এই ক্ষমা শুনে তিন বীর যোদ্ধা ভাবলো তাদের প্রতিদ্বন্দ্বির ভয় পেয়ে গিয়েছে। তারা অবজ্ঞার দৃষ্টিতে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের দিকে তাকাতে তার পেশী দৃঢ় হয়ে রক্ত চঞ্চল হয়ে উঠল।
রেগে গিয়ে তলোয়ার খুলে দৃঢ় মুষ্টিতে ঘরে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন বলল, ‘ক্ষমা শব্দটার আপনারা ভুল অর্থ করেছেন। আমি বলতে চাইছি আপনাদের সাথে চুক্তি ছিল দ্বন্দ্ব যুদ্ধের আর ভদ্র মহোদয়রা নিশ্চয়ই জানেন সেটা দু জনের সাথে হয়। এছাড়াও আপনাদের সাথে চুক্তি ছিল এক ঘণ্টার তফাতে আমি তিনজনের সাথেই যুদ্ধ করব। আমি আমার চুক্তির খেলাপ করিনি কিন্তু আপনারা তিনজনে একসাথে আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে সেটা কোনো মতেই দ্বন্দ্ব যুদ্ধের পর্যায়ে পড়ে না এবং আপনাদের চুক্তির মধ্যে পড়ে না।’
এই কথা বলে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন অ্যাথোসের দিকে তাকাল এবং বলল—’সিয়ে অ্যাম্বোস আপনার সাথেই আমার প্রথম যুদ্ধের কথা। আপনি প্রস্তুত হন।’
অ্যাট্রাগঁন তার তরোয়াল খুলে প্রস্তুত হলো মঁসিয়ে অ্যাম্বোস এক ঝটকায় যখন নিজের তরোয়াল খুলে প্রতিদ্বন্দ্বির মুখোমুখি হবে ঠিক সেই সময় প্যাথোস চিৎকার করে বলল–‘তোমরা তোমাদের তরোয়াল খাপে ভরো। ওই দেখো কার্ডিনাল-এর একদল রক্ষীবাহিনী আমাদের এই দিকেই আসছে।’
কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে, তরোয়াল কেউই খাপে ভরার সময় পেল না তার আগেই মঁসিয়ে দ্য জুসাকের নেতৃত্বে কার্ডিনাল-এর রক্ষীবাহিনী তাদের সামনে এসে দাঁড়াল।
‘ভদ্র মহোদয়গণ’–জুসাস বলল, আপনাদের তরোয়াল যে যার খাপে ভরুণ এবং আমায় অনুসরণ করুন, আপনাদের আমি গ্রেপ্তার করলাম। আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আপনারা দ্বন্দ্ব যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন এবং এটা আইন লঙ্ঘন অপরাধ কেননা দ্বন্দ্ব যুদ্ধ নিষিদ্ধ।
‘মঁসিয়ে’ এ্যারামিস বলল, ‘আপনি আপনার পথ দেখুন আর আমার মনে হয় সেটাই আপনার পক্ষে মঙ্গলজনক।’
জুসাস বলল—’আপনার কথার ভঙ্গি শোধরাণ, আর আপনাকে সতর্ক করে বলছি, আমার কথার অবাধ্য হলে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনব।’
‘ওরা সংখ্যায় পাঁচজন’ এ্যাথোস চাপা স্বরে বলল,–‘কিন্তু আমরা মাত্র তিনজন। আমরা আবার মার খাবো এবং এখানেই এদের হাতে মরবো। আমি আমার তরফ থেকে বলছি পরাজিত হয়ে ক্যাপটেনের কাছে আমি দ্বিতীয়বার দাঁড়াতে পারব না।’
অ্যাথোস, প্যাথোস এবং এ্যারামিস সংঘবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতেই জুসাস তার সৈন্যদেরও সংঘবদ্ধ করল।
‘ভদ্রমহোদয়গণ’ দ্য অ্যাট্রাগঁন বলল ‘আমায় অনুমতি তির আপনাদের কথাটা কিছু সংশোধন করে দিতে। আমার গণনায় আমরা চারজন। তিনজই নই।
‘কিন্তু তুমি নিশ্চয়ই আমাদের দলে নও’ প্যাথোস জিজ্ঞেস করল।
‘অবশ্যই আপনাদের দলের’ দ্য অ্যাট্রাগঁন বলল,–‘কেন না আমরা পরণে যোদ্ধার পোশাক নেই বটে আমি অন্তর থেকে স্বীকার করি আমি আপনদের একজন।’
‘বাঃ! বাঃ সুন্দর!’ চিৎকার করে বলে উঠল অ্যাথোস, ‘আমরা চারজন অ্যাম্বোস, প্যাথোস, এ্যারামিস এবং অ্যাট্রাগঁন। চল ঝাঁপিয়ে পড়ো আমাদের শত্রুদের ওপর।’
অ্যাথোস আর প্যাথোস এক একজন শত্রুর সাথে এ্যারমিস একা দুজন শত্রুর সাথে আর অ্যাট্রাগঁন শত্রুনেতা জুসাসের সাথে তরোয়াল নিয়ে লড়াই চালাতে লাগল। অভিজ্ঞ জুসাস যাকে বালক হিসেবে মনে মনে তুচ্ছ করেছিল, তার ক্ষিপ্রতা, তরোয়াল চালানোর ভঙ্গি দেখে অবাক হয়ে গেল। সত্যিই দ্য অ্যাট্রাগঁনের তরোয়াল সাপের মতো কখনো এদিক কখনো ওদিক চলতে লাগল। জুসাস তার সমস্ত শিক্ষা উজার করেও পারল না। সবার আগে তাকেই মরতে হলো দ্য অ্যাট্রাগঁনের তরোয়ালে। এরপর দ্য অ্যাট্রাগঁন বন্ধুদের সাহায্য করতে এগিয়ে গেল আর ক্লান্ত অ্যাথোসের প্রতিদ্বন্দ্বিকে খানিকের মধ্যেই হারিয়ে ফেলল। একে এক কার্ডিনাল-এর পাঁচ সৈন্যই শেষ হয়ে গেল। সেদিন হাত ধরাধরি করে চার বন্ধু যখন মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলের প্রাসাদে ফিরে এলো তখন তাদের আনন্দ আর গর্ব ঝরে পরছিল। তবে এদের মধ্যে দ্য অ্যাট্রাগঁনের আনন্দই সবচেয়ে বেশি হচ্ছিল।
এই ঘটনার সমস্ত বিবরণ যখন মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলের কানে পৌঁছাল তিনি তখন চারজনকে সকলের সামনে তিরস্কার করলেন কিন্তু আড়ালে আন্তরিকতার সাথে প্রশংসা করলেন। কার্ডিনাল-এর সৈন্যদের পরাজয়ের সংবাদ রাজার কাছে পৌঁছাল। রাজা ত্রয়োদশ লুই এই খবরে খুব সন্তুষ্ট হলেন।
‘আপনি বলছিলেন এই জয় এনেছে আমাদের চারজন যোদ্ধা? যাদের একজন আহত আর একজনের বয়স নিতান্তই কম?’ রাজা লুই গর্বিত স্বরে প্রশ্নটা করলেন ক্যাপটেন দ্য ট্রেভিলকে।
‘হ্যাঁ মহাশয়’–মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিল বললেন,–‘আর ওই ছেলেটির সাথে আজ সকালেই আমার পরিচয়। ওরা বাবা আমার পুরনো বন্ধু আর তার বাবা আপনার বাবার রাজত্বে পার্শিয়ানদের সঙ্গে সেই গৌরবময় যুদ্ধে সম্মানীয় পদে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।’
রাজা লুই বললেন–‘আমি সেই সাহসী বীর যুবকের সাথে দেখা করতে চাই মঁসিয়ে ট্রেভিল। আমাদের উচিত যুবকটির জন্য কিছু করা।’
‘মহামন্য রাজা, আপনি তার সাথে কখন দেখা করতে চান? তাকে কি আমি একাই আপনার সামনে আনবো?’ মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিল জানতে চাইলেন।
‘আগামীকাল’ রাজা এয়োদশ লুই বললেন,–‘আগামীকালই দুপুরে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করুন, আর, হ্যাঁ চারজনকে এক সাথেই আনবেন, চার বীরকে আমি একসাথেই সম্মান জানাবো। মঁসিয়ে ট্রেভিল, কর্তব্যপরায়ণ, উৎসর্গক্রীত প্রাণ জগতে দুর্লভ, যে কজন এই আদর্শের মানুষ আছে, আমাদের উচিৎ তাঁদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা।’