মঁসিয়ে ম্যাগলোয়া যেন রাতে আর আমাদের বিরক্ত করতে না আসেন তার ব্যবস্থা করছিলাম।
হৃদয়েশ্বরী, সবদিকে তোমার খেয়াল থাকে।
কী যে বলেন না, মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কথাটা শেষ করতে পারল না। সুজান। শব্দ শুনে কী কারণে তার মুখ বন্ধ হয়েছে বুঝতে বেগ পেতে হলো না থিবল্টের। আবারও ওকে হতাশ হতে হচ্ছে। কাশির শব্দ শুনে ওর চিন্তায় ছেদ পড়ল।
কাশি থামার পর লোকটা বলল, জানালাটা মনে হয় বন্ধ করা উচিত।
ওহ, মাই লর্ড, আগেই বন্ধ করা উচিত ছিল। মাদাম উঠে গিয়ে জানালা বন্ধ করে ভাল মতো পর্দা টেনে দিল। আগন্তুক এরপর একটা চেয়ার নিয়ে ফায়ারপ্লেসের সামনে গিয়ে বসল। অনেকক্ষণ ঠাণ্ডার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকার পর অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। সুজান তার চেয়ারের পেছনে হাত রেখে দাঁড়াল। দেখে বাড়তে লাগল থিবল্টের রাগ। শরীর কিছুটা গরম হওয়ার পর আগম্ভক জিজ্ঞেস করল, তা এই লোকটা, মানে তোমাদের অতিথিটা কে?
মাই লর্ড, আমার তো ধারণা আপনি ওকে খুব ভাল করেই চেনেন।
কীবলতে চাইছ সেই রাতের ওই মাতালটা?
সে-ই।
ওকে যদি হাতে আরেকবার পাই না…
সঙ্গীতের মতো মধুর সুরে সুজান উত্তর দিল, এমন অশুভ চিন্তা মনে ঠাই দেবেন না। পবিত্র ধর্মের উপদেশ অনুসারে শত্রুকে ক্ষমা করতে শেখা উচিত আমাদের।
আরও একটা ধর্ম অবশ্য আছে, তুমি সেই ধর্মের দেবী আর আমি সামান্য এক অনুসারী। ওই বদমাশটার ক্ষতির চিন্তা করা অবশ্য আমার উচিত না। ওর অন্যায়ভাবে করা আঘাতে আমি জ্ঞান হারাই। আমাকে অজ্ঞান দেখে তুমি তোমার স্বামীকে ডেকে তুললে। সে এসে আমাকে তোমার জানালার নিচে আবিষ্কার করে ভেতরে নিয়ে গেল। তুমি দয়াপরবশ হয়ে আমাকে থাকতে দিতে রাজি হলে। সেভাবে চিন্তা করলে ওর কারণেই তোমার বাড়িতে প্রবেশের আমার এতদিনের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। তারপরও, ব্যাটাকে যদি আমার চাবুকের নাগালে পাই, সেটা ওর জন্য মোটেই সুখকর হবে না।
দেখা যাচ্ছে আমার ইচ্ছা আবারও একজনের সুবিধা করে দিয়েছে। নেকড়ে সাহেব, আমার এখনও অনেক কিছু শেখার বাকি আছে দেখা যাচ্ছে। ভবিষ্যতে আমি এমনভাবে ভেবেচিন্তে চাইব, যাতে ছাত্রই তখন শিক্ষক হয়ে উঠবে। থিবল্ট মনে করার চেষ্টা করল, কিন্তু কণ্ঠটা কার, খুব চেনা চেনা লাগছে?
একটা কথা বলতে পারি, যেটা শুনলে বেচারার উপর আপনার রাগ আরও বেড়ে যাবে!
কী সেই কথা?
আপনার ভাষায় সেই অকর্মার টেকি, আমার সাথে প্রেম করতে চাইছে।
ফুঃ!
সুজান হাসতে হাসতে বলল, সত্যি কথা।
কী! কোথায়, ওই বজ্জাতটা কোথায়? বিলজেবাবের দিব্যি! ওকে আমার কুকুরের মুখে ছুঁড়ে দেব! বলতে বলতে উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে গেল লোকটা।
এবং এই কথা শোনার সাথে সাথেই লোকটাকে চিনে ফেলল থিবল্ট। আহ, লর্ড ব্যারন, আপনিই তাহলে এসেছেন?
ওকে নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন দরকার নেই, মাই লর্ড। প্রেমিকের কাঁধে হাত রেখে আবার বসিয়ে দিল সুজান। আপনিই একমাত্র মানুষ যাকে আমি ভালবাসি। আর তা যদি নাও হত, অমন কপালের মাঝে লাল চুলওয়ালা লোককে ভালবাসতে আমার বয়েই গেছে! ডিনারের কথা মনে পড়ে যাওয়ায় আবার হাসতে শুরু করল সে।
বেইলিফের স্ত্রীর প্রতি একটা ভয়ঙ্কর রাগ জমে উঠল থিবল্টের মনে।
বিশ্বাসঘাতিনী! এই মুহূর্তে এই ঘরে তোর ভাল, সৎ, দয়ালু স্বামীর প্রবেশের বিনিময়ে বিসর্জন দিতে রাজি নই-এমন কিছু নেই আমার।
থিবল্ট ইচ্ছাটা পোষণ করার সাথে সাথেই খুলে গেল ঘরের দরজা। হাতে একটা মোমবাতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল মঁসিয়ে ম্যাগলোয়া। মাথার লম্বা টুপিটার কারণে তাকে পাঁচ ফুটের মতো লম্বা মনে হচ্ছে।
আহহা! চমৎকার! মাদাম ম্যাগলোয়া, এবার হাসার পালা আমার, নিচু স্বরে বলল থিবল্ট।
ত্রয়োদশ অধ্যায় – মুখরা অপেক্ষা জিভ সংবরণ করে চলা নারীর ভাষ্য যে অনেক বেশি পরিষ্কার, তার একটা উদাহরণ
সুজান ব্যারনকে ফিসফিস করে কী বলেছে খেয়াল করতে পারেনি থিবল্ট। শুধু দেখল টলে উঠে অজ্ঞানের মতো করে ব্যারনের উপর পড়ে গেছে মাদাম।
ম্যাগলোয়া মোম হাতে বিস্মিতভাবে দৃশ্যটা দেখল। ব্যারনও বেইলিফের মধ্যে বিস্ময় ছাড়া আর কিছু দেখতে না পেয়ে স্বাভাবিক সুরে প্রশ্ন করল, আরে, ম্যাগলোয়া, কী অবস্থা আপনার?
আপনি নাকি, মাই লর্ড? বেইলি চোখ বড় বড় করে পাল্টা প্রশ্ন করল।
আপনাকে এখানে দেখতে পাব জানলে এই পোশাকে আসতাম না।
আরে ছাড়ুন!
না, না, মাই লর্ড। অনুমতি দিন জামাটা পাল্টে আসি।
ব্যস্ত হওয়ার কোন দরকার নেই। মাঝরাতে বন্ধুর সাথে যে কোন পোশাকেই দেখা করা যায়। তাছাড়া এখন আরও জরুরি বিষয়ে আমাদের মনোযোগ দেয়া উচিত।
কী বিষয়ে, মাই লর্ড?
মাদাম ম্যাগলোয়া অজ্ঞান হয়ে গেছেন। ওনার জ্ঞান ফেরানো দরকার।
সুজান অজ্ঞান হয়ে গেছে। ঈশ্বর। মোমটা চিমনির উপর নামিয়ে রাখল বেইলিফ। কীভাবে হলো?
দাঁড়ান, দাঁড়ান, মঁসিয়ে ম্যাগলোয়া। আগে মাদামকে একটু ভাল ভাবে আরামকেদারায় বসিয়ে দিই।
ঠিক বলেছেন। সুজানকে আগে ভালভাবে শুইয়ে দিই। বেচারি সুজান। কিন্তু এমনটা হলো কীভাবে?
এত রাতে আমাকে আপনার বাড়িতে আবিষ্কার করে দয়া করে খারাপ কিছু ভাববেন না।
প্রশ্নই আসে না, মাই লর্ড। আপনার বন্ধুত্ব পেয়ে আমরা গর্বিত। আর মাদাম ম্যাগলোয়ার বিশ্বস্ততার ওপর আমার পরিপূর্ণ আস্থা আছে। যে কোন সময় আপনার উপস্থিতি আমাদের বাড়িকে সম্মানিতই করবে।