অ্যানলেট বলতে লাগল, সেদিন আমি পালিয়ে গিয়েছিলাম। জানি সেটা আমার ঠিক হয়নি। তাছাড়া… চোখ তুলে থিবল্টের চুলের দিকে তাকাল ও। থিবল্টের মাথায় কোন টুপি নেই। চাঁদের আলোয় অ্যানলেট দেখল এখন আর একটা নয়, মাথার অর্ধেক চুল ওর শয়তানের রঙে রাঙানো।
আঁতকে উঠে পিছিয়ে গেল মেয়েটা। বলল, থিবল্ট। আমাদের শেষ দেখা হবার পর কী ঘটেছে?
মুখ নিচু করে দুহাতে মাথা চেপে ধরল থিবল্ট। অ্যানলেট! কোন মানুষ, এমনকি কোন পাদ্রীকেও আমি বলতে পারব না ঠিক কী ঘটেছে আমার জীবনে। শুধু এটুকুই বলব, আমি অসুখী, আমার প্রতি করুণা করো।
আনলেট এগিয়ে গিয়ে ওর হাত ধরল।
তুমি তখন আমাকে ভালবাসতে? ভালবাসতে আমাকে? নিষ্পাপ মিষ্টি কণ্ঠে মেয়েটা বলে চলল, আমার কী করার ছিল, থিবল্ট? আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম। দরজায় টোকা পরলেও ভাবতাম, তুমি এসেছ দাদীকে বলতে, দাদী, আমি অ্যানলেটকে ভালবাসি, অ্যানলেটও আমাকে ভালবাসে। ওকে স্ত্রী হিসেবে আমার হাতে তুলে দেবেন? তারপর যখন দরজা খুলে দেখতাম তুমি নও-অন্য কেউ, ঘরের কোনায় লুকিয়ে কাঁদতাম আমি।
আর এখন?
তোমার কাছে অবাক লাগতে পারে, কিন্তু তোমার নামে লোকে যত ভয়ংকর গল্পই বলুক, আমার কখনও ভয় লাগত না। আমার কখনও মনে হয়নি তুমি আমার ক্ষতি করতে পারো। নির্ভয়ে বনে ঘুরে বেড়াতাম আমি। আজও তেমনি বেড়াচ্ছিলাম, তখনই ওই নেকড়েটা আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল! তুমি না বাঁচালে এতক্ষণে ওটা আমাকে মেরেই ফেলত।
কিন্তু তুমি তোমার পুরানো বাড়িতে কেন? স্বামীর সাথে থাকো না?
কিছুদিন ভেয়ে ছিলাম। কিন্তু ওখানে আমার দাদীর জায়গা হয়নি। আমার স্বামীকে বললাম, আমাকে আমার দাদীর কথা প্রথমে ভাবতে হবে। তাই দাদীর কাছে যাচিছ। তোমার যখন ইচ্ছা আমাকে এসে দেখে যেও।
সে রাজি হলো?
রাজি হতে চাইছিল না। তখন বললাম দাদীর বয়স সত্তর বছর। আর হয়তো দুতিন বছর বাঁচবেন। ঈশ্বর চান তো আরও কিছুদিন বেশি বাঁচতে পারেন। তবে সে সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। দুতিন বছর হয়তো সমস্যা হবে, কিন্তু আমাদের পুরো জীবন সামনে পরে আছে। তখন রাজি হয়েছে সে।
থিবল্টের মাথায় শুধু এই চিন্তাই খেলা করছে-ওর প্রতি অ্যানলেটের ভালবাসা মরেনি!
তুমি আমাকে ভালবাসতে? আবারও তো ভালবাসতে পারো?
অসম্ভব, থিবল্ট! আমি যে এখন অন্য কারও।
অ্যানলেট! অ্যানলেট! শুধু একবার বলো তুমি আমাকে ভালবাসো?
না থিবল্ট, যদি বাসতামও, তোমার কাছে কখনও-ই সেটা প্রকাশ করতাম না।
কেন? তুমি আমার ক্ষমতা জানো না। আমার হয়তো আর একটা বা দুটা ইচ্ছা অবশিষ্ট আছে। তোমার সাহায্য পেলে আমি তোমাকে রাণীর মতো ধনী করে দিতে পারি। এই দেশ, ফ্রান্স, ইউরোপ ছেড়ে চলে যেতে পারি আমরা। পৃথিবীতে আরও অনেক বড় বড় দেশ আছে যার নামও তুমি জানো না আমেরিকা, ইন্ডিয়া। পুরো স্বর্গ, অ্যানলেট! নীল আকাশ, বিশাল গাছ, নানা বর্ণের পাখি। অ্যানলেট, শুধু বলো তুমি আমার সাথে আসবে। কেউ জানবে না আমরা একসাথে কোথায় চলে গেছি। কেউ জানবে না আমরা একজন আরেকজনকে ভালবাসি। এমনকি আমরা যে বেঁচে আছি, তাও কেউ বুঝতে পারবে না।
তোমার সাথে চলে যাব? অ্যানলেট যেন বুঝতে পারছে না থিবল্ট কী বলছে। তুমি কী ভুলে গেছ, আমি আর তোমার নই? আমার বিয়ে হয়ে গেছে?
তাতে কী যায় আসে! যদি তুমি আমাকে ভালবাসো, আমরা ঠিক সুখী হব!
থিবল্ট! এসব কী বলছ তুমি?
শোনো অ্যানলেট, এপারের জীবন আর ওপারের জীবনের দিব্যি দিয়ে বলছি। তুমি কি চাও না আমার শরীর এবং আত্মা দুটোই বাঁচুক? যদি চাও তাহলে না কোরো না। দয়া করো, চলো আমার সাথে। এখান থেকে দূরে কোথাও চলে যাই। যদি ধনী হয়ে থাকতে না চাও, আবার যেখানে স্যাবট কারিগর হিসেবে কাজ করে খেতে পারব সেখানেই চলে যাব আমরা। আমার পরিচয় হবে গরীব, কিন্তু কাজ নিয়ে সুখী থিবল্ট। যার ঘরে আছে অ্যানলেটের মতো চমৎকার স্ত্রী।
আমি তো তোমার স্ত্রী হতেই চেয়েছিলাম। তুমিই তো আমার হৃদয় পুড়িয়ে দিয়েছ।
আমার সব পাপ ভুলে যাও, অ্যানলেট ভয়ঙ্কর শাস্তি আমি পেয়েছি।
থিবল্ট, তুমি যেটা করতে চাওনি, অন্য কেউ সেটা করেছে। অসহায় মেয়েটাকে গ্রহণ করেছে। অন্ধ বৃদ্ধার দায়িত্ব নিয়েছে। আমাকে নাম দিয়েছে আর দাদীর অন্ন সংস্থান করেছে। আমার ভালবাসা ছাড়া অন্যকিছু চায়নি সে। আমার প্রতিশ্রুতি ছাড়া কোন যৌতুকও দাবি করেনি। তুমি কি আমাকে ভালর বিনিময়ে অনিষ্ট করতে বলছ? তুমি কি বলতে চাইছ আমি তাকে ছেড়ে আসব, যে ভালবাসার প্রমাণ দিয়েছে, এমন কারো জন্য জন্য যে কোন প্রমাণ দিতে পারেনি?
তুমি যখন ওকে ভালবাসো না, আমাকেই বাসো, তখন তাতে কী যায় আসে?
আমার মুখে কথা বসিয়ো না, থিবল্ট। আমি বলেছি তোমার সাথে আমার সম্পর্কটা আমি ভুলে যাইনি, কিন্তু কখনও-ই বলিনি আমার স্বামীকে আমি ভালবাসি না। আমি তোমাকে সুখী দেখতে চাই। আমি চাই তুমি খারাপ কাজ ছেড়ে দাও। পাপের প্রায়শ্চিত্ত করো। আর সব শেষে আমি চাই ঈশ্বর তোমাকে দয়া করুন। যে অশুভ আত্মার কথা তুমি বললে, তার হাত থেকে যেন মুক্তি পাও। আমি তোমার জন্য দিনরাত প্রার্থনা করব। কিন্তু প্রার্থনা করার জন্য আমার নিজেকে শুদ্ধ রাখতে হবে। যে কণ্ঠ দয়া ভিক্ষা করবে, ঈশ্বরের কানে সে কষ্ঠ পৌঁছুতে হলে সেই তাকে নিষ্পাপ হতে হবে। আর ঈশ্বরের বেদীতে যে প্রতিজ্ঞা করেছি, কোন কিছুর বিনিময়েই আমি তা ভাঙতে পারব না, থিবল্ট।