কফিনে পেরেক ঠোকার শব্দ শোনা গেল। থিবল্ট টের পেল, কবরে মাটি আর পাথর ফেলা হচ্ছে। ওর একমাত্র ভালবাসার মানুষের ওপর চাপা পড়ছে মাটি আর পাথর! তার নরম শরীরে আঘাত লাগছে! কদিন আগেও কতই না সজীব আর প্রাণবন্ত ছিল মেয়েটা। গতরাতেও প্রাণ ছিল ওর শরীরে। থিবল্ট ছুটে যেতে চাইল আনলেটকে আনতে। জীবিত অ্যানলেট হয়তো ওর ছিল না। কিন্তু মৃত্যুর পর সে অন্য কারও হতে পারবে না।
মানুষের শোক ওর পশুর অনুভূতিকে ঠেলে উপরে উঠে এল। কালো চামড়ার নিচে শরীরটা কেঁপে উঠল থিবল্টের। হিংস্র লাল চোখ দিয়ে গড়াতে লাগল অশ্রু। অসুখী একটা মানুষ কেঁদে উঠল, ঈশ্বর! আমাকে নাও। যাকে আমি খুন করেছি, তার জীবন ফিরে পাওয়ার জন্য আমি খুশি মনে আমার নিজের জীবন দিয়ে দেব!
তারপরই গলা ছেড়ে ডেকে উঠল থিবল্ট। আর সেই অমানুষিক ডাক কানে যেতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ল উপস্থিত লোকজন। দ্রুত ফাঁকা হয়ে গেল কবরস্থান। আর ঠিক সেই মুহূর্তে অন্য দলের হাউন্ডগুলোও, যেগুলো নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সলীল সমাধির শিকার হয়নি, কবরের দেয়াল টপকে এসে হাজির হলো। আর ওগুলোর পেছনে ঘর্মাক্ত ব্যারনও স্পরের ঘায়ে রক্তাক্ত ঘোড়ায় চড়ে হাজিরএগিয়ে এসে ঝোঁপটা ঘিরে দাঁড়াল কুকুরের পাল। ঘোড়া থেকে নেমে শিকারি ছুরি হাতে নিয়ে দৌড়ে এল ব্যারন। দেখল, কুকুরগুলো একটা নেকড়ের চামড়া নিয়ে কামড়া-কামড়ি করছে, কিন্তু সেই খোলসের ভেতরে শরীরটার কোন অস্তিত্ব নেই!
কোন সন্দেহ নেই, এটাই সেই নেকড়ে-মানব, যেটাকে ওরা সারাদিন তাড়া করেছে। চামড়াটায় একটাই সাদা চুল, বাকি সব কুচকুচে কালো।
কিন্তু নেকড়ে-মানবের শরীরটা তাহলে কোথায় গেল? সেই উত্তর কেউ জানে না। এরপর বিবল্টকে আর কখনও দেখা যায়নি। তবে লোকের বিশ্বাস, প্রাক্তন স্যাবট-কারিগর আর নেকড়ে-মানব একই ব্যক্তি।
কবরস্থানে উপস্থিত একজন জানাল সে শুনেছে কেউ একজন বলছে, ঈশ্বর! আমাকে নাও! যাকে আমি খুন করেছি, তার জীবন ফিরে পাওয়ার জন্য আমি খুশি মনে আমার নিজের জীবন দিয়ে দেব। যেহেতু নেকড়ে-মানবের শরীরটাও পাওয়া যায়নি, তাই পাদ্রী ঘোষণা করল, এই নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের কারণে থিবল্ট মুক্তি পেয়েছে।
এরপর থেকে ফরাসী বিপ্লবের আগ পর্যন্ত একটা রীতি চালু ছিল। পোসিয়ামন থেকে মাইল দেড়েক দূরে একটা মঠ আছে। প্রতিবছর অ্যানলেটের মৃত্যু-দিবসে সেখান থেকে একজন ধর্মযাজক আসত। মেয়েটার কবরের পাশে বসে প্রার্থনা করত সে।
এই হচ্ছে কালো নেকড়ের ইতিহাস। যেটা আমাকে বলেছে আমার বাবার সহকারী মোকেট।
-সমাপ্ত-
নির্ঘণ্ট
১। ভ্যালেঃ পোশাক-আশাকের দায়িত্বে থাকা পুরুষ ভৃত্য।
২। স্যাবটঃ কাঠের জুতো।
৩। পোর্টকুলিসঃ দুর্গের প্রবেশদ্বারে ও অধঃকরণের উপযোগী লোহার গরাদ বিশেষ।
৪। নমরুদঃ নমরুদ শব্দের অর্থ খোদদ্রোহী। বাইবেল অনুযায়ী সে ছিল সিনারের রাজা যে কিনা ঈশ্বরকে শিকার করতে চেয়েছিল।
৫। এক বিশেষ ইহুদীঃ উইলিয়াম শেকস্পিয়ারের দ্য মার্চেন্ট অফ ভেনিস নাটকের শাইলক চরিত্রটি দ্রষ্টব্য।
৬। কেইনঃ বাইবেল মতে অ্যাডামের প্রথম যমজ সন্তানদের একজন, যে তার যমজ ভাই অ্যাবলকে হত্যা করে মানব-জাতির প্রথম খুনিতে পরিণত হয়।
৭। বেইলিফঃ আইন সংরক্ষণ বিষয়ক সরকারি কর্মকর্তা।
৮। বালশাজার-এর ভোজঃ বাইবেলে বর্ণিত রাজা বালশাজার। এক বিশাল ভোজ।
৯। বিলজেবাবঃ নরকের ভয়ঙ্কর শক্তিশালী এক দানব। অথবা মতান্তরে শয়তানের অন্যতম একটি নাম।
১০। মেনেলাউসঃ হোমার-এর মহাকাব্য ইলিয়াড দ্রষ্টব্য। মেনেলাউস ছিলেন হেলেনের স্বামী, যার কাছ থেকে প্যারিস হেলেনকে চুরি করেন। এর ফলশ্রুতিতেই গ্রীক ও ট্রয়ের মাঝে যুদ্ধ শুরু হয়।
১১। ডক্টর ফাউস্টঃ ইয়োহান গিয়র্গ ফাউস্ট নামক পনেরো শতকের একজন আলকেমিস্ট, জ্যোতিষী, রেনেসাঁ যুগীও মঞ্চ-জাদুকর। পরে তিনি লোককথার কিংবদন্তিতে পরিণত হন। ডক্টর ফাউস্টের কাহিনী দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে একাধিক নাটক লেখা হয়েছে, যার মাঝে ইংরেজ ক্রিস্টোফার মারলো এবং জার্মান ইয়োহান উলফগ্যাঙ ফন গোয়েথে-এর কাজগুলো সর্বাধিক স্বীকৃত। গল্প অনুযায়ী ফাউস্ট শয়তানের কাছে নিজের আত্মা বিক্রি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে আর ক্ষতি ছাড়া ভাল হয়নি।
১২। মেফিস্টোফিলিসঃ জার্মান লোককথার দানব বিশেষ। প্রথমে ফাউস্টের কাহিনীতে বর্ণিত এবং পরে অন্যান্য অনেক সাহিত্য-কর্মেই এর দেখা পাওয়া যায়।
১৩। ভ্যালেন্টিনঃ ডক্টর ফাউস্টকে নিয়ে লেখা নাটকের অন্যতম চরিত্র।
১৪। মার্গারেটঃ ডক্টর ফাউস্টকে নিয়ে লেখা নাটকের অন্যতম চরিত্র।
১৫। ট্রয়ের হেলেনঃ হোমারের মহাকাব্য ইলিয়াডের বর্ণনা মতে হেলেন অফ ট্রয় ছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী। ট্রয় নগরীর রাজপুত্র প্যারিসের সঙ্গে তিনি পালিয়ে যাবার ফলেই গ্রীস ও ট্রয়ের মাঝে যুদ্ধ বাঁধে এবং দীর্ঘ দশ বছর প্রতিরোধের পর গ্রীকদের কূটকৌশলের কাছে পরাজিত হয়ে ট্রয়ের পতন ঘটে।
১৬। নার্সিসাসঃ গ্রীক পুরাণের শিকারি চরিত্র যে জলে আপন প্রতিবিম্ব দেখে নিজের প্রেমে পড়ে গিয়েছিল।
১৭। ব্যাপটিজমঃ খ্রিষ্টানদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে একজন ব্যক্তিকে আরেকজন খ্রিষ্টান ব্যক্তির দ্বারা পবিত্র পানিতে নিমজ্জিত করে এবং বের করে আনার মাধ্যমে খ্রিষ্টীয় ধর্ম-সংঘের সদস্য করে নেওয়া হয়।