‘তাহলে কি মাদমোয়ালে চেভরিউস?’
‘না মঁসিয়ে তিনি আরো সান্তা মহিলা।’–বোনাসিক্স বলল। হতাশ কণ্ঠে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন বলল, তাহলে কি তিনি মাদমোয়াজেল আমাদের রাজার…’
‘হ্যাঁ মঁসিয়ে এবার আপনার কোনো ভুল হয়নি। এই গুপ্ত প্রেমের নায়িকা মাদমোয়াজেল রানী এ্যান।’ ভালো ছাত্রের সঠিক উত্তরের পর গর্বিত শিক্ষকের মতো ভাব দেখালেন মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্স।
‘কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না মঁসিয়ে কার সাথে রানীর এই গুপ্ত প্রণয়?’
‘মঁসিয়ে তিনি হচ্ছে মহামান্য বাকিংহামের ডিউক।’
‘আপনি এই গোপন সংবাদ কোথায় পেলেন মঁসিয়ে বোনাসিক্স?’
‘মঁসিয়ে আমি খবরটা পেয়েছি আমার স্ত্রীর কাছ থেকে।’
‘আপনি ঠিকই বলেছেন, সিয়ে, ঘটনা অনেক দূর গড়িয়েছে’ বললেন বোনাসিক্স।
‘আমার স্ত্রী আমায় বলছিল যে রানী এ্যান বর্তমানে খুব ভয়ে আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।’
‘তাই নাকি?’–মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন বললেন–‘আপনি আমায় বলুন। রানী এ্যানের ভয়ের কারণটা কি?
‘রানী এ্যান ভীত এই কারণেই যে তিনি আশঙ্কা করছেন কেউ তার নাম ব্যবহার করে বাকিংহামের ডিউককে চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে ডিউককে প্যারিসে আসার কথা বলা হয়েছে এবং সম্ভবত ডিউক এই ফাঁদে পা। দেবেন।’ চাপা স্বরে কথাগুলো বললেন মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্স।
অ্যাট্রাগঁন জিজ্ঞেস করল–‘যে আপনার স্ত্রীকে অপহরণ করেছে আপনি কি সেই ব্যক্তিকে চেনেন?’
প্রায় লাফিয়ে উঠে মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্স বললেন–‘হ্যাঁ খুব চিনি। এক সুদর্শন পুরুষ, সুঠাম দেহ, কালো চুল, উজ্জ্বল চোখ, সাদা দাঁত আর হ্যাঁ, তার কপালের দুপাশে ক্ষত চিহ্ন।’
‘কপালের দুপাশে ক্ষত চিহ্ন! কালোচুল, সাদা দাঁত, উজ্জ্বল চোখ আর গায়ের রঙ অনুজ্জ্বল! ওঃ আমি নিশ্চিত এসেই ব্যক্তি যার সাথে আমার যেয়ঙ্গ-এ দেখা হয়েছিল। সেই শয়তান যে আমার পকেট হাতড়ে চিঠি চুরি করেছিল।’ উত্তেজিত অ্যাট্রাগঁন হাত দুটো পেছনে রেখে মুঠি পকিয়ে ঘরময় পায়চারি করতে লাগল। ক্রোধে উত্তেজিত হয়ে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন বলল,–‘আপনি ঠিক বলছেন তো মঁসিয়ে ঐ সেই ব্যক্তি যে আপনার স্ত্রীকে অপহরণ করেছে?’
‘হ্যাঁ মঁসিয়ে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন।’ বললেন মঁসিয়ে বোনাসিক্স।
‘কিন্তু মঁসিয়ে আপনি কি জানেন সে কোথায় থাকে?’
না আমি জানি না। এক দিন আমার স্ত্রী শুধু তাকে চিনিয়ে দিয়েছিল। মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্স হঠাৎ পকেট থেকে একটা চিঠি বের করে সেটা অ্যাট্রাগঁনের হাতে দিয়ে বললেন–‘মঁসিয়ে এই চিঠিটা আমি আজ সকালে পেয়েছি।’
চিঠিটা হাত বাড়িয়ে নিলেন দ্য অ্যাট্রাগঁন। তাতে এই কথাগুলো লেখা ছিল—’তোমার স্ত্রীকে আমরা অপহরণ করেছি। আমাদের প্রয়োজন শেষ হলেই তোমার স্ত্রীকে তুমি ফিরে পাবে। তার আগে নয়। তোমায় সতর্ক করে দিচ্ছি তাকে খোঁজার যদি মিথ্যে চেষ্টা করো তাহলে তুমি তাকে হারাবে।’
চিঠিটা পড়ার পর চোয়াল শক্ত হয়ে গেল, চোখ দুটো ক্রোধে ধকধক করে জ্বলে উঠল মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের।
‘আপনি কি আমায় সাহায্য করবেন মঁসিয়ে?’
সম্বিত ফিরে পেয়ে অ্যাট্রাগঁন বলল–‘হ্যাঁ নিশ্চিত থাকতে পারেন আপনি মঁসিয়ে। শুধু আমিই নই আমার তিন বন্ধু যারা রাজার রক্ষীবাহিনীর সেরা যোদ্ধা অ্যাথোস, প্যাথোস আর অ্যারামিসেরও সাহায্য পাবেন। আপনি নিশ্চিন্ত মনে ঘরে গিয়ে বিশ্রাম করুন।’
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে এগিয়ে আবার থমকে দাঁড়ালেন দ্য বোনাসিক্স, বললেন—’আপনাকে বলা হয়নি সিয়ে, আমাদের দুঃখী রানী এ্যানকে রাজার চোখে হেয় করাই কার্ডিনাল-এর আসল উদ্দেশ্যটা। হ্যাঁ মঁসিয়ে, এই কার্ডিনাল আমাদের সুন্দরী রাণীর পাণি প্রার্থী ছিল কিন্তু রানী ঘৃণার সাথে তার প্রণয় প্রত্যাখান করেন। আর সেই আক্রোশেই কার্ডিনাল-এর এই ষড়যন্ত্র। রাজা ত্রয়োদশ লুই যদি বাকিংহামের ডিউকের সাথে রানীকে দেখে তাহলে কি অবস্থা হতে পারে?’
মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্সের বাড়িটা বর্তমানে কার্ডিনাল-এর লোকের একটা ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেছে। যে কেউ বাড়িতে এলে তাকে কার্ডিনাল-এর লোকেরা জোর করে জানতে চাইছে তারা রানীর গোপন প্রেমের বিষয়ে কতটুকু জানে? মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন সেই বাড়িরই ওপর তলায় থাকে, তার কাজ বাড়িটাকে ভালোভাবে নজরে রাখা, এই জন্যে সে একটা জানালার সামনে নিজেকে গোপন রেখে লক্ষ্য করে কি ঘটনা ঘটে চলেছে সেখানে।
যে দিন বাড়িওলা মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্সকে গ্রেফতার করে বাস্তিল দুর্গে নিয়ে যাওয়া হলো সেই দিনই সন্ধ্যায় মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন নীচ থেকে একটা গোলমালের শব্দ শুনতে পেলো, শব্দটা কখনও বাড়ছে কখনও কমছে। মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন দ্রুত জানালার কাছে গিয়ে ভালো করে শুনল—’এটা কোনো মহিলার গলার শব্দ’ অ্যাট্রাগঁন নিজের মনেই বিড় বিড় করে বলল।
এবার অ্যাট্রাগঁন স্পষ্ট শুনতে পেলো একজন মহিলাকে কেউ তাল্লাশ করছে। মহিলার কণ্ঠস্বর যেন থেমে গেল, মনে হলো কেউ তার গলা চেপে ধরেছে।
‘আমি তোমাদের বারবার বলছি এ-বাড়ির কর্ত্রী আমি, আমি মাদাম বোনাসিক্স, শোনো তোমরা, আমি রানীর খুব কাছের জন।’ আক্রান্তা মহিলা আক্রমণকারীদের উদ্দেশ্যে বলে চলল।