হয়তো না, তবে তুমি বুঝিয়ে বললেই তোমার বন্ধুরা বুঝবে।
তা ঠিক। বলো কী জানতে চাও।
ঠিক আছে। প্রথম প্রশ্ন, ধূসর কোট পরেছ কেন?
বন্ধুর অজ্ঞতায় হাসল ফনগোয়াঁ। ধূসর ওভারঅল পরে তুমি ভেতরের পোশাকটাকে ঢেকে রাখতে পারো। অনেকটা প্রহরীর মতো কাজ করে ওটা।
তারমানে তুমি প্রহরীর কাজ করছ? কে আসবে?
কোতেস দু মন-গুবেরের পক্ষ থেকে চিঠি নিয়ে শস্পেন আসবে।
আচ্ছা, বুঝতে পেরেছি। লর্ড ভোপাফোঁ, তোমার মনিব, কোঁতেস দু মন গুবেরকে ভালবাসেন। মাদামের পক্ষ থেকে শস্পেন চিঠি নিয়ে আসবে, তুমি তার অপেক্ষায় আছ।
মঁসিয়ে রাউলের ছোট ভাই বলে, শিক্ষক হিসেবে আমি খারাপ নই।
লর্ড রাউল সৌভাগ্যবান।
তা বটে।
কাউন্টেস অনেক সুন্দরী।
তুমি চেন?
ডিউক আর মাদাম দু মতির সাথে শিকার করতে দেখেছি।
ওয়াইন খেয়ে গ্লাস নামিয়ে রাখল দুজনে। তখনই আরেকজন ধূসর কোটকে আসতে দেখল ওরা। ওদের ডাক শুনে সে উপরে চলে এল। তার সাথে একটা চিঠি আছে।
তাহলে আজ রাতে কি সাক্ষাত হচ্ছে? ফনগোয়াঁ জানতে চাইল।
হ্যাঁ, আনন্দের সাথে জবাব দিল শস্পেন।
বেশ, ফনগোয়াও খুশি।
মনিবের খুশিতে চাকরদেরও খুশি হতে দেখে অবাক হলো থিবল্ট।
তোমরা এত খুশি হচ্ছ কেন? দেখ তো মনে হচ্ছে মনিব না, বরং তোমাদের নিজেদের ইচ্ছাই পূরণ হতে যাচ্ছে?
ব্যাপারটা তা নয়। মনিব ব্যস্ত মানে আমাদের ছুটি।
ফনগোয়া বলল, ভৃত্য হতে পারি, কিন্তু সময় কীভাবে উপভোগ করা যায় সেটা ভালই জানা আছে আমার।
শস্পেন, তুমি?
শস্পেন গ্লাসটা আলোতে ধরে বলল, আমিও সময়টা উপভোগ করতে চাই।
থিবল্ট বলল, সবার ভালবাসার উদ্দেশে পান করা যাক। দেখা যাচ্ছে সবারই কেউ না কেউ আছে।
আর আমরা পান করছি তোমার ভালবাসার উদ্দেশে।
জুতো কারিগরের চোখে ঘৃণার দৃষ্টি ফুটল। আমার কথা যদি বলতে হয়, তাহলে বলব-আমি কাউকে ভালবাসি না, আমাকেও কেউ ভালবাসে না।
ওর সঙ্গীরা কৌতূহলী দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাল।
তাহলে তোমার সম্বন্ধে যেসব কথা ভেসে বেড়াচ্ছে তা কি সত্যি?
আমার ব্যাপারে কথা?
হ্যাঁ, তোমার ব্যাপারে। শস্পেন বলল।
ভোপাফোর মতো মন-বেতেও আমার ব্যাপারে কথা শোনা যায়?
শস্পেন মাথা নেড়ে সায় জানাল।
তা, কী শোনা যায়?
তুমি একটা নেকড়ে-মানব।
থিবল্ট হেসে উঠল। আমার কি কোন লেজ দেখতে পাচ্ছ? নেকড়ের মতো থাবা বা লম্বা নাক?
আমরা বলিনি। লোকে যা বলছে তাই বললাম।
তবে এটা নিশ্চয়ই স্বীকার করবে, নেকড়ে-মানবের ওয়াইনের রুচি খুবই উন্নত।
কোন সন্দেহ নেই। দুই ভৃত্য একই সাথে জবাব দিল।
যে এসব সম্ভব করেছে, সেই শয়তানের উদ্দেশে, থিবল্ট গ্লাস উঁচু করল।
বাকি দুজন গ্লাস নামিয়ে রাখল।
কী হলো?
শয়তানের স্বাস্থ্যের উদ্দেশে পান করতে চাইলে অন্য কোন সঙ্গী খুঁজে নাও, আমি নেই, ফনগোয়াঁ বলল।
আমিও না, শস্পেনও যোগ করল।
ঠিক আছে, আমি একাই তিন গ্লাস পান করব তাহলে, বলে হাত বাড়াল থিবল্ট।
থিবল্ট, এখন আমার যেতে হবে, ফনগোয়াঁ বলল।
এত তাড়াতাড়ি?
লর্ড অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, শস্পেন… চিঠিটা?
এই যে।
আমরা বিদায় নিয়ে যে যার কাজে যাই। থিবল্ট এখানে সময়টা নিজের মতো উপভোগ করুক। বলে ফনগোয়াঁ শস্পেনের উদ্দেশে চোখ টিপ দিল।
শেষ আরেকবার খেয়ে তারপর যাও।
খেতে পারি, তবে ওই গ্লাসে নয়।
তোমরা বড় খুঁতখুঁতে। এখন তাহলে হোলি ওয়াটার দিয়ে এই গ্লাসগুলো ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
তা নয়। বন্ধুর অনুরোধকে উপেক্ষা করার চাইতে আমরা ওয়েটারকে ডেকে নতুন গ্লাস দিতে বলব।
থিবল্টের ওপর মদের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এই তিনটা গ্লাস তাহলে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া উচিত? গোল্লায় যা! বলে একে একে তিনটা গ্লাসই জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল ও। আশ্চর্য ব্যাপার, অন্ধকারে হারিয়ে যাবার আগে পেছনে বিদ্যুতের মতো আলোর রেখা তৈরি করল গ্লাসগুলো। আর শেষ গ্লাসটা নিচে পড়ার পরপরই শোনা গেল বজ্রপাতের বিকট আওয়াজ।
জানালা বন্ধ করে ফিরে এসে থিবল্ট দেখল ওর সঙ্গী দুজন চলে গেছে।
কাপুরুষের দল! বিড়বিড় করল থিবল্ট, তারপর গ্লাস খুঁজতে গিয়ে দেখল আর কোন গ্লাস অবশিষ্ট নেই। আজব! বোতল থেকেই খেতে হবে দেখছি। যেই ভাবা সেই কাজ, গলায় ঢেলে বোতলটা খালি করে ফেলল ও। তাতে করে মস্তিষ্কের স্থিরতা অবশ্য আরও কমে গেল ওর।
রাত নটার দিকে বিল মিটিয়ে রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে গেল থিবস্ট। পুরো দুনিয়ার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে আছে ও। যে যন্ত্রণা থেকে পালাতে চাইছিল সেটাই বারবার ফিরে আসছে। যত সময় যাচ্ছে অ্যানলেট ওর কাছ থেকে তত দূরে চলে যাচ্ছে। অথচ সবারই হয় স্ত্রী আছে, নয় প্রেমিকা। আজ ওর এই দুর্দশা। কিন্তু জগতের আর সবাই খুশি। লর্ড ভোপাফো, দুই ভৃত্য ফনগোয়াঁ আর শস্পেন, সবাই আনন্দিত। ও-ই শুধু একা অন্ধকারে ফিরে যাচ্ছে। নিশ্চয়ই ওর ওপর কোন অভিশাপ আছে।
আকাশের দিকে হাত নাচিয়ে ক্ষোভ ঝাড়তে ঝাড়তে ঘরের কাছে চলে এল থিবল্ট। পেছনে ঘোড়র ক্ষুরের আওয়াজ শুনতে পেল।
নিজের মনেই বলল থিবল্ট, লর্ড ভোপাফোঁ, প্রেমিকার সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন। স্যার রাউলকে লর্ড মন-গুবে যদি ধরতে পারেন, কী যে হবে ভেবেই হাসি পাচ্ছে। সবাই তো আর ম্যাগলোয়া নয় যে সহজেই পার পেয়ে যাবে। এই বেলা ঠিকই অস্ত্রের ঝনঝনানি শোনা যাবে।