মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রগনের সাথে কোনো কথা না বলে দার টাটুটার দিকে তাকালো,–লোকটির আচরণ লক্ষ্য করে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন চামগার খাপে ঢাকা তলোয়ারটা বের করল।
লোকটা মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের রাগী মুখ কিংবা কোষ মুক্ত তলোয়ারের দিকে বিন্দু মাত্র না তাকিয়ে, জানলার ধারে তখনো বসে থাকা তার সাগরেদদের উদ্দেশ্য করে বলল, আমার মনে হয় ঘোড়াটা তার যৌবনে সুন্দর হলুদ ফুলওলা লতা গাছের মতোই ছিল। আর বলতে কি উদ্ভিদ বিজ্ঞানে রঙটা সুপরিচিত হলেও বর্তমানে ঘোড়াদের মধ্যে বিরল।
বিরক্ত হয়ে খুব রেগেমেগে চেঁচিয়ে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন বলল, ‘ঘোড়াটা নিয়ে হাসাহাসি করলেও কারো যেন সাহস না হয় ঘোড়ার মালিক নিয়ে হাসাহাসি করার।’
‘আমি সাধারণত হাসি না, কিন্তু হাসির কারণ হলে আমার নিশ্চয়ই হাসবার অধিকার আছে’ লোকটি জানাল।
‘তাই নাকি মহাশয়?’ আগের চাইতে আরো শান্তভাবে আরো ধীরে কথাগুলো বলল লোকটি।–আপনি বোধহয় ঠিকই বলেছেন লোকটি আর কথা বলে ধীর পদক্ষেপে সরাইখানার প্রধান দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে গেল।
কিন্তু মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন ঠিক সে ধরনের মানুষ নয়, যাকে নিয়ে যে কেউ (অপমান) মজা করে গেলেও সে চুপ করে সহ্য করে যাবে।
‘থামুন, থামুন–এই যে জোকার মহাশয়, আপনি যদি না থামেন তা হলে আমি বাধ্য হবো আপনাকে পিছন থেকে আঘাত করতে।’
‘আমায় আঘাত করবে? কেন বন্ধু? তুমি নিশ্চয়ই পাগর হয়ে যাওনি?’
মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন তার তলোয়ারটা এমন জোরে চালালো যে লোকটি লাফিয়ে পিছন দিকে সরে না গেলে তখনই তার ভাবলীলা অক্কা হয়ে যেত। বাস্তবিক লোকটি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ব্যাপারটাকে একটা মজার ঘটনা ছাড়া অন্য কোনোভাবেই নেয়নি। কিন্তু এবার লোকটি তার প্রতিদ্বন্দ্বি মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনকে অভিবাদন জানিয়ে তার নিজের তলোয়ারটা কোষ মুক্ত করে আত্মরক্ষার জন্য তৈরি হলো। ঘটনাচক্রে সেই সময়েই তার দুই বন্ধু ও সরাইখানার মালিক একসাথে হয়ে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের ওপর শাবল লাঠি এসব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। এই আক্রমণে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন মাথা ফেটে সরাইখানার মালিক তার ভৃত্যদের সাহায্য মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের সুস্থ করে তোলার জন্য সরাইখানার রান্নাঘরে নিয়ে গেল।
কপালে কাটা দাগঅলা ভদ্রলোকটা আবার তার জায়গায় সেই জানালার ধারে গিয়ে বসল। কিছুক্ষণ পর সরাইখানার মালিককে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করল–ওহে পাগলটা কেমন আছে?
ভেতর থেকে সরাইখানার মালিক বলল–এখন যথেষ্ট ভালো আছে। তবে অজ্ঞান হবার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত তার সকল শক্তি দিয়ে তোমার উদ্দেশ্যেই চেঁচাচ্ছিল আর তখনও তোমায় তলোয়ার যুদ্ধে আহ্বান করেছিল।
লোকটি বলল–‘তা বেশ, তবে ও কি যন্ত্রণার ঘোরে অন্য কারো নাম ধরে ডাকছিল?’ সরাইখানার মালিক বলল,–‘হ্যাঁ মঁসিয়ে, উনি ওনার পকেট হাতড়িয়ে একটা চিঠি দেখিয়ে বলছিলেন যে, এই অন্যায় আচরণের কথা যখন মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিল জানতে পারবেন তখন সবাইকে তার উপযুক্ত শাস্তিই পেতে হবে।’
‘মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিল!’ আপন মনেই বিড়বিড় করে বলে চলল লোকটা। এবার লোকটি খুবই সর্তক হয়ে বলল, ‘আমায় জানতেই হবে ঐ চিঠিতে কি আছে।’ মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন তখনও অজ্ঞান অবস্থায়, লোকটি তার গাউনের পকেট থেকে চিঠিটা বার করে নিল।
‘মিলেডি নিশ্চয়ই এই আগন্তককে এখনো দেখেনি। আর আমি এটাও চাই না যে এই আগন্তক মিলেডিকে দেখে ফেলুক। তাছাড়া এমনিতেই মিলেডি যথেষ্ট দেরি করে ফেলেছে।’
ঠিক সেসময় মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনও জ্ঞান ফিরে পেল এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরাইখানা ছেড়ে চলে যেতে চাইল। মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন তখনও যথেষ্ট দুর্বল, আস্তে সরাইখানার সদরে আসতেই যে জিনিসটার ওপর তার প্রথম চোখ পড়ল তা হচ্ছে একটা বড় ঘোড়ার গাড়ি। যেটার দুটো বলশালী নর্মাল ঘোড়া জোতা আছে, তারই পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে একটি সুন্দরী মহিলার সাথে আস্তে আস্তে কথা বলছে কপালের দুদিকে ক্ষত চিহ্নওলা লোকটা। সুন্দরী মহিলাটি জিজ্ঞেস করল কার্ডিনাল-এর আদেশ কি?
লোকটি বলল, ‘তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইংল্যান্ড চলে যাও আর বাকিংহামের ডিউকের ওপর কড়া নজর রাখবে। ভালো কথা কার্ডিনালকে বলো ডিউক তাড়াতাড়ি লন্ডন ছেড়ে যাবেন।
‘আর কোনো নির্দেশ আছে?’ সুন্দরী মহিলাটি জানতে চাইল।
‘হ্যাঁ, শেষ নির্দেশটা এই বাক্সের মধ্যে আছে কিন্তু এটা তুমি কোনো মতেই চ্যানেলের অন্য প্রান্তে যাওয়া পর্যন্ত খুলবে না।‘
‘বেশ ভালো কথা। সব নির্দেশই যথাযথ পালন হবে। কিন্তু আমি জানতে চাইছি, তুমি এখন কি করবে?’
‘আমি? ও-হ্যাঁ আমি প্যারিসে ফিরে যাবো।‘
মহিলাটি বলল,–‘সে কি ওই উদ্ধত যুবকটাকে শাস্তি না দিয়েই’ লোকটি এই কথার উত্তর দিতে যাবার সাথে সাথেই দেখল মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে আসছে।
‘এই যে মশাই দাঁড়াও, আর আমার সাথে যুদ্ধ করো; একজন মহিলার সামনে আমার কাছ থেকে পালিয়ে যাবার সাহস নিশ্চয়ই তোমার হবে না।’ চিৎকার করে ক্রুদ্ধ স্বরে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন বলল।
কপালে কাটা দাগ লোকটা এতে খুব অপমানিত হয়ে কোমরে হাত দিল তালোয়ারটা কোষ মুক্ত করার জন্য, কিন্তু সেই সুন্দরী মহিলা যার নাম মিলেডি সে তার সঙ্গীকে বলল, ‘মনে রেখো সামান্য দেরিতেই আমাদের কাজের ক্ষতি হয়ে যাবে আর তাতে আমাদের সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে।’