- বইয়ের নামঃ রিভার গড
- লেখকের নামঃ উইলবার স্মিথ
- প্রকাশনাঃ রোদেলা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, উপন্যাস, রহস্য, রোমাঞ্চকর, ভূতের গল্প
রিভার গড
১. তরল রুপোর উজ্জ্বলতা
রিভার গড – উইলবার স্মিথ
অনুবাদ : মখদুম আহমেদ
উৎসর্গ
হুমায়ুন আজাদ—
জানি না, এই অনুবাদটি হাতে পেলে তিনি পড়তেন কিনা;
পড়লে হয়তো তীব্র-তীক্ষ অসাধারণ সমালোচনায় বিদ্ধ করতেন,
অথবা, হয়তো দুএক ছত্র প্রশংসাও মিলতো।
দুটোই আমার জন্যে হতো সমান আনন্দের।
.
রিভার গডের জন্যে প্রশংসা
খুব কম ঔপন্যাসিক আছেন যাদের বর্ণনাশৈলী এততটা নিখুঁত- যেনো চোখের সামনে ঘটে চলেছে ব্যাপারগুলো…স্মিথ নিঃসন্দেহে তাদের একজন। তার প্রাচীন মিশরের উপাখ্যান অত্যন্ত চমকপ্রদ।
-অ্যানিস্টন স্টার।
প্রাচীন মিশরের উঁচু মানসম্পন্ন সাহিত্যের সঙ্গে টক্কর লাগিয়েছেন স্মিথ, জন্ম নিয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ এপিক।
-দ্য লন্ডন টাইমস্ ।
চমৎকার ঐতিহাসিক চলচ্চিত্রের মতো ভালো এবং মন্দের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটেছে বইটির…. সুলিখিত, চমকপ্রদ।
-লেক্সিটন হেরাল্ড-লিডার।
প্রচন্ড শক্তিমাণ লেখক তার সমস্ত ক্ষমতা দিয়ে রচনা করেছেন উপভোগ্য অ্যাডভেঞ্চার… রিভার গড়, একটি সুলিখিত সম্পূর্ণ উপন্যাস… এমন একটি সময়ের গল্প, যখন ইতিহাস এবং কিংবদন্তি মিলেমিশে একাকার।
-স্যান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকল।
রুদ্ধশ্বাসে পড়ার মতো।
-ডালাস মর্নিং নিউজ।
একবার শুরু করলে ছাড়তে মন চাইবে না… ষড়যন্ত্র, রোমান্স, লোভ, নিষ্ঠুরতা এবং অসাধারণ ঘটনাবলীর মিশেল… দারুণ উপভোগ্য।
-এল পাসো হেরাল্ড-পোস্ট।
.
ভূমিকা
উইলবার স্মিথের অত্যাধিক আলোচিত উপন্যাস, রিভার গড বা নদী-ঈশ্বর-এর কাহিনীর সত্যতা নিয়ে বিতর্ক আছে, আছে তুমুল জল্পনা-কল্পনা। বইয়ের সমাপ্তিতে লেখকের বক্তব্য এই বিতর্কের মূল কারণ, বইটির অসাধারণ জনপ্রিয়তার পর তিনি লিখেছেন এর সিকুয়েল। চার হাজার বছর আগের মিশরীয় ক্রীতদাসের মূল কাহিনী থেকে লেখক কতটুকু কাব্যিক স্বাধীনতা নিয়েছেন, সে বিতর্কে আমরা যাবো না। অনুবাদ প্রসঙ্গে বলতে পারি, প্রাচীন পটভূমির ভাব-গাম্ভির্য্য এবং সম্রাট-সম্রাজ্যের বর্ণনা ফুটিয়ে তোলার জন্যে আলঙ্কারিক ভাবটুকু আনা হয়েছে অনুবাদে। বহুদিন ধরেই উইলবার স্মিথের এই উপন্যাসটি অনুবাদের ইচ্ছে ছিলো, অবশেষে প্রকাশক রিয়াজ খানের নিরবচ্ছিন্ন উৎসাহ এবং সমর্থনে শেষ হলো পরিশ্রম-সাধ্য এই কাজ। আমার জানা মতে, বাঙলা ভাষায় এটিই উইলবার স্মিথের প্রথম পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ। চারহাজার বছর আগের পটভূমিতে রচিত হওয়ায় ভাষার আভিজাত্য উপন্যাসটির একটি বড়ো দিক। প্রচন্ড ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে অনুবাদ-কর্ম চালাতে হয়েছে; কিন্তু যে কোনো ভুল-ভ্রান্তির সবটুকু দায় আমারই। ইংরেজী শব্দ যথাসম্ভব পরিহার করে চেষ্টা করেছি বাংলা শব্দ ব্যবহারের । ভিন্ন কোনো অনুবাদ-উপন্যাসে হয়তো এর তেমন প্রয়োজন নেই- মূল ইংরেজী শব্দ বরঞ্চ অনেকক্ষেত্রে মানানসই হয় সেখানে। কিন্তু রিভার গডের বাঙলা রুপান্তরে প্রাচীন ভাব ফুটিয়ে তোলা নিতান্তই প্রয়োজনীয় ছিলো। বানানরীতি এবং বিশেষ কিছু আধুনিক শব্দ ও পংক্তির জন্যে ঋণী হয়ে রইলাম বাঙলাদেশের প্রধান প্রথাবিরোধী কবি, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, ভাষাবিজ্ঞানী এবং গবেষক প্রয়াত হুমায়ুন আজাদের নিকট ।
সবশেষে, উপন্যাসের শেষে লেখকের বক্তব্যে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই ভূমিকার সমাপ্তি টানছি।
মখদুম আহমেদ
ধানমন্ডি, ঢাকা।
১/০৫/০৭
.
তরল রুপোর উজ্জ্বলতা নিয়ে মরুর বুক চিরে বয়ে চলেছে নীল নদ। তাপ-তরঙ্গে ঝাপসা দেখায় আকাশ নির্দয় সূর্য আগুন ঢালছে অবিরত। দাবদাহের প্রচণ্ডতায় নৃত্যরত নদীর বাঁকের রুগ্ন পাহাড়শ্রেনী, তাপ-মরীচিৎকার ভেতর কেঁপে কেঁপে উঠছে।
প্যাপিরাসের ঝোঁপ ঘেঁষে চলছিলো আমাদের নৌকো। ছোটো ছোটো ঢেউগুলো ছলকে আঘাত হানছিলো জলাভূমির পাড়ে, গলুইয়ে বসে থাকা মেয়েদের সুললিত কণ্ঠের গানের সাথে কেমন অদ্ভুত ছন্দে বেজে চলছিলো সেই শব্দ।
লসট্রিসের বয়স তখন সবে চৌদ্দ। প্রথমবারের মতো এদিন ওর শরীরে নারীত্বের ফুল ফুটেছে, একই দিনে বছরের মতো বান ডেকেছিল নীলের বুকে বিষয়টাকে দেবতাদের আশীর্বাদপুষ্ট বলে মনে করেছেন হাপির মন্দিরের পুরোহিতেরা। তারাই ওর নাম রেখেছেন লসট্রিস; অর্থাৎ জলের মেয়ে।
সেদিনের ওর কথা আমার পরিষ্কার মনে পড়ে। সামনের বছরগুলোয় আরো কমনীয়, আরো রাজকীয় আর খোলতাই হয়েছিলো তার সৌন্দর্য; কিন্তু সেদিনের সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত কুমারী শরীরের যে আভা ফুটে উঠেছিলো ওর অবয়বে, তা বোধকরি আর কখনও ঘটেনি। নৌকার প্রতিটি মানুষ, এমনকি দাঁড়-টানা যোদ্ধারা পর্যন্ত অনুভব করেছিলো সেটা। আমি তো বটেই, কেউই চোখ সরাতে পারেনি ওর উপর থেকে। এই অনিন্দ-সৌন্দর্য আমাকে নিজের অপ্রাপ্তির কথা মনে করিয়ে দেয়। গভীর হাহাকার উঠে বুক জুরে। যদিও আমি একজন অপুরুষ, তথাপি নারী দেহ আস্বাদনের পরেই খোঁজা করা ছুরি চালানো হয়েছিলো আমার উপর।
টাইটা, ডাকলো সে আমাকে। আমার সঙ্গে গাও!
আমি গাইতে শুরু করতেই আনন্দে মুখ ঝলমল করে উঠলো লসট্রিসের। অন্যান্য বহু কিছুর মতো আমার কণ্ঠস্বর তার খুব প্রিয়; ওর মিষ্টি গলার সাথে বেশ মিলে যায় আমার উঁচু তানের স্বর। আমার শেখানো কৃষকের পুরোনো একটা প্রেমের গান গাইছিলাম আমরা, লসট্রিসের দারুন প্রিয়: