাম্য।
ভীষণ, গাছের গুঁড়ির মতো পায়ে প্রায় ছুটে এগুল সে, তাকে দেখে সেদিনের কথা মনে পড়ে গেলো যেদিন পুরুষত্বের নিদর্শন কেড়ে নেওয়া হয়েছিলো আমার শরীর থেকে।
এত মিল সেদিনের সাথে আজকের, যেনো জোর করে আবারো সেই ভয়ঙ্কর দিনে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আমাকে। প্রতিটি খুঁটিনাটি এতো পরিষ্কার মানসপটে, আশঙ্কায় সিঁটিয়ে গেলাম। বহুকাল আগের সেই ট্রাজেডির কুশীলব একই আছে। দানব র্যাসফার, আমার মনিব আর আমি। কেবল সেই মেয়েটা নেই।
ওর নাম ছিলো এলাইদা । আমার মতোই বয়সী, ষোড়ষি এক মিষ্টি মেয়ে। দাসী হিসেবে প্রাসাদে থাকতো। আমার মনে হয়, অত্যন্ত সুন্দরী ছিলো এলাইদা, কিন্তু এমনও হতে পারে, স্মৃতি হয়তো প্রতারণা করছে আমার সাথে; কেননা, অত রূপ থাকলে মহান বাড়ির হারেমে ওর স্থান হোত, রান্নাঘরে নয়। একটা ব্যাপার জানি, ওর ত্বকের বর্ণ আর অনুভব ছিলো পালিশ করা তৈলস্ফটিকের মতো হলদেটে; উষ্ণ আর নরম। এলাইদার শরীরের ছোঁয়া আমি কোনোদিনও ভুলে যেতে পারব না, কারণ সে রকম আর কিছু কোনোদিন উপভোগ করার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে আমার কাছ থেকে। দুঃখের দিনগুলোতে আমরা পরস্পরের কাছে খুঁজে পেয়েছিলাম স্বাচ্ছন্দ্য আর সুখ। কখনও বুঝতে পারি নি, কে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল সেদিন। আমি প্রতিশোধপরায়ণ নই, কিন্তু মাঝেমাঝে মনে হয় যদি একবার সেই ব্যক্তির দেখা পেতাম!