বেরিয়ে পড়ল থিবল্ট, নেকড়েদের নেতা এখন দস্যুদলের নেতার মতো অনুসারীদের নিয়ে ধ্বংসের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে।
হরিণ বা অন্য কোন প্রাণী নয়, ওদের লক্ষ্য এখন ভেযের প্রাসাদ-দুর্গ। থিবল্টের প্রধান শত্রু ব্যারনের আস্তাবল ভর্তি ঘোড়া আছে, আছে গরু, ভেড়া। পরদিন সকালে, দুটো ঘোড়া, চারটা গরু আর দশটা ভেড়ার মৃতদেহ পাওয়া গেল।
ব্যারন কিছুটা সন্দিহান হয়ে পড়ল। এটা কি নেকড়েদের আক্রমণ? পশুর আক্রমণ হলেও, কোথায় যেন চিন্তার ছাপ লক্ষ করা যায়। চিহ্ন দেখে বোঝা যাচ্ছে আক্রমণকারী পশুগুলো নেকড়ে। পরের রাতে আস্তাবলে পাহারা বসাল ব্যারন। কিন্তু সে রাতে বনের অন্যপ্রান্তে ব্যস্ত রইল থিবল্ট। এবার সুসি আর ভিভিয়ারের আস্তাবল আর পার্ক আক্রান্ত হলো। তারপরের রাতে বুলোনা আর ইভ নামক আরও দুটো এলাকা। কাজটা একবার শুরু করার পর আর থামার কোন উপায় নেই। বেপরোয়া নিষ্ঠার সাথে এগিয়ে যেতে হবে। থিবল্ট এখন পুরোটা সময় নেকড়েদের সাথেই থাকে। ওদের সাথেই ঘুমায়। ওদের রক্তের তৃষ্ণা চাঙ্গা রাখে।
বনে কাজ করতে যাওয়া কাঠুরে, পাতা-কুড়ানি এবং আরও অনেকে নেকড়ের মুখোমুখি হয়েছে। কেউ বেঁচে গেছে নিজের সাহস আর বুদ্ধির জোরে আর কেউ বা মরেছে। মানুষের নেতৃত্ব পেয়ে নেকড়েরা সুসংবদ্ধ এবং সুশৃঙ্খল একটা দলে পরিণত হয়েছে। যারা সাধারণ হিংস্র পশুর চেয়ে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর।
চারদিকে আতংক ছড়িয়ে পড়ল। অস্ত্র ছাড়া কেউ শহর বা গ্রামের বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিল। কারও কাজ শেষ হয়ে গেলে বাকিদের অপেক্ষা করে সে, একা বন পাড়ি দিয়ে ফেরার চেষ্টা করে না। সয়সনের বিশপ গণপ্রার্থনার আয়োজন করলেন। নেকড়েদের অত্যাচার থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য ঈশ্বরের কাছে করুন আবেদন জানালেন তিনি। প্রচুর বরফ পরার কারণে নেকড়েরা আরও বেশি হিংস্র হয়ে পড়েছে। তবে এমন খবরও আসতে লাগল যে নেকড়েদের সাথে একজন মানুষও আছে। যার উপস্থিতির কারণে নেকড়েরা আরও বেশি অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে। নেকড়েদের মতোই কাঁচা মাংস খায় সেই লোক! রক্ত দিয়ে তৃষ্ণা মেটায়। লোকে এমনও বলতে লাগল যে সেই মানুষটা হচ্ছে থিবল্ট!
বিশপ জুতোর কারিগরকে চার্চের আশ্রয় থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা করলেন। চার্চের বহিষ্কারাদেশের কারণে থিবল্টের মাথায় বাজ পড়বে-এমন ভরসা লর্ড ভ্যে অবশ্য করে না। শিকারে বেরোতে পারলে হয়তো কিছু করা যাবে। নেকড়েদের দমন করাটা তার অন্যতম প্রধান কাজ। আর সেই নেকড়েদের হাতেই তার গরু-ঘোড়া মারা পড়ায় যারপরনাই ক্ষিপ্ত ব্যারন।
লর্ড ভেয অবশ্য কিছুটা খুশিও, কারণ নেকড়েদের এই উপদ্রব বন্ধ করতে পারলে বিশাল সম্মান পাবে সে। শিকারে প্রবল আগ্রহ তার সাফল্যের সম্ভাবনাকেই শক্তিশালী করল। আবারও দলবল নিয়ে শিকারে বেরোল সে। দিন। রাত লেগে রইল নেকড়েদের পেছনে। স্যাডল থেকে বলতে গেলে নামাই বন্ধ করে দিল। হাউডগুলোকে নিয়ে যতক্ষণ সম্ভব ছুটে বেড়াতে লাগল সে। সঙ্গে থাকে লেভিলি আর এনগুভা। বিয়ের পর এনগুভার পদোন্নতি হয়েছে। কিন্তু এত ঘুরেও কোন লাভ হলো না। একটা-দুটা দলছুট বা বাচ্চা নেকড়ের দেখা পেলেও, আসল ধাড়ী নেকড়েগুলোর টিকির নাগালও পাওয়া যাচ্ছে না। থিবল্টের কারণে যোগ্য প্রতিপক্ষের সম্মুখীন হয়েছে শিকারিল।
লর্ড ভেয যেমন সবসময় তার কুকুরের সাথেই থাকছে, থিবল্টও তেমনি অবস্থান করছে নেকড়েদের সাথে। একরাতের আক্রমণের পর একটা নেকড়ের পিছু নিল ব্যারন। সেই নেকড়েটাকে সাহায্য করার জন্য পুরো পালকে সতর্ক রাখল থিবল্ট। নেকডেটা থিবল্টের নির্দেশমত সবরকম ভাবে ফাঁকি দিতে লাগল ব্যারনের দলকে। ওটার শক্তিতে যখন আর কুলাচ্ছে না তখন পালের অন্য নেকড়েগুলোও যোগ দিল। ব্যারনের কুকুরগুলো বুঝে উঠতে পারল না, কোন্ নেকড়েকে ওরা তাড়া করছে। ব্যারন নিজেও মাঝে মাঝে ভুল করতে লাগল।
সেদিনের ব্যর্থতার পর মাঝে মাঝে নেকড়েরাই শিকারিদের পিছু নিতে শুরু করল। কোন হাউন্ড পিছিয়ে পড়লে বা দলছুট হয়ে গেলে সাথে সাথে নেকড়েরা ওটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত। একবার এনগুভা পিছিয়ে পড়েছিল। নেহায়েত ঘোড়াটার কল্যাণে সে যাত্রা ওর জীবন বাঁচল।
ব্যারনের হাউন্ডের দল পাতলা হয়ে এল। নিরন্তর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার কারণে ওগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়তে শুরু করল। সেরা হাউন্ডগুলোর অধিকাংশই মারা পড়ল নেকেড়েদের সুনিয়ন্ত্রিত আক্রমণে।
বাধ্য হয় অন্য রাস্তা ধরল ব্যারন। আশেপাশে সক্ষম যত লোক ছিল, সবাইকে জড়ো করল সে। এত লোক সমাগম হলো যে তারা যেখান দিয়ে যায়, একটা খরগোশও লুকিয়ে থাকতে পারে না।
কিন্তু বিল্ট আগে থেকেই লক্ষ রাখতে লাগল ওরা কোনদিক দিয়ে যাবে। ওরা যেদিক দিয়ে যেত, থিবল্ট ওর পাল নিয়ে তার উল্টোদিকে চলে যেত।
থিবল্ট সাফল্যের সাথে ওর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে লাগল। ব্যারন বা তার লোকজন কেউ একটা নেকড়েকেও খুঁজে পেল না। যদি কোন কারণে থিবল্ট আবিষ্কার করত-ব্যারনের পথ বুঝতে ওর ভুল হয়েছে, তাহলে সতর্কতার স্বার্থে রাতের আঁধারে সবার চোখ এড়িয়ে নেকড়ের পাল নিয়ে অন্য বনে চলে যেত ও। মাসের পর মাস এভাবে চলতে লাগল।