তাহলে চুমু খাওয়ার জন্য অন্য কিছু দাও। অ্যানলেট ওর কপাল এগিয়ে দিল।
বাচ্চাদের মতো উচ্ছ্বাস আর খুশি নিয়ে অ্যানলেট বলল, এখন তাহলে আমাকে আংটিটা দেখতে দাও।
থিবল্ট আংটিটা খুলে মেয়েটার হাতে পরিয়ে দিতে গেল। ও খুবই অবাক হলো যখন আঙুল আঙটিতে ঢুকল না। এমনটা হতে পারে কে জানত?
অ্যানলেট হাসতে হাসতে বলল, মজার ব্যাপার তো!
একের পর এক আঙুলে চেষ্টা করতে থাকল থিবল্ট। আংটিটা যেন ক্রমেই ছোট থেকে ছোট হয়ে যাচ্ছে, কোন আঙুলেই পরানো যাচ্ছে না। যেন আংটিটা এই নিষ্পাপ হাতটাকে। ট করতে চায় না। থিবল্ট ঘামতে শুরু করল। ওর হাতের ভেতর অ্যানলেটের হাতও কাঁপতে শুরু করল। কোন আঙুলেই যখন ঢুকল না, তখন মেয়েটা কেঁদে ফেলল। এসবের মানে কী?
হতচ্ছাড়া আংটি, দূর হ পাথরের গায়ে সজোরে ওটা ছুঁড়ে-মারল থিবল্ট। কিন্তু বাড়ি খেতেই একটা স্ফুলিঙ্গ উঠল। ভাঙার বদলে ফিরে এসে থিবল্টের আঙুলে ঢুকে গেল আংটিটা! অ্যানলেট বিস্মিত চোখে ঘটনাটা দেখে থিবল্টের দিকে তাকাল। থিবল্ট স্বর স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল, কী দেখছ?
নিরুত্তর মেয়েটার চোখে ক্রমেই ভয়ের চিহ্ন বাড়তে লাগল। থিবল্ট বুঝে পাচ্ছে না মেয়েটা কী দেখছে। অবশেষে মেয়েটা ওর মাথার দিকে আঙুল তুলে বলল, মঁসিয়ে থিবল্ট, মঁসিয়ে থিবল্ট, ওখানে কী হয়েছে?
কোথায়?
ওখানে! ওখানে! মেয়েটার চেহারা ধীরে ধীরে ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে।
মাটিতে পা ঠুকে প্রশ্ন করল থিবল্ট, ওখানেটা কোথায়? কী দেখছ তুমি?
মেয়েটা ওর প্রশ্নের কোন উত্তর দিল না। দুহাতে মুখ ঢেকে একটা চিৎকার দিল। তারপর ঘুরে যত জোরে পারে দৌড়াতে শুরু করল।
হতভম্ব হয়ে জায়গায় জমে গেল থিবল্ট, পিছু ধাওয়া করার কথা ওর মাথাতেই এল না।
কী দেখে এত ভয় পেল অ্যানলেট? আঙুল দিয়ে কী দেখাচ্ছিল? প্রথম খুনির মতো ঈশ্বর কী ওকেও চিহ্নিত করে দিয়েছেন? আর করবেন না-ই বা কেন? ও ও তো কেইনের মতো একটা মানুষকেই খুন করেছে। পাদ্রী তো বলেছেন, প্রতিটি মানুষই পরস্পরের ভাই। থিবল্টের নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। ওর জানতেই হবে কী দেখে অ্যানলেট এত ভয় পেল। শহরে গিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে আসতে পারে। কিন্তু অ্যানলেট যা দেখেছে, আরও মানুষ তা দেখে ফেলবে। কয়েক পা দূরেই একটা স্বচ্ছ পানির ঝরনা আছে। ওখানে গেলেই নিজেকে পরিষ্কার দেখতে পাবে। ঝরনার পাশে গিয়ে হাটু গেড়ে বসল ও সেই একই মুখ, নাক, অন্যরকম কিছু নেই। কিন্তু কিছু তো একটা অবশ্যই আছে। কপালের ওপর উজ্জ্বল কিছু একটা চোখে পড়ল। আরেকটু ঝুঁকে দেখল লাল রঙের চুল। লাল, তবে সাধারণ কোন লাল নয়। রক্তের মতো, আগুনের শিখার মতো উজ্জ্বল! কীভাবে চুলটা ওখানে এল চিন্তা করার আগেই ওটা তুলে ফেলার চেষ্টা করল থিবল্ট। কিন্তু অনেকরকম ভাবে চেষ্টা করেও চুলটা ওঠাতে পারল না। শেষে ক্ষান্ত দিল। বরং ক্ৰয়োলেই যাওয়া যাক। একটা লাল চুলের কারণে বিয়েতে সমস্যা হবার কথা না। কিন্তু খুঁতখুতানি রয়েই গেল ওর মনে চুলটার চিন্তা মাথা থেকে তাড়াতে পারল না কিছুতেই। শেষ পর্যন্ত আর থাকতে না পেরে বাড়ির পথ ধরল থিবল্ট। ঘরে ফিরে একটা ধারাল যন্ত্র হাতে নিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চেষ্টা করল চুলটা কাটার। কিন্তু কোন লাভ হলো না! পরীক্ষা করে দেখল যন্ত্রের ধার ঠিক আছে, কিন্তু চুলটা কিছুতেই কাটা যাচ্ছে না। অনেকক্ষণ চেষ্টা করে হতাশ হয়ে একসময় হাল ছেড়ে দিল। বুঝতে পারছে, চুক্তি অনুযায়ী এই চুলটা এখন কালো নেকড়ের।
সপ্তম অধ্যায় – মিলের ছেলেটা
কাটতে ব্যর্থ হয়ে আশপাশের চুল দিয়ে লাল চুলটাকে ঢাকার চেষ্টা করল থিবল্ট। আশা করা যায় সবার দৃষ্টি অ্যানলেটের মতো তীক্ষ্ণ হবে না। চুলটা অন্যরা লক্ষ করবে না। অভিজাতদের দেখেছে চুলের রঙ টাকার জন্য পরচুলা ব্যবহার করতে। কিন্তু আইন ওকে সে অনুমতি দেয়নি। তাই চিরুনি দিয়ে সাবধানে আঁচড়ে চুলটা ঢাকার প্রয়াস পেল। তারপর আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী মিল মালকিনের সাথে দেখা করতে বেরোল। এবার অবশ্য আর ভুল করল না। সংক্ষিপ্ত রাস্তাটাই ধরল, যাতে অ্যানলেটের সাথে দেখা না হয়।
ক্রয়োলে যাওয়ার রাস্তায় উঠে থিবল্ট দেখল, একটা লম্বা ছেলে দুটো গাধা নিয়ে যাচ্ছে। ছেলেটাকে চিনতে পারল, ওর কাজিন ল্যান্ড্রি। মিল মালকিনের ওখানেই কাজ করে। আশা করা যায় ল্যান্ড্রি ওর সাথে মিল মালকিনের পরিচয় করিয়ে দিতে পারবে। ভালই হলো ছেলেটাকে পেয়ে। থিবল্ট এগিয়ে গেল ল্যান্ড্রির দিকে।
পেছনে পায়ের শব্দ পেল ল্যান্ড্রি। ফিরে তাকিয়ে থিবকে চিনতে পারল। ল্যান্ড্রি বরাবরই আমুদে একজন সঙ্গী। কিন্তু এখন ল্যাড্রিকে মনমরা দেখে বেশ অবাক হলো। ল্যান্ড্রি গাধা দুটোকে এগোতে দিয়ে থিবল্টের জন্য দাঁড়াল।
কী ব্যাপার, ল্যাড্রি, ছয় সপ্তাহ পর, কাজ রেখে তোমার সঙ্গে দেখা করতে এলাম, আর তুমি এমন মুখ ভার করে রেখেছ?
মুখ দেখে মন খারাপ মনে হতে পারে; কিন্তু বিশ্বাস করো, তোমাকে দেখে খুবই খুশি হয়েছি।
বলছ বটে, কিন্তু মনে তো হচ্ছে না।
মানে?
তোমার গলার স্বরটাও বিষণ্ণ মনে হচ্ছে। তুমি তো সবসময় হাসিখুশি থাকতে, গান গাইতে। আজ মনে হচ্ছে তুমি শবযাত্রায় অংশ নিয়েছ। পানির অভাবে মিল বন্ধ হয়ে গেছে?