পরদিন বেলা ১২টায় পেছনের সিঁড়ি দিয়ে চারজনকে রাজা ত্রয়োদশ লুইয়ের কাছে নিয়ে আসা হলো। রাজার নির্দেশ ছিল পেছনের সিঁড়ি দিয়ে নিয়ে আসার কারণ কার্ডিনাল-এর চরেরা জানতে পারবে।
‘এসো এসো’ রাজা বলে চললেন–‘এসো আমার বীর যোদ্ধারা’ চার যোদ্ধা রাজাকে অভিবাদন করে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো, সবার পেছনে ছিল দ্য অ্যাট্রাগঁন।
সেদিকে দৃষ্টি পড়তে রাজা বললেন,–‘আরে একে আপনি যুবক বলেছিলেন? মঁসিয়ে ট্রেভিল এ-যে দেখছি নিতান্তই বালক? আর এই ছোট্ট বালক জুসাসের মতো দক্ষ তরোয়ালবাজকে পরাজিত করেছে?’
‘হ্যাঁ মহাশয় ঘটনার মধ্যে কোনো মিথ্যে নেই।’ মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিল বললেন। রাজা লুই আবেগরুদ্ধ স্বরে বললেন—’এই নিতান্ত বালক শত্রুদের তরোয়াল ভেঙে টুকরো টুকরো করে, নিজের শত্রুকে অল্প সময়ে ঘায়েল করে বন্ধুর শত্রুকেও ঘায়েল করেছে? এসো বীর বালক আমার কাছে এসো আর এই নাও উপহার স্বরূপ চল্লিশটা স্বর্ণ মুদ্রা।’
তখনকার দিনে রাজার সামনে আসা কিংবা তাঁর দর্শন পাওয়া, তাঁর সাথে করমর্দন করা খুব সহজ বিষয় ছিল না। এর ওপর রাজার কাছ থেকে কোনো কিছু উপহার পাওয়া পৃথিবীর যে কোনো আকাঙ্ক্ষিত বস্তুর থেকে অনেকাংশে বেশি পাওয়ার সামিল।
চার যোদ্ধা চলে যাবার পর রাজা মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলকে বললেন ‘মঁসিয়ে ট্রেভিল ওই যুবক অ্যাট্রাগঁনকে খুব তাড়াতাড়ি আপনার শ্যালক মঁসিয়ে দ্য এ্যাসার্টার শিক্ষানিবাসে পাঠিয়ে দিন।’
একদিন সকালে রাজা ত্রয়োদশ লুইয়ের নির্দেশ মতো মঁসিয়ে দ্য এ্যাসার্টার তাঁর শিক্ষানিবাসে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনকে ভর্তি করে নিল। তাকে যখন যোদ্ধার পোশক দেয়া হলো মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন একটা গভীর শ্বাস ফেলল কেন না সে জানে এখন থেকে আগামী দশ বছরের আগে সে নিজেকে রাজার প্রধান রক্ষীবাহিনীতে যোগ দেবার কোনো সুযোগ পাবে না আর এর মধ্যে কোনো বড় রকম কাজের দায়িত্বও সে পাবে না। যদিও মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিল তাকে বলেছে আগামী দু-বছরের মধ্যেই তাকে মূল বাহিনীতে নিয়ে নেয়া হবে কিন্তু সেটাও তো দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার।
একদিন মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন তার ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিল সেই সময় একজন আগন্তুক এসে জানাল যে তার সাথে কিছু গোপন কথা আছে।
‘আসুন মহাশয়’–মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন অভ্যর্থনা জানাল,–‘আপনার পরিচয়টা কি জানতে পারি?’
‘মহাশয় আমিই আপনার বাড়িওলা, আমার নাম মঁসিয়ে বোনাসিক্স!’
‘ওঃ তাই বলুন, সেই জন্যই আপনাকে খুব চেনা চেনা লাগছিল,’ মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন বলল।
‘হ্যাঁ মহাশয়, আপনি আমায় আগেই দেখে থাকবেন, যাইহোক আমার আসার উদ্দেশ্যটা কিন্তু খুব গোপনীয়,’ আস্তে আস্তে কথাগুলো বলল সিয়ে দ্য বোনাসিক্স।
‘আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, আপনার সব কিছুই গোপন থাকবে। নির্ভয়ে আপনি আপনার বক্তব্য জানাতে পারেন।’
‘ধন্যবাদ মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন’ বলল মঁসিয়ে বোনাসিক্স। একটা চেয়ার টেনে বসে পুনরায় শুরু করল মঁসিয়ে বোনাসিক্স। ‘মহাশয় আমার স্ত্রী হচ্ছেন আমাদের রানীর মেয়ের দর্জি। অবশ্য তার শুধু সেটাই পরিচয় নয়, সে রানীর একান্ত বিশ্বাসভাজনও বটে। মহাশয় খুবই দুর্ভাগ্যর কথা যে আমার স্ত্রী গতকাল সন্ধ্যায় অপহৃত হয়েছেন।’
‘অপহরণ?’ মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন আশ্চর্য হয়ে আবার বললেন ‘অপহরণ? আপনি বলছেন কি?’
একটু থেমে মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্স বললেন–‘হ্যাঁ মহাশয় গতকাল যখন সে তার কাজ সেরে ফিরছিল তখন তাকে অপহরণ করা হয়, আর আপনাকে আগেই বলেছি যে আমাদের রানী যে কয়েকজনকে গভীরভাবে। বিশ্বাস করেন আমার স্ত্রী তাদের মধ্যে একজন। আপনাকে আমার জানানো উচিত যে এই অপহরণের পেছনে গভীর চক্রান্ত রয়েছে।’
‘কিন্তু কে বা কারা আপনার স্ত্রীকে অপহরণ করল? আপনি কি আমায় ব্যাপারটা পরিষ্কার করে বলবেন?’ জানতে চাইল র্মসিয়ে অ্যাট্রাগঁন।
‘গতকাল আমার স্ত্রী যখন রানীর কাছ থেকে ফিরছিল তখন একজন অপরিচিত লোক তাকে দীর্ঘক্ষণ ধরে অনুসরণ করছিল।’
‘কে সেই শয়তান? আমি তাকে উপযুক্ত শিক্ষা দেব।’ ক্রুদ্ধ মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন টেবিলে ঘুসি মেরে বলে উঠল। খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বাড়িওলা মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্স বলল–‘মঁসিয়ে আপনি একজন যথার্থই সৎ ও সাহসী লোক, সেই কারণে আপনাকে আমি এমন কিছু গোপন সংবাদ বলতে পারি যাতে আমার বিশ্বাস কোনো ক্ষতি হবে না।’
এ কথার কোনো উত্তর না দিয়ে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন কৌতূহল নিয়ে মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্সের দিকে তাকিয়ে রইল, সেই দৃষ্টি যেন বলছিল ‘হ্যাঁ মঁসিয়ে আপনি আমায় বিশ্বাস করতে পারেন।’
মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্স আশপাশে একবার চোখ বুলিয়ে একটু নিচুস্বরে বলে চললেন–‘গুপ্ত প্রেম মঁসিয়ে গুপ্ত প্রেম। আমার স্ত্রীর চাইতে অনেক। অনেক সম্মানীয়া এক স্ত্রী লোকের গুপ্ত প্রেম।’ গুপ্ত প্রেম! মঁসিয়ে দ্য। অ্যাট্রাগঁন এবার সত্যিই আশ্চর্য হয়ে গেল।
‘ভাবুন তো ঘঁসিয়ে কে এই গুপ্ত প্রেমের নায়িকা?’ খুব রহস্য করে প্রশ্নটা করলেন মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্স।
‘নিশ্চয়ই মাদমোযাজেল অ্যাগুইলিন।’–অ্যাট্রাগঁন বলল।
‘হয়নি মঁসিয়ে আরো সম্ভ্রান্ত মহিলা তিনি।’