কীভাবে করেছিস?
প্রথমে এক বালতি মদ খেয়ে বিছানায় গেলাম!
তা নিদানটা কে দিল? মঁসিয়ে লুকোস? মঁসিয়ে লুকোস গ্রামের নামকরা ডাক্তার।
মঁসিয়ে লুকোস? সে মন্ত্র-তন্ত্রের কী জানে? না না, সে না।
তাহলে?
লোপো-এর রাখাল।
তাই বলে এক বালতি মদ? তোর তো বেহেড মাতাল হয়ে থাকার কথা রে!
অর্ধেকটা রাখালই খেয়েছিল।
আচ্ছা। এখন বুঝতে পারছি, ব্যাটা কেন এই নিদান দিয়েছিল। তা এক বালতি মদে কাজ হলো?
নাহ্, কোন কাজ হয়নি। বরাবরের মতোই স্বপ্নে হানা দিয়ে গেছে হতভাগা বুড়িটা।
তারপর? এক বালতি মদেই তোর চেষ্টা নিশ্চয়ই শেষ হয়নি?
চোরা পশু ধরার সময় যা করি, তাই করলাম।
মোকেটের নিজস্ব কিছু শব্দের ব্যবহার আছে। ওকে দিয়ে কোনভাবেই বুনো পশু বলানো যায়নি। যখনই বাবা বুনো পশুর কথা বলত, ওর জবাব ছিল, জি, জেনারেল। চোরা পশু। বুঝতে পেরেছি।
বাবা একবার বলেই বসলেন, তুই তাহলে চোরা পশুই বলবি?
জি, জেনারেল। তবে একগুয়েমির কারণে নয়।
তাহলে কেন?
কারণ, জেনারেল, কিছু মনে করবেন না, কিন্তু আপনি একটু ভুল করছেন।
ভুল? আমি? কীভাবে?
করেছো।
বুনো পশু নয়, আপনার বলা উচিত চোরা পশু।
তা চোরা পশুটা কী?
এসব পশু শুধু রাতে বেরোয়। বিড়ালের মতো কবুতর ধরে, শিয়ালের মতো মুরগী চুরি করে, নেকড়ের মতো ভেড়া মারে। মানে-এসব পশু খুব ধূর্ত, ধোকা দিতে ওস্তাদ। সোজা কথায় চোরা পশু।
এমন যুক্তিপূর্ণ বক্তব্যের পর অবশ্য আর কিছু বলার থাকে না। বাবাও তাই চুপ মেরে গেছিলেন। আর মোকেটও জিতে গেছে ভেবে চোরাতেই আটকে রইল, বুনোতে আর ফিরল না।
চোরা পশুর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বর্ণনার মাঝপথে বাধা দিতে হলো। বাবা ও মোকেটের অবশ্য এই ব্যাখ্যার দরকার ছিল না, তাই তাদের কথা চলছিল বিনা বাধায়।
৬
তা মোকেট, এই পশুগুলোকে ধরতে তুই কী করিস? বাবার জিজ্ঞাসা।
ফাঁত পাতি জেনারেল। ফাঁদকে সবসময়ই ফাঁত বলে মোকেট।
তুই কি বলতে চাইছিস মাদার ডুরান্ডের জন্যও তুই ফাঁদ পেতেছিস? বাবা ফাঁদই বলেছিলেন; কিন্তু কেউ ভিন্ন উচ্চারণ করলে মোকেটের সেটা পছন্দ হয় না।
মাদার ডুরান্ডের জন্য আমি আসলে ফাঁত পেতেছি।
তা ফাঁদটা কোথায় পেতেছিস? দরজার বাইরে? বোঝাই যাচ্ছে বাবা ছাড় দিতে রাজি আছেন।
আমার দরজার বাইরে? তাতে কী লাভ! প্রতিরাতে আমার ঘরে সে আসে জানি, কিন্তু কোন্ পথে আসে তা তো জানি না!
চিমনি দিয়ে?
আমার ঘরে কোন চিমনি নেই। তাছাড়া ওর উপস্থিতি টের পাওয়ার আগে ওকে দেখতে পাই না।
পরে কি দেখতে পাস?
হ্যাঁ। ঠিক যেমন এখন আপনাকে দেখছি।
কী করে সে?
বুঝতেই পারছেন, ভাল কিছু না। আমার বুকের উপর উঠে ধুপ ধাপ লাফায়!
তো তোর ফাঁদটা কোথায় পেতেছিলি?
ফাঁত, কেন, আমার পেটে!
তা কী ধরনের ফাঁত ব্যবহার করেছিস? বোধহয় বিরক্ত হয়েই ফাঁদ বলা বাদ দিলেন বাবা।
খুবই ভাল ফাঁত।
কী ছিল সেটা?
ধূসর নেকড়েটাকে ধরতে যে ফাঁতটা ব্যবহার করেছিলাম, মঁসিয়ে দিথু নেলের ভেড়াগুলোকে মারত যেটা।
ভাল হলো কোথায়? ধূসর নেকড়েটা তো তোর টোপকে খেয়ে ভেগেছিল।
জেনারেল, আপনি জানেন কেন ওটা ধরা পড়েনি।
না, জানি না।
কারণ ওটা আসলে ছিল স্যাবট কারিগর থিবস্টের কালো নেকড়ে।
ওটা থিবল্টের কালো নেকড়ে হতেই পারে না। তুই এই মাত্র নিজেই বললি মঁসিয়ে দিথু নেলের ভেড়া ধরে নিয়ে যেত একটা ধূসর নেকড়েটা!
এখন ধূসর; কিন্তু ত্রিশ বছর আগে থিবল্ট যখন বেঁচে ছিল, তখন ওটা কালোই ছিল। প্রমাণ দেখবেন? আমার চুলই দেখুন। ত্রিশ বছর আগে কালোই ছিল, কিন্তু এখন ডক্টরের মতো ধূসর হয়ে গেছে!
ডক্টর হচ্ছে একটা বিড়ালের নাম। কোটের মতো দেখতে লোমের কারণে এই নাম দেয়া হয়েছে।
থিবল্টকে নিয়ে তোর গল্পটা জানি। তোর দাবি অনুযায়ী, কালো নেকড়েটা যদি আসলেই শয়তান হয়ে থাকে, তাহলে তো রঙ পাল্টানোর কথা না।
অবশ্যই না, জেনারেল। সাদা হতে ওর একশো বছর সময় লাগে। তারপর এক মাঝরাতে ও আবার কয়লার মতো কালো হয়ে যায়!
আচ্ছা বাদ দে! একটা কথা বলি, পনেরো বছর বয়স হওয়ার আগ পর্যন্ত তুই আমার ছেলেকে এই গল্প বলবি না।
কেন, জেনারেল?
নেকড়ে সাদা হোক, কী ধূসর বা কালো; যতদিন নেকড়ের গল্প শুনে হাসার মতো বড় না হচ্ছে, ততদিন এসব উদ্ভট কথা দিয়ে ওর মাথা ভারি করার কোন দরকার নেই।
আপনার আদেশ শিরোধার্য, জেনারেল। ওনাকে আমি এসব কিছুই বলব না।
তারপর বল।
কোথায় ছিলাম, জেনারেল?
ফাঁত পেতেছিলি তোর পেটের উপর। দাবি করছিলি খুবই ভাল ফাঁত।
আসলেই ভাল ফাঁত ছিল, জেনারেল, বিশ্বাস করুন। দশ পাউন্ড ওজন হবে। দশ পাউন্ড বলছি কেন, চেনসহ পনেরো পাউন্ড হবে। চেনটা আমার কব্জিতে জড়িয়ে রেখেছিলাম।
এরপর রাতে কী হলো?
রাতে? আরও খারাপ হলো। অন্যদিন চামড়ার জুতো পরে আসত, সেদিন। আসল কাঠের জুতো পরে।
এভাবে আসে…?
প্রতিটা রাত। দেখতেই পাচ্ছেন, জেনারেল, আমি শুকিয়ে যাচ্ছি। সেকারণেই, আজ সকালে সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেললাম।
কী সিদ্ধান্ত নিলি?
পিস্তল নিয়ে ওর মুখোমুখি হব!
সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত। তা কখন ঘটনাটা ঘটবে?
আজ সন্ধ্যায়, না হলে কাল অবশ্যই, জেনারেল।
ঝামেলা হয়ে গেল! তোকে ভিলার-সেইলনে পাঠাব ভাবছিলাম।
সমস্যা নেই, জেনারেল। এখনই যেতে হবে?
হ্যাঁ, এখনই।