দাঁড়িয়ে পড়ল থিবল্ট, কোথায়? কীভাবে? তোমার চুলে। বলেই জরুরি ভঙ্গিতে পানি নিয়ে আগুন নেভাতে গেল সে। হাত তুলে নিষেধ করে বসে পড়ল থিবল্ট। বুঝে ফেলেছে কী ঘটেছে। গত দুদিনের দৌড়াদৌড়িতে ভুলেই গিয়েছিল আজ চুল ঢেকে আসার কথা। তাছাড়া বিগত দিনগুলোতে ছোটখাটো অনেক ইচ্ছাও পূরণ করেছে। তাতে লাল চুলের সংখ্যা আরও বেড়েছে ওর। অস্বস্তি ঢাকার চেষ্টা করল থিবল্ট। আমাকে তো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন!
কিন্তু, কিন্তু… এখনও কিছুটা ভয় মেশানো দৃষ্টিতে চুলের দিকে তাকিয়ে আছে বেইলিফ।
এটা কিছু না। চুলের এই রং দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। একবার গরম কয়লা ভর্তি একটা পাত্রের কারণে মায়ের চুলে প্রায় আগুন লেগে গিয়েছিল। প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিল মা। আমার জন্মের আগের কথা। সে কারণেই রংটা এমন হয়েছে।
হাসি থামাবার জন্য পানি খেল মাদাম সুজান। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, আজই প্রথম এটা চোখে পড়ল।
তাই? বলার মতো কোন উত্তর খুঁজে পেল না থিবল্ট।
আগেরদিন আমি আপনাকে ভালমতোই লক্ষ করেছি। সেদিন কিন্তু আপনার চুল কালোই ছিল।
এই কথায় থিবল্টের আশার পালে হাওয়া লাগল।
আহ! মাদাম! আপনি নিশ্চয়ই এই প্রবাদগুলো শুনেছেন-রক্তিম চুল, উষ্ণ হৃদয়, আর এটা, কিছু মানুষ বাজে জুতোর মতো-বাইরে সুন্দর, ভেতরে ক্ষত।
জুতোর উদ্ধৃতি শুনে মুখ কোঁচকাল মাদাম সুজান। কিন্তু তার স্বামী, স্ত্রীর সাথে একমত হতে পারল না।
থিবল্ট একেবারে খাঁটি কথা বলেছে।
এরপর থিবল্টের চুল নিয়ে আর কোন কথা হলো না। তবে মাদাম সুজানের চোখ বারবার ওর চুলের দিকে চলে যাচ্ছে। বিষয়টা থিবকে অস্বস্তিতে ফেলে দিল। হাত দিয়ে চুল ঠিক করার প্রয়াস পেল ও। কিন্তু চুলগুলো তো আর মানুষের চুল নেই। ঘোড়ার চুলের মতো খাড়া হয়ে গেছে। কিছুতেই ঠিক করা যাচ্ছে না। তবে আশার কথা, হাঁটুর ব্যাপারে মাদাম সুজান কোন অভিযোগ করেনি। এতে করে থিবল্টের ধারণা হলো, কিছুটা অগ্রসর হওয়া গেছে।
অনেক রাত পর্যন্ত ওরা বসে ছিল। এর মাঝে বেশ কয়েকবার সুজান অন্য ঘরগুলোয় ঘুরে এসেছে। সেই ফাঁকে ম্যাগলোয়াও সেলারে ঢু মেরে এসেছে।
গোপনে আনা অনেক বোতল জমে গেল বেইলিফের ওভারকোটের ভেতরে, পুরাদস্তুর নেশার ঘোরে ডুবে আছে সে। মাদাম সুজানকে প্রেম নিবেদনের জন্য এটাই উপযুক্ত সময়। থিবল্ট রাতের মতো ওঠার ইচ্ছা প্রকাশ করল। সে রাতের পানাহার পর্বের ওখানেই যবনিকা পড়ল। পেরিন থিবকে নিয়ে গেল তার ঘরে। ওকে জিজ্ঞেস করে থিবল্ট জেনে নিল কার ঘর কোনটা।
মাদাম সুজান তার স্বামীকে ঘরে যেতে সাহায্য করছে। এদিকে পা টিপে টিপে নিজের ঘর থেকে বেরোল থিবল্ট। মাদাম সুজানের ঘরের দরজার কাছে এসে কান পাতল। ভেতরে কোন শব্দ শোনা গেল না। চাবিটা দরজার তালার সাথেই লাগানো। এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে তারপর চাবি ঘোরাল ও।
ঘরটা অন্ধকার। তবে সেটা কোন সমস্যা না-নেকড়েদের সাথে থেকে থেকে থিবল্ট এখন অন্ধকারেও দেখতে পায়। ঘরের চারদিকে চোখ বুলিয়ে কোথায় কী আছে দেখে নিল ও। তারপর সবচেয়ে দূরের জানালার পর্দার আড়ালে গিয়ে দাঁড়াল। ওর হৃদপিণ্ড ধুকধুক করছে। সুজান ঘরে ঢুকল। দরজার আওয়াজটা ক্রয়োলের সেই মিলের চাকার অশুভ আওয়াজের কথা মনে করিয়ে দিল থিবল্টকে। ওর প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল-মাদাম সুজান ঘরে ঢোকা মাত্র বেরিয়ে আসা। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, তাতে সুজান চমকে গিয়ে চিৎকার করে উঠলে লোক জানাজানি হয়ে যাবে। তারচেয়ে সুজান ঘুমিয়ে পড়লে নাহয় বেরোনো যাবে।
ও সুজানকে ভালবেসে ফেলেছে-এই কথাটা নিজেকে বোঝাতে গিয়ে সত্যি সত্যিই বিশ্বাস করে ফেলেছে থিবল্ট। কালো নেকড়ের ছত্রছায়ায় থাকলেও, নতুন প্রেমিকের মতোই নার্ভাস বোধ করছে ও। সুজান আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল, তারপর শুরু করল সাজতে। মনে হচ্ছে কোন একটা ভোজ বা উৎসবে যাবে। খুব যত্নের সাথে কাপড় বাছাই করছে সে, গলায়-হাতে গহনা পরছে, চুল ঠিক করছে।
এসবের মানে খুঁজে পেল না থিবল্ট। জানালায় শব্দ হতে চমকে উঠল ও। সুজানও আলো নিভিয়ে জানালায় উঁকি দিল। ফিসফিস করে কথা শোনা গেল কিন্তু কিছু বোঝা গেল না। পর্দা একটু সরাতে দেখতে পেল কেউ একজন জানালা বেয়ে উঠে আসছে।
আগের রাতের ঘটনা মনে পড়ে গেল থিবল্টের। এই জানালা থেকেই সম্ভবত ওর দুকাধকে মই বানিয়ে নেমেছিল লোকটা। তাই যদি হয়ে থাকে, তারমানে সে মাদাম ম্যাগলোয়ার পরিচিত। এখন যে উঠছে, সম্ভবত সেই একই লোক।
সুজান হাত বাড়িয়ে আগন্তুককে উঠতে সাহায্য করল। বিশালদেহী একটা লোক আসবাবপত্র কাঁপিয়ে লাফ দিয়ে এসে ঢুকল ঘরর ভেতর।
সাবধানে, মাই লর্ড, সুজানের গলা প্রায় শোনাই যাচ্ছে না। আমার স্বামী ঘুমাচ্ছে। এত শব্দ হলে জেগে যাবে ও।
কিন্তু সুন্দরী, আমি তো আর পাখির মতো হালকা নই। কণ্ঠ শুনে থিবল্ট বুঝল এ আগের রাতের সেই নোকটাই। অবশ্য নিচে যখন অপেক্ষা করছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল পাখির মতো ডানা থাকলে ভাল হত, উড়ে চলে আসতে পারতাম।
আমারও, মাই লর্ড, আপনাকে শীতের রাতে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখতে খুবই খারাপ লাগছিল। কিন্তু কী করব, আমাদের অতিথি এই আধঘণ্টা আগে ঘুমোতে গেল।
আর গত আধঘণ্টা কী করেছ?