তুমি আমাকে শোধ নিতে সাহায্য করবে? যখন আপনি চান।
এই মুহূর্তে?
এখানে ঠিকমতো কথা বলা যাবে না।
কোথায় যাবে?
আপনার ঘরে বলা যেতে পারে।
কিন্তু একসাথে দুর্গে ঢাকা ঠিক হবে না আমাদের।
না। তবে পার্কের ভাঙা অংশটা দিয়ে যেতে পারি। মঁসিয়ে রাউল যেখানে তার ঘোড়া রাখতেন, মাদমোয়াজেল লিযেট সে ঘরটার কাছে আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারেন। প্যাচানো সিঁড়িটা দিয়ে আমাকে ওপরে, আপনার ঘরে নিয়ে যেতে পারেন। আপনি যদি ড্রেসিংরুমে থাকেন, গতরাতে মঁসিয়ে রাউলের মতো আমিও অপেক্ষা করতে পারি।
দৃশ্যত দুই মহিলাই কেঁপে উঠল।
এতসব খুঁটিনাটি আপনি কীভাবে জানলেন? প্রশ্ন করল কাউন্টেস।
সময়মতো সব বলব আপনাকে। কাউন্টেস একটু ভাবল। তারপর সিদ্ধান্ত নিয়ে বলল, বেশ, ওভাবেই আসুন। লিযেট আপনার অপেক্ষায় থাকবে।
লিযেট বলল, ওহ, মাদাম, এই লোকটাকে আপনার কাছে নেয়ার সাহস আমার কখনও হবে না।
সেক্ষেত্রে আমি নিজেই যাব।
ভাল বলেছেন! মন্তব্য করল থিবল্ট। সত্যিকারের নারী বলতে হলে আপনার কথাই বলতে হয়। তারপর রাস্তার পাশে নেমে গেল ও। লিযেটকে দেখে মনে হলো অজ্ঞান হয়ে যাবে।
কাউন্টেস লিযেটকে বলল, আমার কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটো। আমার জানতে হবে, লোকটা কী বলতে চায়।
খামার হয়ে দুর্গে প্রবেশ করল দুই মহিলা। কেউ ওদের বেরোতে বা ঢুকতে দেখেনি। ঘরে পৌঁছে লোকটাকে আনার জন্য লিযেটকে পাঠিয়ে দিল কাউন্টেস। মিনিট দশেক বাদে ফ্যাকাসে চেহারা নিয়ে ফিরে এল লিযেট। মাদাম, লোকটাকে আনার জন্য আমার যাবার কোন দরকার ছিল না।
কী বলছ তুমি!
লোকটা উপরে ওঠার রাস্তা চেনে। আর সে আমাকে কী বলেছে যদি শুনতেন! আমার মনে হচ্ছে লোকটা সাক্ষাত শয়তান!
ওকে ভেতরে নিয়ে এসো।
আমি এখানে? ঘোষণা করল থিবল্ট।
তুমি এখন যেতে পারো, লিযেটকে উদ্দেশ্য করে বলল কাউন্টেস। থিবল্টের সাথে একা হয়ে গেল সে। থিবল্টের বেশভূষায় আশ্বস্ত হওয়ার মতো কিছু নেই। ওর ঠোঁটে রহস্যময় হাসি, চোখে অশুভ একটা দ্যুতি খেলা করছে। লাল চুল ঢাকার কোন চেষ্টাই আজ করেনি ও। মাথার ওপর অগ্নিশিখার মতো উজ্জ্বল হয়ে আছে ওগুলো। তারপরও কাউন্টেস কোনরকম ভাবান্তর ছাড়াই ওর মুখের দিকে তাকাল। আমার পরিচারিকা বলল, তুমি আমার ঘরের রাস্তা চেনো। আগে কখনও এসেছিলে?
হ্যাঁ, মাদাম, একবার।
সেটা কবে?
গত পরশু।
কখন?
সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে বারোটার মধ্যে।
কাউন্টেস কিছুক্ষণ অপলক তাকিয়ে রইল।
মিথ্যে বলছ।
জানতে চান আর কী কী ঘটেছে সে রাতে?
যে সময়ের কথা বললে, সে সময়ের মধ্যে?
সে সময়ের মধ্যে।
বলো।
থিবল্ট বলতে শুরু করল, মঁসিয়ে রাউল এই দরজা দিয়ে ঢুকেছিলেন। করিডোরের দিকের দরজা দেখাল থিবল্ট। লিযেট তাকে এখানে একা ছেড়ে গিয়েছিল। ড্রেসিংরুমের দরজা দেখিয়ে বলল, আপনি এই দরজা দিয়ে এসে তাকে হাটু গেড়ে থাকতে দেখেন। আপনার চুলে হীরার পিন লাগানো ছিল। সিল্কের গোলাপী একটা গাউন পরে ছিলেন আপনি। গলায় ছিল মুক্তোর মালা।
আমার জামার বর্ণনা তো ঠিকমতোই দিলে। বলতে থাকো।
মঁসিয়ে রাউলের সাথে ঝগড়া করার চেষ্টা করলেন আপনি। প্রথমে করিডোরে আপনার পরিচারিকাকে চুমু খাওয়া নিয়ে, পরে এনেভিলা আর ভিলারস-কটেরেটের রাস্তায় অনেক রাতে কার সাথে দেখা হয়েছিল তা নিয়ে, শেষে নাচের আসরে মাদাম দু বোনোইয়ের সাথে চারবার নাচা নিয়ে।
তারপর…?
জবাবে আপনার প্রেমিক ভাল-মন্দ কিছু অজুহাত দাঁড় করাতে লাগল। আপনিও খেলাচ্ছলে তাকে ক্ষমা করতে লাগলেন। আর এমনি সময় লিযেট দৌড়ে এসে মঁসিয়ে রাউলকে পালাতে বলল। জানাল, আপনার স্বামী আসছে।
লিযেট ঠিকই বলেছে, তুমি সাক্ষাৎ শয়তানই হবে, তিক্ত একটা হাসি দিল কাউন্টেস। আমার মনে হচ্ছে আমরা একটা বোঝাপড়ায় আসতে পারব…তোমার কথা শেষ করো।
ব্যারন রাউলের প্রস্থান থেকে দ্বন্দ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত ঘটনা বর্ণনা করল থিবল্ট। এ পর্যায়ে কাউন্টেস জানতে চাইল, কাউন্ট একা ছিল?
দাঁড়ান…কাউন্টকে একাই মনে হয়েছিল। কিন্তু কাঁধে আঘাত পাওয়ার পর তিনি চেঁচিয়ে উঠেছিলেন, লেস্টক, বাঁচাও বলে। তারপর ব্যারন তার প্রতিজ্ঞা স্মরণ করে কাউন্টের পায়ে আঘাত করলেন, যেমন তার ঘোড়াকে করা হয়েছিল। কাউন্টকে খোঁড়া করে দিয়ে ব্যারন উঠে দাঁড়াতেই লেস্টক পেছন থেকে ছুরি ঢুকিয়ে দেয় তার শরীরে। পিঠ দিয়ে ঢুকে বুক দিয়ে বেরিয়ে যায় ফলাটা। ক্ষতটা কোথায় আপনি জানেন্য সেখানে আপনি চুমু খেয়েছেন।
তারপর?
ব্যারনকে মরার জন্য ফেলে রেখে কাউন্ট আর তার সঙ্গী দুর্গে ফিরে গেলেন। ব্যারনের জ্ঞান ফিরলে বহু কষ্টে পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি। পথচারীরাই তাকে বয়ে নিয়ে যায় পাদ্রীর কাছে। যেখানে আপনি আজ তাকে দেখেছেন, সেখানেই ঠিক সাড়ে নটার পর পর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
কোন কথা না বলে উঠে দাঁড়াল কাউন্টেস। গহনার বাক্স খুলে মুক্তোর মালাটা বের করে থিবল্টের দিকে বাড়িয়ে ধরল সে।
এটা কেন?
নাও, এর দাম পঞ্চাশ হাজার ফ্রাঁর উপর হবে।
এখনও প্রতিশোধ নিতে চান?
হ্যাঁ।
তাহলে আরও বেশি লাগবে।
কত? আগামীকাল রাতে আমার জন্য অপেক্ষা করবেন, আমি জানাব।
কোথায় অপেক্ষা করব?
এখানেই, নিচু স্বরে বলল থিবল্ট, ওর চোখে বুনো পশুর দৃষ্টি।