তোমার সাথে দরাদরি করার সময় আমার ধারণা ছিল না চুক্তিটা এই ধরনের হবে।
আরে বোকা, যখন তোমার চুল আমাকে দিয়েছ, সেটা কি চুক্তি ছিল না? ব্যাপটিজম আবিষ্কার করার পর থেকে আমরা সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলাম কীভাবে তোমাদের ধরব তাই ভেবে। সেজন্য কাউকে কোন সুবিধা দিতে গেলে বিনিময়ে শরীরের কিছু একটা চাই আমরা। যাতে সে জায়গাটা ধরতে পারি। তুমি তোমার চুল আমাদের দিয়েছ। আর নিজেই দেখেছ, সেই চুল তুমি চাইলেও উঠিয়ে ফেলতে পারবে না। এই পোড়া ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে দরাদরি শেষ হওয়ার পর থেকেই তুমি আমাদের সম্পত্তি হয়ে গেছ। প্রতারণা আর নৃশংসতার বীজ তোমার মনেই ছিল!
ক্ষিপ্ত বিবল্ট মাটিতে পা ঠুকে বলল, তাই বলে এই দুনিয়ার কোন সুখ ভোগ না করেই ওই দুনিয়া হারালাম আমি?
এই দুনিয়ার সুখ ভোগ করার সময় এখনও আছে, থিবস্ট।
কীভাবে?
ভাগ্যক্রমে যে রাস্তা তুমি ধরেছ তার ফল পেতে চাইলে সংশয়ে না থেকে পুরোপুরি আমাদের একজন হয়ে যাও।
সেটা কীভাবে করব?
আমার জায়গাটা নাও তুমি।
তারপর কী হবে?
তুমি আমার ক্ষমতা পাবে। তাহলে আর তোমার কিছু চাওয়ার থাকবে না।
যদি তোমার ক্ষমতা এতই হয়ে থাকে, যত খুশি সম্পদ তুমি পেতে পারো, যা খুশি করতে পারো, তাহলে এই ক্ষমতা ছাড়বে কেন?
ওটা নিয়ে মাথা ঘামিও না। আমার প্রভু আমাকে পুরস্কৃত করবেন।
তোমার জায়গা নেয়ার মানে কি তোমার চেহারাও নিতে হবে?
রাতে নিতে হবে, দিনে তুমি মানুষের বেশেই থাকবে।
রাত অনেক লম্বা। শিকারির গুলিতে মারা পড়তে পারি আমি, অথবা ধরা পড়তে পারি ফাঁদে। তাহলে ধন-সম্পদ, সম্মান আর সুখের সাথে সাথে প্রাণটাও হারাব।
সেই ভয় কোরো না। লোহা, সীসা বা ইস্পাত এই চামড়া ভেদ করতে পারবে না। এই চামড়া গায়ে থাকলে শুধু যে কেউ তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না তা-ই নয়, তুমি হয়ে যাবে অমর! আর সব নেকড়ে-মানবদের মতো, বছরে শুধু একদিনের জন্য তোমাকে পুরোপুরি নেকড়ে হিসেবে কাটাতে হবে। শুধু ওই চব্বিশ ঘণ্টা আর সব প্রাণীর মতো বিপদের আশংকা থাকবে তোমার। একবছর আগে তোমার সাথে যখন প্রথম দেখা হয়, তখন আমার ওই সময়টাই চলছিল।
এখন বুঝলাম, কেন লর্ড ব্যারনের কুকুরগুলোকে ভয় পাচ্ছিলে তুমি।
মানুষের সাথে চুক্তিতে আসার সময় পুরো সত্যটা বলতে আমরা বাধ্য। এরপর মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে সে চুক্তি করবে কি না।
খুব তো ক্ষমতার কথা বলছ। বলল, এই ক্ষমতাটা দিয়ে আমি কী করতে পারব?
পরাক্রমশালী রাজারাও এই ক্ষমতার সামনে দাঁড়াতে পারবে না। কারণ তাদের ক্ষমতা মনুষ্য সীমা দিয়ে বাঁধা।
ধনী হতে পারব?
এত সম্পদ পাবে, যে সম্পদের ওপর বিতৃষ্ণা এসে যাবে তোমার। সম্পদ বলতে মানুষ শুধু সোনা-রূপাই সংগ্রহ করতে পারে। কিন্তু শুধু ইচ্ছা শক্তি দিয়ে তুমি মানুষের কল্পনাতীত সম্পদের মালিক হতে পারবে।
আমার শত্রুদের ওপর প্রতিশোধ নিতে পারব?
যে কোন অশুভ ব্যাপারে তোমার ক্ষমতা হবে সীমাহীন।
যদি আমি কোন মেয়েকে ভালবাসি, তবু তাকে হারানোর সম্ভাবনা থাকবে?
মানুষের ওপর প্রভাব খাটাতে পারবে তুমি। সুতরাং ওদের নিয়ে যা খুশি তাই করতে পারবে।
আমার ইচ্ছার বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা ওদের থাকবে না?
কোন অবস্থাতেই না-এক মাত্র মৃত্যু ছাড়া! মৃত্যু সবচেয়ে ক্ষমতাশালী।
তিনশো পঁয়ষট্টি দিনের মধ্যে মাত্র একদিন আমার মৃত্যুভয় থাকবে?
মাত্র একদিন। বাকি দিনগুলোতে, আগুন, পানি, লোহা, ইস্পাত কিছুই তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
এবং তুমি আমাকে কোনরকম কথার ফাঁদে ফেলছ না।
নেকড়ে হিসেবে দিব্যি করে বলছি, তোমাকে কোনরকম ফাঁদে ফেলছি না আমি!
বেশ, তাহলে তাই হোক। চব্বিশ ঘণ্টার জন্য নেকড়ে আর বাকি দিনগুলোয় সম্রাট। কী করতে হবে? আমি তৈরি।
একটা পাতা নিয়ে দাঁত দিয়ে তিন ভাগ করো। তারপর যতদূর পারো ছুঁড়ে ফেলল ওটা।
থিবল্ট তাই করল।
রাতটা ছিল শান্ত। কিন্তু পাতার টুকরোগুলো বাতাসে ভাসিয়ে দেয়া মাত্র বজ্রের গর্জন শোনা গেল। একটা ঘূর্ণিবায়ু ওগুলো ভাসিয়ে নিয়ে গেল।
ভাই, থিবল্ট, এখন আমার জায়গা নাও। আর শুভকামনা রইল! চব্বিশ ঘণ্টার জন্য নেকড়ে হতে হবে তোমাকে। এই যাত্রাটা পার করতে পারলে দেখবে-আমি যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি সবই সত্যি। শয়তান যেন তোমাকে ব্যারনের কুকুরের হাত থেকে বাঁচায়। প্রভুর কাছে আমি তোমার জন্য বিশেষভাবে প্রার্থনা করব। শয়তানের দিব্যি! তোমার ব্যাপারে আমি সত্যিই আগ্রহী বন্ধু।
ধীরে ধীরে নেকড়েটা লম্বা হয়ে একটা মানুষের আকৃতি নিল। তারপর থিবল্টের উদ্দেশে একবার হাত নেড়ে দ্রুত অদৃশ্য হয়ে গেল বনের মাঝে।
থিবল্টের মনে হলো কিছুক্ষণের জন্য ও কোনরকম চিন্তা-ভাবনা বা নড়াচড়া করার ক্ষমতা হারিয়েছে। তারপর আবিষ্কার করল ওর শরীরের আকৃতি বদলে গেছে। একটু আগে যে নেকড়ের সাথে কথা বলছিল, সেই নেকড়ের প্রতিচ্ছবিতে পরিণত হয়েছে ও। মাথায় একটা কালো চুল অবশিষ্ট ছিল ওর। আর এখন কালো নেকড়ের চেহারায়, মাথার একটা মাত্র চুল সাদা হয়ে আছে।
এই অচিন্তনীয় পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে নিতে নিতেই অদূরে কুকুরের চিৎকার শুনতে পেল থিবল্ট। ডাক শুনে মনে হলো কোন ব্লাডহাউন্ড হবে। কাছেই ঝোঁপ থেকে ভেসে এল নড়াচড়ার আওয়াজ। ব্যারন আর তার কুকুরের কথা মনে পড়তেই কেঁপে উঠল ও। দৌড়াতে শুরু করল। খুশি হলো এটা আবিষ্কার করে যে ওর শক্তি আর ক্ষিপ্রতা অনেকগুণ বেড়ে গেছে।