‘দুটো হীরের বোতাম খোয়া গিয়েছে। বারোটা ছিল এখন দেখছি দশটা।’
‘মহামান্য ডিউক মনে হচ্ছে-ও দুটো চুরি হয়ে গিয়েছে।
‘হ্যাঁ চুরিই হয়েছে। বুঝতে পারছি শয়তান ক্লাসক্লিনাল-এর কাজ এটা, দেখছ না ধারালো কাঁচি দিয়ে দুটো বোতাম কেটে নেয়া হয়েছে?’ উত্তেজিত ডিউক বললেন।
‘মহামান্য ডিউকের যদি তাই সন্দেহ হয় তাহলে আমার মনে হয় চোরের কাছে হীরের বোতাম দু-টো এখনো রয়েছে।’
‘দাঁড়াও আমায় মনে করতে দাও’–ডিউক বললেন, আমি এই হীরের নেকলেশটা মাত্র একবারই পরেছিলাম, গত সপ্তাহে উইন্ডসরে। হ্যাঁ মনে পড়েছে, কাউনট্রেস মিলেডি ডি উইনটার উইন্ডসরে ওই বল নাচের আসরে অহেতুক আমার সাথে বন্ধুত্ব করেছিল অথচ আমি জানি মিলেডি আমার আদৌ পছন্দ করে না, তাঁর ঐ ব্যবহারে তখনই আমি খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, এখন বুঝতে পারছি এটা তারই কাজ, মিলেডি কার্ডিনাল এর চর।
‘প্যাট্রিক!… প্যাট্রিক!’ জোরে হাঁক দিলেন ডিউক। ‘এই যে প্যাট্রিক, এখুনি আমার জহুরীকে ডাকো’ ডিউক আদেশ দিলেন।
‘স্বর্ণকার আসতে ডিউক হীরের নেকলেশটা দেখিয়ে বললেন এই নেকলেশটা ভালো ভাবে দেখো। বারোটার জায়গায় দশটা, যে দুটো নেই সে দু-টো হীরের বোতাম তোমায় তৈরি করে দিতে হবে, মনে রাখতে হবে নতুন দুটো এমন হবে যাতে তুমিও না বুঝতে পারো কোনটা নতুন আর কোনটা পুরোনো। হ্যাঁ এবার বলো কবে দেবে আর এর জন্য আমায় কত মূল্য দিতে হবে?’
জহুরী ভালো করে হীরেগুলো পরখ করে বলল,–‘মহামান্য ডিউক প্রতিটির জন্য পনেরোশ স্বর্ণমুদ্রা খরচ পরবে।’
‘আর কত দিন লাগবে জিনিসটা সম্পূর্ণ করতে!’ প্রশ্ন করলেন ডিউক।
‘সাত দিন সময় লাগবে মহামান্য ডিউক।’
‘আমি তোমায় প্রতিটির জন্য তিন হাজার স্বর্ণমুদ্রা দেবো কিন্তু নেকলেশটা তোমায় আগামী পরশু তৈরি করে দিতে হবে আর মনে রাখবে আমি নিখুঁত কাজ চাই।’
এরপর বাকিংহাম তার সেক্রেটারীকে নির্দেশ দিলেন বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিতে যেন তাঁর অনুমতি ছাড়া কোনো জাহাজ ফ্রান্স অভিমুখে রওনা না হয়। তার ধারণা মিলেডি হীরে দুটো নিয়ে এখনো লন্ডনেই আছে। যেহেতু ডিউক ইংল্যান্ডের রাজার ঘনিষ্ট বন্ধু এবং মন্ত্রিসভায় তাঁর বিশেষ ক্ষমতা থাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ যথাযথ পালন করল।
নির্দিষ্ট দিনে জহুরী হীরে বসানো নেকলেশটা সম্পূর্ণ করে বাকিংহামের কাছে নিয়ে এলো এবং বলল,–‘মহামান্য ডিউক এই বারোটা হীরের বোতামের মধ্যে আপনি আলাদা করুন কোন দুটো হীরে আমি নতুন বসিয়েছি?’
হাতে নিয়ে অনেক নেড়েচেড়েও ডিউক বলতে পারলেন না নতুন দুটো কোনটা। খুশী হয়ে ডিউক জহুরীর প্রাপ্য মিটিয়ে দিলেন।
দ্য অ্যাট্রাগঁন যখন বাকিংহামের কাছে এসেছিল সেই দিন থেকে আর মাত্র পাঁচ দিন বাকি ছিল বল নাচের অনুষ্ঠানের, তার থেকে দু-দিন অতিক্রান্ত, হাতে আর মাত্র তিন দিন সময়, সময় খুবই কম, নির্দিষ্ট সময়ের সামান্য দেরি হলেই রানীর চরম বিপদ আর ধূর্ত কার্ডিনাল রিচিলিউ-এর চক্রান্ত সার্থক হবে।
ডিউক বাকিংহাম দ্রুত ডেকে পাঠালেন মঁসিয়ে দ্য দ্য অ্যাট্রাগঁনকে।
‘এই যে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন হীরের নেকলেশ, যেটা নিতে তুমি ফ্রান্স থেকে অনেক পরিশ্রম করে এসেছ। আর সচক্ষে দেখলেন হীরের হারটা ফেরত দিতে একটা মানুষের যা সাধ্য আমি তার সবটাই করেছি।’
‘মহামান্য ডিউক আমি যা নিজের চোখে দেখলাম রানীকে তার সবটাই জানাবো। কিন্তু আপনি আমায় হীরের হারটাই দিলেন, হীরের হার রাখার বাক্সটা দিলেন না।’ দ্য অ্যাট্রাগঁন বলল।
‘না দ্য অ্যাট্রাগঁন এটা আমি ফেরত দিচ্ছি না, আশা করি বাক্সটা নিয়ে কোনো গোলমাল হবে না। এ্যানকে বলো স্মৃতি হিসেবে আমি এটাই রেখে দিলাম।’
‘মহামান্য ডিউক আপনি যেমন বললেন, আমি আমাদের রানীকে তাই বলবো।’
‘এবার বলো দ্য অ্যাট্রাগঁন আমি তোমায় কত অর্থ দেবো? হারটা ফেরৎ পেতে আমার কাছে তোমাকেও অনেক হয়রান হতে হয়েছে’ ডিউক বললেন।
দ্য অ্যাট্রাগঁন গর্বিত ভাবে বলল,–‘মহামান্য ডিউক আপনি জানেন আমি আমাদের রাজা আর রানীর একজন বিশ্বস্ত ভূত্য, তাদের জন্য আমি সকল সময় প্রাণ দিতে প্রস্তুত, অতএব আপনার কাছ থেকে অর্থ নেবার কোনো প্রশ্নই আসছে না।’
‘আমি জানি যুবক দ্য অ্যাট্রাগঁন তুমি একজন সৎ আর বিশ্বাসী রাজকর্মচারী। তোমার আচরণে আমি মুগ্ধ।’
অভিবাদন জানিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন যখন চলে যাবার জন্য পিছু ফিরছে এমন সময় ডিউক তাকে বললেন, ‘দ্য অ্যাট্রাগঁন তুমি চলে যাচ্ছ, যাও কিন্তু আমার প্রশ্ন, তুমি কীভাবে রওনা দেবে?
‘মহামান্য ডিউক আপনি ঠিকই বলেছেন, পথে দেরি করা যাবে না। আমি বিপদকে ভয় পাই না কিন্তু আমার সামান্য দেরি হলে আমাদের রানী ভীষণ বিপদে পড়বেন।
‘এখান থেকে তুমি বন্দরে যাও সেখান থেকে তোমায় ‘সান্ড’ বন্দরে নিয়ে যাবার জন্য লোক প্রস্তুত থাকবে। হ্যাঁ এই চিঠি জাহাজের ক্যাপটেনকে দেবে, ক্যাপটেন ‘সান্ড’ থেকে তোমায় নিয়ে যাবে আর একটা ছোট্ট বন্দরে। বন্দরটার নাম ‘সেন্ট ভাব্রি’। মনে রাখবে বন্দরটা জেলেদের জন্য।’
‘তারপর?’ মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন জিজ্ঞেস করল।
‘হ্যাঁ!’ তারপর সেখানে পৌঁছে তুমি দেখতে পাবে একজন জেলের ছোট্ট একটা কুঁড়ে ঘর। তার কাছে পৌঁছে তুমি ফরাসি ভাষায় ‘এনাভেন্ট’ শব্দটা বলবে। শব্দটা মিত্রতা সূচক সাংকেতিক শব্দ। ওই শব্দটা বলার পর ছেলেটা তোমায় জিন লাগানো শক্তিশালী একটা ঘোড়া দেবে এবং তুমি কোন পথে দ্রুত প্যারিস পৌঁছাতে পারবে দেখিয়ে দেবে। আর হ্যাঁ, তুমি সকল সময়ই সতর্ক থাকবে, যাতে পথে তোমার কোন বিপদ না হয়। আমি যা যা বললাম তোমার নিশ্চয়ই মনে থাকবে?’