‘কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না অ্যাথোসকে তারা কেন গ্রেপ্তার করল? সে-তো এসবের বিন্দু বিসর্গ কিছুই জানে না!’ অ্যাট্রাগঁন মাঝ পথে থামিয়ে প্লানচেটকে প্রশ্নটা করল।
প্ল্যানচেট বলল–‘হ্যাঁ মঁসিয়ে, আপনাকে ধরতে এসে তারা ভুল করে। মঁসিয়ে অ্যাথোসকে ধরে নিয়ে গেছে চিনতে না পেরে।’
‘তা তো বুঝলাম, কিন্তু অ্যাথোস তার নিজের পরিচয়টা দিলেই আর গ্রেপ্তার হতো না।’
‘মঁসিয়ে অ্যাথোস সেটা সম্ভবত জানত; তাই যাবার আগে আমায় চুপিসারে বলে যায়–‘বন্ধু অ্যাট্রাগঁনকে বলল সে তো এই চক্রান্তের বিষয়ে অনেকটা জানে আর আমি কিছুই জানি না। তিন দিন পর আমি আমার নিজের পরিচয় দিয়ে ছাড়া পেয়ে আসবো, আর এই তিন দিনে অ্যাট্রাগঁন যেন এই চক্রান্তটাকে ধ্বংস করার কাজে অনেকটা এগিয়ে যায়। এই তিনদিন ওকে কেউ ঘটাবে না।’
‘বাঃ চমৎকার, মহৎ হৃদয় তোমার অ্যাথোস’ অ্যাট্রাগঁনের মুখ গর্বে উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলের নির্দেশ ছিল সমস্ত নতুন ঘটনাই যেন তাকে সাথে সাথে জানানো হয়। অ্যাথোসের গ্রেপ্তার খবরটা তাঁকে জানাতে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন দ্য ট্রেভিলের বাড়ির দিকে রওনা হলো। সেখানে সে খবর পেলো মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিল রানীর প্রাসাদে লুভেতে তাঁর রক্ষী বাহিনী নিয়ে রওনা হয়েছেন। অ্যাট্রাগঁন বুঝতে পারল রানীকে সুরক্ষার জন্যই মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলে লুভেতে গিয়েছেন। অ্যাট্রাগঁন দ্রুত পায়ে সেই দিকে রওনা হলো।
কিছুটা গিয়েই হঠাৎ চমকে গিয়ে অ্যাট্রাগঁন দেখল দু-জন ব্যক্তি খুব সন্দেহজনক ভঙ্গিতে লুভের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ভালো করে লক্ষ্য করে বুঝতে পারল তাদের মধ্যে একজন পুরুষ আর অপরজন মহিলা। আর সেই মহিলা যে মাদাম বোনাসিক্ষ তাতে কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। দ্য অ্যাট্রাগঁন এগিয়ে গেল এবং তাদের সামনে থমকে দাঁড়াল। এক পা পিছনে সরে গিয়ে আগন্তুক বিদেশী উচ্চারণে প্রশ্ন করল—‘আপনি কি চান মঁসিয়ে?’
‘আপনার সাথে আমার কোনো কথা আছে বলে আমার মনে হয় না। আমি এই মহিলার ব্যাপারেই উৎসাহী। বেশ ঝাঁঝালো ভাবেই কথাগুলো বলল অ্যাট্রাগঁন। সেই বিদেশী বলল,–‘তাই না-কি? আপনি কি এই মহিলাকে চেনেন?’
‘আমার তো মনে হয় আমি খুব ভালোভাবেই চিনি।’
ঠিক আছে আপনি চিনুন কি না চিনুন তাতে আমার কিছু এসে যায় না। এই বলে সেই আগন্তুক বলল–‘মাদাম আসুন আমার হাত ধরুন আমরা আমাদের পথে এগিয়ে যাই।’
হতবুদ্ধি হয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন তাদের পথ আগলে দাঁড়িয়ে থাকাতে দু-পা এগিয়ে তাহ দিয়ে অ্যাট্রাগঁনকে পথ থেকে সরাতেই অ্যাট্রাগঁন নিমেষে তরোয়াল খুলে দাঁড়াল। ঠিক একই সময় সেই আগন্তুকও তার নিজের তরোয়াল কোষমুক্ত করল।
আর মাদাম বোনসিক্স তক্ষুনি তাদের দুজনের হাত ধরে থামাল।
ফরাসি উচ্চারণে বিদেশী আর মাদাম বোনাসিক্সের মধ্যে কয়েকবার ‘মাইলর্ড’ সম্বোধনে কথা হলো অ্যাট্রাগঁন বুঝতে পারল বিদেশী একজন যোদ্ধার ছদ্মবেশে রয়েছেন। আড়ালে ইনি আসলে আমাদের রানীর প্রেমিক বাকিংহামের ডিউক।
‘আমায় ক্ষমা করবেন মহামান্য প্রভু, আমার বুঝতে ভুল হয়েছিল।’ অ্যাট্রাগঁন অভিবাদ জানিয়ে বলল–‘আমায় ক্ষমা করবেন মহামান্য ডিউক। আসলে আমি এই মহিলাকে চিনি। মাদামের সাথে একজন সাধারণ যোদ্ধার ছদ্মবেশে আপনাকে দেখে আমার রাগ হয়েছিল। এবার আদেশ করুন মহামান্য ডিউক আপনার জন্য আমার জীবন কীভাবে নিয়োজিত করতে পারি।’
‘তুমি একজন সাহসী যুবক। ঠিক আছে আমি তোমার সাহায্য নেবো কুড়ি দা দূর থেকে তুমি আমাদের অনুসরণ করবে। আর কেউ যদি আমাদের বাধা দিতে আসে তাকে তুমি হত্যা করতে কুণ্ঠিত হয়ো না।’ ডিউক বললেন।
মাদাম বোনাসিক্স আর ডিউক এগিয়ে যাবার পর মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন উন্মুক্ত তরোয়াল হাতে তাদের পিছন পিছন যেতে লাগল। আর প্রার্থনা করতে লাগল এমন কেউ কেউ এসে ডিউককে বাধা দিক যাতে সে তরোয়ালের এক কোপে তাকে শেষ করে ডিউককে দেখাতে পারে সে তার অনুগামী। কিন্তু দুর্ভাগ্য অ্যাট্রাগঁনের সে রকম কোনো ঘটনাই ঘটল না। ডিউক ও মাদাম বোনাসিক্স নিরাপদে রানীর প্রাসাদ লুভের-এর পেছনের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকল।
এদিকে মঁসিয়ে বোনাসিক্সকে বাস্তিল দুর্গে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসার পর কমিশনার তাকে প্রশ্ন করল তার নাম বয়স পেশা ও বাসস্থান কোথায়?
অভিযুক্ত মঁসিয়ে বোনাসিক্স বললেন তার নাম জেকাস মেখাইল বোনাসিক্স একান্ন বছর বয়স, একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী আর তার বাড়ির ঠিকানা ১৪ নং রু, ডেস, কোসসাইউর।
কমিশার তাঁকে প্রশ্ন করল সিয়ে–‘আপনার একজন স্ত্রী বর্তমান?’
‘হ্যাঁ মঁসিয়ে ঠিকই, আমার মাত্র একটিই স্ত্রী আছে।’
‘কিন্তু আপনি তাকে কি কাজে নিযুক্ত করেছেন? যার ফলে তার সাথে আপনার কয়েক দিন যোগাযোগ নেই।’
‘মঁসিয়ে কমিশনার আমার স্ত্রীকে অপহরণ করা হয়েছে।’
‘আপনি জানেন কি কে এই অপহরণ করা হয়েছে।’
‘হ্যাঁ মঁসিয়ে তাকে চিনি, লোকটির গায়ের রঙ কালো, সুগঠিত আর ব্যবহারে প্রভুজনোচিত আচরণ।’
আপন মনে অস্পষ্ট স্বরে কমিশনার বললেন ‘এ যে দেখছি কার্ডিনাল-এর নিজস্ব ব্যাপার।’
মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্সকে আবার বাস্তিল দুর্গে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে কার্ডিনাল স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন। কার্ডিনাল উপস্থিত সকলকে বিদায় দিয়ে প্রশ্ন করলেন–‘মঁসিয়ে আপনার বিরুদ্ধে রাজদ্রোহিতা অভিযোগ আছে কেন না আপনি আপনার স্ত্রীকে রানীর অবৈধ প্রেমিক বাকিংহামের ডিউক প্যারিসে নিয়ে রানীর সাথে দেখা করার কাজে নিযুক্ত করেছেন।’