বেশ, ভিলার-সেইলনে যাব। খুব বেশি দূরের রাস্তা নয়। বনের মধ্যে দিয়ে গেলে সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরতে পারব। যাওয়া আসা মিলে প্রায় চব্বিশ মাইল হবে। শিকারে গিয়ে এরচেয়ে বেশি রাস্তা আমরা পাড়ি দিয়েছি।
তাহলে ঠিক আছে। মঁসিয়ে কলার্ডকে একটা চিঠি লিখে তোকে দিয়ে দিচ্ছি, তুই রওনা হয়ে যা।
একটুও দেরি করব না, জেনারেল।
বাবা উঠলেন। মঁসিয়ে কলার্ডকে চিঠিতে লিখলেন:
প্রিয় কলার্ড,
একটা গাধাকে পাঠালাম। তুমি ওকে চেনো। ওর মাথায় ঢুকেছে এক বুড়ি নাকি ওকে প্রতিরাতে দুঃস্বপ্ন দেখায়। ওই ভ্যাম্পায়ারের হাত থেকে বাঁচতে বুড়িকে মারার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বদহজম সারানোর এই তরিকাটা বিচারকরা ঠিক পছন্দ করবে না। তুমি ওকে দূরে কারও কাছে পাঠাও। সে যেন ওকে আরও দূরে কারও কাছে পাঠায়। এভাবে ওকে যতদূর পাঠাতে পারো। জাহান্নাম হলেও আমার আপত্তি নেই।
অন্তত দিন-পনেরো ও যেন দৌড়ের উপরে থাকে। ততদিনে আমরাও আঁটিলি চলে যাব। গাধাটাও আহামোর বাইরে চলে যাবে। আশা করা যায় এরমধ্যে দুঃস্বপ্নের ভূতও ওকে ছেড়ে যাবে। এদিকে মোকেট আশেপাশে না থাকায় মাদার ডুরান্ডও নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবে।
গতকালের শিকার করা একটা খরগোশ আর ছয়টা পাখি পাঠালাম।
হামাইনিকে শুভেচ্ছা আর ছোট্ট ক্যারোলিনকে আমার আদর দিও।
তোমার বন্ধু,
আলেক্স দ্যুমা
ঘণ্টাখানেকের মধ্যে মোকেট রওনা হয়ে গেল। এর তিন সপ্তাহ পর আঁটিলিতে চলে এল ও।
বাবা ওর চনমনে চেহারা দেখে জিজ্ঞেস করলেন, তো, মাদার ডুরান্ড আর কী করল?
হাসিমুখে মোকেট বলল, জেনারেল, বুড়ি ছুঁচোটার নিজের এলাকার বাইরে কোন ক্ষমতাই নেই!
৭
মোকেটের দুঃস্বপ্ন দেখার ওই ঘটনার পর বারো বছর পেরিয়ে গেছে। আমার বয়সও পনেরো ছাড়িয়েছে। বাবা মারা গেছেন দশ বছর হলো। আগের কাজের লোকদের কেউ আর নেই। বাড়িও পাল্টেছে। ভিলারস কটেরেটে থাকি এখন আমরা। ঝর্ণার উল্টোদিকের একটা ছোট্ট বাড়িতে।
খেলাধুলার প্রতি আমার খুব উৎসাহ ছিল। প্রিন্সেস বোর্গিসের মনোগ্রাম খোদাই করা একটা একনলা বন্দুক দিয়েছিলেন বাবা আমাকে। বাবার মৃত্যুর পর অনেককিছুই বিক্রি করে দেয়া হয়। কিন্তু আমার জোরাজুরিতে বন্দুকটা শেষ পর্যন্ত আর বিক্রি করা হয়নি।
শীতকাল ছিল আমার পছন্দের সময়। পাখিগুলো খাবারের খোঁজে বেরিয়ে আসত। বাবার কিছু বন্ধুর বিশাল বাগান ছিল। সেখানে গিয়ে ইচ্ছামতো পাখি শিকারের অনুমতি ছিল আমার। শীতকাল যদি দীর্ঘায়িত হত, তাহলে আরেকটা ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ত। যদি কোন নেকড়ের বাসা খুঁজে বের করা যেত, তবে সবাই মিলে নেকড়ে শিকারে বেরোত। মায়ের শত আপত্তি সত্ত্বেও আমি বন্দুক নিয়ে সামিল হতাম।
১৮১৭ আর ১৮১৮-এর শীত বেশ চরম আর লম্বা ছিল। একদিন বেলা চারটার দিকে মোকেট এসে হাজির। আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপল। আমি ওর পিছু নিলাম।
কী হয়েছে, মোকেট?
বুঝতে পারছেন না?
নাহ।
তাহলে বুঝতে পারছেন না আহামো না গিয়ে আপনার মায়ের কাছ থেকে বারুদ কিনছি কেন? আচ্ছা, সংক্ষেপে বলি, পৌনে এক মাইলের বদলে তিন মাইল হেঁটে এসেছি, তারমানে নিশ্চয়ই কোন শিকারের প্রস্তাব আছে?
তাই নাকি মোকেট? কী শিকার? কোথায়?
নেকড়ে, মঁসিয়ে আলেক্সান্ডার।
সত্যি?
গতরাতে, মঁসিয়ে দিথু নেলের একটা ভেড়া ধরে নিয়ে গেছে। আমি বনের কাছে ওটার ছাপ খুঁজে পেয়েছি।
তারপর?
তারপর আর কী? আমি নিশ্চিত আজ রাতে ওটাকে আবার দেখা যাবে। তখন ওটার ডেরাও খুঁজে পাওয়া যাবে। ব্যস, কাল সকালে সব খতম।
দারুণ!
প্রথমে আমাদের অনুমতি নিতে হবে মাদামের কাছ থেকে।
চলো, এখনই যাই।
জানালা দিয়ে মা আমাদের লক্ষ করছিলেন। দেখেই বুঝেছেন কোন একটা ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা ঢুকতেই তিনি বললেন, তোমাকে নিয়ে আর পারি না, মোকেট।
কেন, মাদাম?
আসতে না আসতে ওকে উসকে দিচ্ছ শিকারের জন্য।
না মাদাম, এটা ওনার রক্তেই আছে। ওনার বাবাও শিকারি ছিলেন, উনিও শিকারি; ওনার ছেলেও তা-ই হবে। আপনাকে মানিয়ে নিতে হবে।
ওর যদি ভাল-মন্দ কিছু হয়ে যায়?
জেনারেলের ছেলের কোন ক্ষতি হবে? মোকেট সাথে থাকতে? জীবন বাজি রাখতে রাজি। কখনও হবে না। কখনও না।
মা মাথা নাড়তে লাগলেন। আমি কাছে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলাম।
লক্ষ্মী, মা। যাই? অনুরোধ করলাম।
মোকেট, তুমি ওর বন্দুকে গুলি ভরে দেবে।
চিন্তা করবেন না। ঠিক মতো গুলি ভরে দেব।
সবসময় ওর সাথে থাকবে।
থাকব, একেবারে ছায়ার মতো।
আমি ওকে শুধু তোমার দায়িত্বে ছাড়ছি, মোকেট।
এবং নিরাপদে আপনার কাছে ফিরিয়ে আনব। তো, মঁসিয়ে আলেক্সান্ডার, তৈরি হয়ে নিন। মায়ের অনুমতি পাওয়া গেছে।
আজ বিকেলে তো তুমি ওকে নিতে পারবে না, মোকেট।
সকালে অনেক দেরি হয়ে যাবে, মাদাম। ভোরেই নেকড়েটার পিছু নেব।
নেকড়ে। তুমি ওকে নেকড়ে শিকারে নিতে এসেছ?
আপনি কি ভয় পাচ্ছেন যে নেকড়েটা আপনার ছেলেকে খেয়ে ফেলবে?
মোকেট! মোকেট!
আমি তো আপনাকে কথা দিলাম যে আমি দায়িত্ব নিচ্ছি!
তা ও কোথায় ঘুমোবে?
অবশ্যই মোকেটের সাথে। তুষারের মতো সাদা ভাল চাদর বিছিয়ে দেব। দুটো গরম কাপড়ও থাকবে যাতে শীত না লাগে।
মা, কিছু চিন্তা কোরো না, আমি ঠিকই থাকব। মোকেট, আমি তৈরি।
যাবার সময় মা-কে একটা চুমুও খাবি না?