আমার হ্যাট থেকে নিন। হ্যাট থেকে একটা উটপাখির পালক ভেঙে ম্যাগলোয়াকে দিল ব্যারন। সেটা পুড়িয়ে ধোঁয়া মাদামের নাকের নিচে ধরল বেইলিফ। সাথে সাথে ফল পাওয়া গেল। হচি দিয়ে উঠল সুজান।
বেইলিফের খুশি আর দেখে কে, উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলে উঠল, ফিরছে। আমার স্ত্রীর জ্ঞান ফিরছে!
মাদাম ম্যাগলোয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
মাই লর্ড! মাই লর্ড! ও বেঁচে গেছে! বেঁচে গেছে! চেঁচিয়ে বলল বেইলিফ।
মাদাম ম্যাগলোয়া চোখ খুলে প্রথমে বেইলিফের দিকে তাকাল। ব্যারনের দিকে ফিরতে বড় হয়ে গেল তার চোখ। তারপর আবার বেইলিফের দিকে তাকাল সে।
ম্যাগলোয়া, সত্যিই তুমি তো? ভয়ঙ্কর একটা দুঃস্বপ্ন দেখার পর তোমাকে দেখে কী যে ভাল লাগছে!
থিবল্ট বিড়বিড় করল, অসতী রমণী! যাক গে যেসব মহিলাদের পেছনে ছুটেছি, না পেলেও অন্তত তাদের মাঝে চারিত্রিক দৃঢ়তা খুঁজে পেয়েছিলাম!
আমার মিষ্টি, সুজান! ওটা দুঃস্বপ্ন ছিল না, যা দেখেছ সবই ছিল সত্যি।
হ্যাঁ, মনে পড়েছে। তারপর এমনভাবে ব্যারনের দিকে তাকাল যেন তাকে প্রথমবারের মতো দেখছে! বলল, মাই লর্ড, আপনার কাছে অনেক বাকোয়াজ করেছি। আশা করি আমার স্বামীকে সেসব কিছু বলেননি।
কেন বলব না, বলতে পারেন?
একজন সতী নারীর জানা উচিত, নিজেকে কীভাবে রক্ষা করতে হয়। সেজন্য তার স্বামীকে এতসব কিছু বলে বিব্রত করারও কোন মানে হয় না।
আমি আমার বন্ধুকে সবই জানিয়েছি।
আপনি কি এ-ও বলেছেন, যে সাপারের পুরোটা সময় ওই লোকটা থেকে থেকে আমার হাঁটু স্পর্শ করছিল?
অবশ্যই বলেছি।
ইতর! বেইলিফ বকে উঠল।
তারপর ন্যাপকিন তুলতে গিয়ে টেবিলের নিচে তার হাত পেয়েছিলাম?
আমার বন্ধুর কাছ থেকে আমি কিছুই লুকোইনি।
বদমাশ! চেঁচিয়ে উঠল বেইলিফ।
ঘোরগ্রস্ত ম্যাগলোয়ার চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় আমাকে জোর করে চুমু খেয়েছিল সে, এটাও বলেছেন?
আমার মতে একজন স্বামীর সব সত্য জানা উচিত।
চরিত্রহীন! আবারও চেঁচিয়ে উঠল বেইলিফ।
আপনি কী এটাও বলেছেন, ঘরে আসার পর বাতাসে মোম নিভে গেল। তখন পর্দা নড়ে ওঠায় আমি ভেবেছিলাম লোকটা আমার ঘরে ঢুকেছে। তাই সাহায্যের জন্য আপনাকে ডেকেছিলাম?
না, বলতে যাচ্ছিলাম। তখনই আপনি হচিটা দিলেন।
শয়তান! গর্জে উঠে টেবিলের ওপর রাখা ব্যারনের তলোয়ারটা নিয়ে স্ত্রীর নির্দেশ করা জানালার দিকে ছুটল বেইলিফ। ও যদি পর্দার আড়ালে থাকে, আমি ওকে দুটুকরো করে ফেলব। বলে বার কয়েক তলোয়ার চালাল সে।
তলোয়ারের আঘাতে পর্দা সরে যেতে থিবন্টের ওপর চোখ পড়ল বেইলিফের। সে আশা করেনি পর্দার আড়ালে কেউ থাকবে। একটু আগে হম্বিতম্বি করলেও ওকে দেখে পিলে চমকে গেল বেইলিফের। হাত থেকে শব্দ করে পড়ে গেল তলোয়ারটা। ঘরের বাকি দুজনও চমকে উঠল থিবন্টকে দেখে। তাদের বলা গল্পটা সত্যের এত কাছে ছিল ওরা ধারণা করেনি। ব্যারনও চিনতে পারল থিবল্টকে।
ওর কাছে গিয়ে ব্যারন বলল, নিকুচি করি। আমার ভুল না হলে এ সেই শুয়োর-মারা বর্শাওয়ালা লোকটা।
শুয়োর-মারা বর্শাওয়ালা লোক? বেইলিফের দাঁতের সাথে দাঁত বাড়ি খাচ্ছে। এখন অবশ্য মনে হয় না ওর কাছে কোন বর্শা আছে। বলে দৌড়ে গিয়ে স্ত্রীর পেছনে লুকিয়ে পড়ল খর্বাকায় ভীতু লোকটা।
ভয় পাবেন না। বর্শা নিয়ে আসলেও কথা দিচ্ছি ওর হাতে বেশিক্ষণ থাকত না ওটা। তো, জনাব চোরাশিকারি, থিবল্টকে উদ্দেশ্য করে বলল ব্যারন, ডিউকের এলাকায় শিকার করেই ক্ষান্ত হওনি, এখন ম্যাগলোয়ার এলাকায়ও হানা দিয়েছ?
চোরাশিকারি? উনি ভূ-স্বামী আর অনেক খামারের মালিক নন? শত শত একর জমি থেকে উনার আয় হয় না?
কী? আপনাকে এই সব আজগুবি গল্প শুনিয়েছে ও? মুখ আছে বলতে হবে ওর। ভূ-স্বামী! হুহ! খাবার জোটে না। সামান্য একজন স্যাবট-কারিগর ও। আমার লোকেরা যেসব কাঠের জুতো পরে, ওগুলোই ওর সম্পত্তি। ওগুলোই বানায় ও!
ঘৃণায় মুখ কুঁচকে ফেলল মাদাম ম্যাগলোয়া। বেইলিফের মুখও লাল হয়ে গেল। ক্ষুদে ভালমানুষটা দাম্ভিক বা উদ্ধত হয়তো নয়, কিন্তু প্রতারণা সে পছন্দ করে না। একজন জুতোর কারিগরের সাথে ওয়াইন পান করতে তার আপত্তি নেই, কিন্তু একজন মিথ্যাবাদী এবং বিশ্বাসঘাতকের সাথে আছে।
এতসব অপমানের মুখেও হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে থিবল্ট। ওর কথা বলার পালা এসেছে এবার। ও এখন প্রতিশোধ নিতে পারবে। ওর চেয়ে উঁচু অবস্থানের লোকের সাথে কথা বলায় এখন অভ্যস্ত সে। বলতে শুরু করল ও, শয়তান আর তার শিং-এর দিব্যি, মাই লর্ড, আমি যদি আপনার মতো অন্যকে নিয়ে গল্প বানাতে পারতাম, এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে এখন কী বলতে হবে, সে নিয়ে আমাকে কোন চিন্তাই করতে হত না।
এই কথার ভেতরের আক্রমণটুকু ভেযের লর্ড আর বেইলিফের স্ত্রী দুজনেই টের পেল। জ্বলন্ত চোখে থিবল্টের দিকে তাকিয়ে রইল দুজনে।
নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে মাদাম বলল, ও নিশ্চয়ই এখন আমার নামে বানিয়ে বানিয়ে মুখরোচক কোন গল্প বলবে।
আত্মসংযমের সাথে থিবল্ট বলল, ভয়ের কোন কারণ নেই, মাদাম, আমাকে বানিয়ে কিছুই বলতে হবে না।
বদমাশ! দেখেছ, আমি ঠিকই বলেছি। আমার নামে ও আজেবাজে কথা বলবে। আমি ওর আহ্বানে সাড়া দেইনি, তার শোধ নেবে।
এই ফাঁকে ব্যারন তলোয়ার নিয়ে এগোচ্ছিল। মাঝপথে বেইলিফ বাধা দিল। তাতে থিবল্টের ভালই হলো। নয়তো শেষ মুহূর্তে ওকে আরও একটা ইচ্ছা খরচ করতে হত।