সন্ধ্যাটা নেহাত মন্দ যায়নি ওর। নিমন্ত্রণদাতার সাথে তাল মিলিয়ে মদ খেয়েছে। হাতাহাতিতে একজনকে পরাজিত করেছে। নিজেকেই বলল, থিবল্ট, স্বীকার করতেই হবে, তোমার বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। মাদাম সুজানের মতো কাউকেই তুমি এতদিন খুঁজছিলে। বেইলিফের স্ত্রী! স্ত্রী হিসেবে এমন মেয়ে আর পাওয়া যাবে না, এখন শুধু বেইলিফ মারা গেলেই হয়। স্ত্রী তোক বা প্রেমিকা, মেয়েটা পাশে থাকলে তোমাকে ভদ্রলোক না ভেবে কারও কোন উপায় থাকবে না। যদি কোন ভুল না করো, তাহলে সবই তোমার হবে। প্রথম পরিচয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছিল মেয়েটা। তবে বাড়ি যাবার পর কত ভাল ব্যবহারই না করল। সময়মতো ব্যবস্থা নিলেই আর কোন সমস্যা হবে না। যদিও বেচারা ম্যাগলোয়ার মৃত্যু আমি চাই না। চাওয়া উচিতও না। স্বাভাবিকভাবে মারা গেলে ঠিক আছে, কিন্তু হত্যার চিন্তা করাটা ঠিক হবে না। হাজার হোক ওয়াইন আর প্রচুর সুস্বাদু খাবার খাইয়েছে। তারপর একটা রহস্যময় হাসি হেসে যোগ করল, তবে যে হারে মদ আর খাবার খায় নোকটা, ওপারে যেতে বেশি সময় লাগার কথা না। কোন অসুস্থতা বা অস্বাভাবিক মৃত্যু চাই না আমি ওর। আর দশজনের ভাগ্যে যা জোটে, ওর ভাগ্যে যেন তার চেয়ে একটু বেশি জোটে!
খুশিতে হাত ঘষতে লাগল ও। হাঁটতে হাঁটতে কখন যে শহরে চলে এসেছে। টেরই পায়নি। এখন ব্যাপারটা লক্ষ করে ইশারায় নেকড়েগুলোকে চলে যেতে বলল। নেকড়ের পাহারায় কেন বা কীভাবে চলাফেরা করছে এর ব্যাখ্যা দিতে পারবে না। তাছাড়া কোন কুকুর দেখে ফেললে ডেকে ডেকে লোকের ঘুম ভাঙিয়ে ফেলবে।
বাড়ি ফিরে থিবল্ট দেখল, নেকড়েগুলো তখন বিদায় নিলেও, ঠিকই ওর ঘরের সামনে এসে অপেক্ষা করছে। ওগুলোকে পরের রাতে একই সময়ে আবার আসতে বলল ও।
বাড়ি পৌঁছতে যদিও রাত দুটা বেজেছিল, থিবল্টের ঘুম কিন্তু সকাল সকালই ভাঙল।
ম্যাগলোয়াকে যে জমির কথা বলেছে ও, সেটা আসলে অর্লিয়ন্সের ডিউকের। ও একটা পরিকল্পনা করছে। বেইলিফ শিকারের আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। সেকারণেই সকাল সকাল ওঠা। সারাদিন ঘুরে হরিণ, বুনো শুয়োর, খরগোশ এগুলোর ডেরা খুঁজে বের করল থিবল্ট। অন্ধকার নামলে নেকড়েদের মতো ডাক ছাড়ল ও। সেই ডাক শুনে বুড়ো, বাচ্চা সমেত নেকড়ের দল আরও ভারি হয়ে ছুটে এল।
থিবল্ট নিজেও ওদের সাথে শিকারে যাবে।
সে রাতে শিকার যেটা হলো তা ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন। সারারাত বন জুড়ে হুটোপুটির আওয়াজ শোনা গেল।
নেকড়েরা দলবদ্ধ হয়ে শিকার করছে আর থিবল্ট তাদের সাথে ছুরি হাতে কাটাকাটি করছে। হরিণ, শুয়োর, খরগোশ সবরকম শিকারই হলো সে রাতে।
থিবল্টের ঘরের সামনে শিকারের স্তূপ জমে গেল। সকালে একটা ঠেলা ভর্তি করে মাংস নিয়ে গেল ও বিক্রি করতে। আর সেরা মাংসগুলো রেখে দিল মাদাম ম্যাগলোয়ার জন্য।
নিজে না গিয়ে আগে উপহার পাঠানোর বুদ্ধিটা মাথায় এল ওর। এক লোককে টাকা দিল শিকারগুলো বেইলিফের বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার জন্য। একটা কাগজে লিখে দিল, মঁসিয়ে থিবল্টের পক্ষ থেকে। একটু পরেই ও রওনা হলো। যখন পৌঁছল ততক্ষণে শিকারের মাংস টেবিলে রাখা হয়েছে।
খুশির চোটে হাত মিলিয়ে বন্ধুকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করল বেইলিফ। যদিও উচ্চতার স্বল্পতা এবং স্বাস্থ্যের আধিক্যের কারণে ব্যর্থ হলো চেষ্টাটা। তারপর হয়তো ভাবল, যে কাজ সে নিজে পারেনি, সে কাজে মাদাম ম্যাগলোয়া হয়তো সাহায্য করতে পারবে! দরজার কাছে গিয়ে উচ্চস্বরে ডাকল, সুজান, সুজান!
স্বামীর ডাক শুনে উপর থেকে নেমে এল সুজান। এসে দেখল তার স্বামী ঘুরে ঘুরে টেবিলে রাখা শিকারগুলো দেখছে। দেখো, দেখো সুজান! হাতে তালি দিয়ে বলল ম্যাগলোয়া, দেখো থিবল্ট কী করেছে! ও এমন একজন লোক যে জানে কীভাবে কথা রাখতে হয়। সেদিন কথা দিয়েছিল আমাদের শিকারের মাংস খাওয়াবে। আজ গাড়ি ভর্তি করে পাঠিয়ে দিয়েছে। ওর সাথে হাত মেলাও, ধন্যবাদ জানাও ওকে।
স্বামীর কথা অনুযায়ী হাত মেলাল মাদাম। চুমু খাবার জন্য গাল এগিয়ে দিল। টেবিলের শিকারগুলোর দিকে তাকাল সে।
কোনটা দিয়ে কী রান্না হবে সে নির্দেশনা দিল ম্যাগলোয়া। স্বামীর এই উচ্ছ্বাসের তুলনায় স্ত্রীকে কিছুটা ম্লান মনে হলো। তবে মাদাম জানাতে ভুলল না-থিবল্টকে শুধু খেয়েই না, থেকেও যেতে হবে। এই আমন্ত্রণে থিবল্টের খুশি সহজেই অনুমেয়। যতক্ষণে মাদমোয়াজেল পেরিন উপাদেয় খাবার প্রস্তুত করছে, ততক্ষণ থিবল্ট একসাথে গলা ভেজানোর প্রস্তাব রাখল।
থিবল্ট রাধুনীর নামও মনে রেখেছে দেখে মাদাম ম্যাগলোয়া একটু অবাকই হলো। সেলার থেকে ফ্রান্সে কম পরিচিত ডাচ ভারমুথ আনা হলো গলা ভেজানোর জন্য।
তৈরি হবার জন্য নিজের ঘরে ফিরে গেল সুজান। ফেরার পর তার ওপর থেকে চোখ ফেরাতে কষ্ট হলো থিবল্টের। চোরা দৃষ্টি হানছে ও সুজানের দিকে, শুধু তাই নয়, দুঃসাহস দেখিয়ে টেবিলে তলা দিয়ে হাঁটুর গুতো দিচ্ছে মহিলার হাঁটুতে। সুজান এক সময় চোখ তুলে থিবল্টের দিকে তাকাল। তারপর হঠাই ফেটে পড়ল হাসিতে। বেইলিফও একটু চমকে উঠল। থিবল্টের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল হঠাৎ কী ঘটল। তারপর চেঁচিয়ে উঠে বলল, বন্ধু! আগুন লেগে গেছে তো!