বিড়বিড় করল থিবল্ট, লোকটা কি আসলে উজবুক, না চালাক…হবে কিছু একটা! দেখা যাক ব্যারন কীভাবে বেরোয় এই পরিস্থিতি থেকে।
একটা ভেজা কাপড় দিয়ে স্ত্রীর কপাল মুছতে মুছতে প্রশ্ন করল ম্যাগলোয়া, যা-ই হোক। আমার জানতে ইচ্ছা করছে, কীভাবে আমার স্ত্রীর এই অবস্থা হলো?
বলছি। এক বন্ধুর সাথে রাতের খাবার খেয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়ল, একটা জানালায় এক মহিলা ইশারায় সাহায্যের আবেদন করছেন।
ঈশ্বর!
তারপর আমার মনে পড়ল যে এটা আপনার বাড়ি। এমন কী হতে পারে যে মাদাম ম্যাগলোয়া কোন বিপদে পড়েছেন?
আপনি ভাল মানুষ, মাই লর্ড। আশা করি সত্যি সত্যি তেমন কোন বিপদ হয়নি।
ঠিক তার উল্টো।
উল্টো? কী বলছেন?
শুনুন।
মাই লর্ড, আমাকে আপনি ভয় পাইয়ে দিচ্ছেন। আপনি বলতে চাইছেন, সাহায্যের প্রয়োজন ছিল, অথচ আমার স্ত্রী আমাকে ডাকেনি?
প্রথমে আপনাকেই ডাকবেন ভেবেছিলেন। পরে চিন্তা করলেন, এখানে আসলে আপনিও বিপদে পড়তে পারেন। এমনকি আপনার জীবন পর্যন্ত বিপন্ন হতে পারে!
ফ্যাকাসে হয়ে গেল বেইলিফ, আমার জীবন, আপনার ভাষ্যমতে বিপন্ন?
এখন যেহেতু আমি আছি তাই আর বিপদ নেই।
দয়া করে বলুন, মাই লর্ড। স্ত্রীকেই জিজ্ঞেস করতাম, কিন্তু দেখতেই পাচ্ছেন, সে জবাব দেয়ার মতো অবস্থায় নেই।
উনার বদলে উত্তর দেয়ার জন্য আমিও কি নেই?
বলুন, মাই লর্ড, বলুন, আমি শুনছি।
ব্যারনও মাথা নেড়ে আবার বলতে শুরু করল, আমি দৌড়ে তার কাছে গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম, মাদাম ম্যাগলোয়া, কী হয়েছে, আপনি এমন করছেন কেন? উনি উত্তর দিলেন, মাই লর্ড, গতকাল এবং আজ, পর পর দুদিন এক লোকের আতিথেয়তা করছেন আমার স্বামী। লোকটা সন্দেহজনক। আমার ম্যাগলোয়ার বন্ধু সেজে আছে। কিন্তু সে আমার সাথে প্রেম করার চেষ্টা করছে…
ও আপনাকে বলেছে এই কথা?
হুবহু এই কথাই বলেছেন। আমরা কী বলছি সেটা আশা করি উনি শুনতে পাচ্ছেন না।
কীভাবে শুনবে? অজ্ঞান হয়ে আছে তো।
ঠিক আছে। জ্ঞান ফিরলে জিজ্ঞেস করবেন নাহয়। যদি আমার কথা না মেলে, আমাকে আপনি যা খুশি বলতে পারেন।
এসব লোক খুবই ভয়ঙ্কর দেখছি!
সাপের মতো। আরও শুনতে চান?
অবশ্যই!
আমি মাদামকে জিজ্ঞেস করলাম, কিন্তু আপনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন সে আপনার সাথে প্রেম করার চেষ্টা করছে?
হ্যাঁ, বেইলিফ বলল। কীভাবে বুঝল? আমি নিজেই তো কিছু টের পাইনি।
টেবিলের নিচে তাকালেই বুঝতে পারতেন। টেবিলের ওপর আর নিচ, দুজায়গায় তো একসাথে তাকানো সম্ভব না।
সত্যি কথা বলতে কি, মাই লর্ড, আমরা চমৎকার সাপার করেছি। খালি একবার চিন্তা করুন, কচি বুনো-শুয়োরের কাটলেট…
আমার গল্পের সাথে আপনার স্ত্রীর জীবন এবং সম্মান জড়িত! সেই গল্প শোনার বদলে আপনি কী এখন আমাকে সাপারের গল্প শোনাবেন?
সত্যিই তো, বেচারি সুজান। ওর হাতটা বের করতে সাহায্য করবেন? তালুটা ঘষে দিতাম। স্ত্রীর হাত ঘষতে ঘষতে গল্পের বাকিটা শুনতে চাইল ম্যাগলোয়া।
কোথায় থেমেছিলাম?
বলছিলেন, বেচারি সুজান, যাকে সতী-সাধ্বী সুজানও বলা চলে…
তা তো বলতেই পারেন!
অবশ্যই বলি! বেচারি সুজান বুঝতে পেরেছিল…
ওহ হ্যাঁ, আপনার অতিথি, প্যারিসের মতো আপনাকে মেনেলাউস১০ বানাবার চেষ্টা করছিল। মনে আছে, কখন আপনার স্ত্রী টেবিল ছেড়ে উঠে যান?
ঠিক মনে নেই… তখন আমি কিছুটা…
ঠিক আছে। তিনি টেবিল ছেড়ে উঠে বলেন যে বিছানায় যাওয়ার সময় হয়েছে।
আমি সর্বশেষ এগারোটার ঘণ্টা বাজতে শুনেছি।
তখনই আড্ডাটা ভাঙে।
আমি বোধহয় টেবিল ছাড়িনি তখনও।
না, মাদাম আর আপনার অতিথি ছেড়েছিলেন। মাদাম সুজান পেরিনকে বলেন অতিথিকে ঘরে নিয়ে যেতে। তারপর বিশ্বস্ত স্ত্রীর মতো আপনাকে বিছানায় শুইয়ে নিজের ঘরে চলে আসেন।
আবেগ ভর করল বেইলিফের কণ্ঠে, আমার লক্ষ্মী সুজান!
ঘরে একা হঠাৎই ভয় পেয়ে যান মাদাম সুজান। জানালাটা খুলে দেন। তিনি। বাতাস এসে মোমটা নিভিয়ে দেয়। হঠাৎ একটা আতঙ্ক পেয়ে বসলে কেমন লাগে, নিশ্চয়ই জানেন আপনি?
হ্যাঁ, আমি নিজেও একটু ভীতু।
উনাকেও হঠাৎ আতঙ্ক পেয়ে বসে। আপনাকে ডাকার সাহস পেলেন না। প্রথম যে ঘোড়সওয়ারকে দেখলেন, ভাগ্যক্রমে সেটা আমি ছিলাম। সাহায্যের জন্য ডেকে বসলেন।
আসলেই সৌভাগ্য, মাই লর্ড।
তাই না? আমি দৌড়ে এসে আমার পরিচয় দিলাম। উনি বললেন, উপরে আসুন, মাই লর্ড, উপরে আসুন! তাড়াতাড়ি, আমি নিশ্চিত আমার ঘরে কেউ ঢুকেছে।
আপনিও নিশ্চয়ই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন।
একদম না! সদর দরজার ঘন্টা বাজিয়ে ঘরে ঢুকতে গেলে সময়ের অপচয় হবে ভেবে লেভিলিকে আমার ঘোড়াটা রাখতে দিলাম। ভেতরের লোকটা যাতে পালাতে না পারে, সেজন্য বারান্দা দিয়ে উঠে ভিতরে ঢুকে জানালা বন্ধ করে দিলাম। ঠিক তখনই দরজা খোলার শব্দে আর সহ্য করতে না পেরে মাদাম অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন।
মাই লর্ড! কী ভয়ঙ্কর সব কথা আপনি আমাকে বললেন।
আমি কোন কিছুই বানিয়ে বলিনি। মাদাম উঠলে আপনি উনাকেই জিজ্ঞেস করতে পারেন।
দেখুন, মাই লর্ড, ও একটু একটু নড়ছে। খুশির স্বরে বলে উঠল বেইলিফ।
তাই তো দেখছি! একটা পালক পুড়িয়ে নাকের নিচে ধরুন।
পালক?
হ্যাঁ, এসব ক্ষেত্রে খুব কাজের। নাকের নিচে ধরুন, সাথে সাথে জ্ঞান ফিরবে।
এখন পালক কোথায় পাব?