ডিউককে উদ্দেশ্য করে একটা চিঠি লিখলেন রানী এ্যান এবং রানীর ভাই স্পেনের রাজার দেয়া উপহারের একটা দামি আংটি মাদাম বোনাসিক্সকে দিয়ে সেটার বিনিময়ে অর্থের সংস্থান করে একজন বিশ্বাসী অনুচরকে লন্ডনে যাবার জন্য রানী অনুরোধ করলেন।
চিঠি আর আংটি নিয়ে মাদাম বোনাসিক্স বাড়ি ফিরে এলেন। বাড়ি ফিরে মাদাম বোনাসিক্স দেখলেন তার স্বামী আট দিন পর বাড়ি ফিরে এসেছেন। দীর্ঘ বিবাহিত জীবনে তাদের মধ্যে এত দিনের বিচ্ছেদ এর আগে কোনো দিন হয়নি।
আনন্দে উভয় উভয়কে আলিঙ্গন করল। মাদাম বোনাসিক্স বলল–‘আমাদের বোধহয় এবার কপাল ফিরবে, তোমায় একটা জরুরি কাজে লন্ডন যেতে হবে।’ স্বতস্ফুর্ত স্বরে মাদাম বলল। লন্ডন?’ মঁসিয়ে বোনাসিক্স বলল ‘লন্ডন আমার কোনো কাজই নেই, আর আমি তোমার ভালোর জন্যই বলছি, রানীর ভালোর জন্য কিছু করতে যেও না। কেন করবে? আমাদের রানী ফরাসি মহিলা নন তিনি একজন অষ্ট্রিয়ান!’
‘হায় মঁসিয়ে বোনাসিক্স তুমি অবিবেচকের মতো এ-সব কি বলছ?’
‘হ্যাঁ আমি ঠিকই বলছি, এটা একটা চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়। মঁসিয়ে কার্ডিনাল পরিষ্কার ব্যাপারটা আমায় বুঝিয়ে দিয়েছেন।’
কার্ডিনাল-এর সাথে তোমার পরিচয় হয়েছে? ‘হ্যাঁ, পরিচয় মানে বন্ধুত্ব, তিনি আমার বন্ধুত্ব চেয়েছেন। আমি তাঁর সেবক এবং বন্ধুও বটে। আমার আর এক বন্ধু কাউন্ট দ্য রকফোর্ট। ওই যে ব্যাগটা দেখছ ওর মধ্যে অনেক স্বর্ণ মুদ্রা আছে সব আমার।’
‘রকফোর্ট!’ মাদামের চোখ জ্বলতে লাগল–‘রকফোর্ট! তোমার স্ত্রীকে অপহরণ করেছিল তার কাছ থেকে তুমি টাকা নিয়েছ!’
‘আমার স্ত্রী অপহৃত হয়েছিল সম্পূর্ণ রাজনেতিক কারণ। দেশের স্বার্থে একজন রমনী যদি অপহৃত হয়ই সেটা কোনো দোষের নয়। একজন নারীর চেয়ে দেশ অনেক বড়, আর এই দেশকে রক্ষা করতে পারেন এক মাত্র আমার বন্ধু–কার্ডিনাল রিচিলিউ।’
মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্স ভেবে দেখলেন কার্ডিনাল-এর কাছে আমার মহত্ব প্রকাশ করার এই একটা সুযোগ। বাকিংহামকে লেখা চিঠিটা মাদামের কাছে যে করেই হোক আমায় হস্তগত করতে হবে, কিন্তু আমি জানি আমার স্ত্রী আমায় আর বিশ্বাস করে না আমায় কোনো দলেন আশ্রয় নিতে হবে।
‘মাদাম তুমি যে এখনি এখানে আসবে তা আমার জানা ছিল না, এদিকে আমায় একজনের সাথে এখনি দেখা করতে হবে, তুমি একটু অপেক্ষা করো, আমি ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই ফিরে আসছি। সম্ভবত আমাকেই চিঠিটা নিয়ে লন্ডন যেতে হবে কেন না কার্ডিনাল-এর বন্ধুত্বের চাইতে স্ত্রীর ভালোবাসা অনেক বেশি মূল্যবান।’
মঁসিয়ে বোনাসিক্স সোজা চলে গেলেন কার্ডিনাল-এর প্রাসাদে কাউন্ট রকফোর্টকে এই গোপন চিঠির কথা জানাতে।
মঁসিয়ে বোনাসিক্স চলে যাবার পর মাদাম মৃদু হাসলেন ‘হায়! আমার প্রিয় স্বামী, তোমায় আমি এতটুকু বিশ্বাস করি না, সেই মুহূর্তে কি করা উচিত মাদাম যখন ভাবছেন,-এমন সময় দ্যা অ্যাট্রাগঁন সেখানে উপস্থিত হলো।’
হতবাক মাদাম বললেন—’হায় ঈশ্বর, তুমি দেখছি আমাদের সমস্ত কথাই শুনেছ!’
‘হ্যাঁ মাদাম-এই ঘরের ওপরেই আমার ঘর আর সেখান থেকে আপনাদের ঘরের যাবতীয় কথা আমার শুনতে অসুবিধে হয় না।’
‘বেশ ভালো কথা সব কথা, শুনে তুমি কি বুঝলে? এর এখন কি করাই বা উচিত?’
‘আমি এটাই বুঝতে পারছি রানীর এই মুহূর্তে একজন বিশ্বাসী লোক দরকার যে একটা গোপন চিঠি নিয়ে দ্রুত লন্ডন যেতে পারবে। মাদাম আমার মনে হয় আমার অনুমান ভ্রান্ত নয়’–বলল দ্য অ্যাট্রাগঁন।
‘ঠিকই বলেছ! কিন্তু কে সেই লোক যাকে আমি বিশ্বাস করে রানীর চিঠি দিতে পারি!’
গর্বিত স্বরে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন বলল–‘মাদাম আমিই সেই লোক যে এখনি পত্রবাহক হয়ে লন্ডন যেতে প্রস্তুত।’
‘যতখানি বিশ্বাস আপনি নিজেকে করেন মাদাম।’
‘ঠিক আছে মঁসিয়ে–তবে একটা কথা মনে রেখো, আমার সাথে তুমি যদি বিশ্বাসঘাতকতা করো তাহলে আমি আত্মঘাতিনী হবো আর আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র তুমিই দায়ী থাকবে।’
মাদাম বোনাসিক্স উত্তর দেবার ঠিক সেই মুহূর্তেই রাস্তায় কার কথা বলার আওয়াজ ভেসে এলো। মাদাম বোনাসিক্স বললেন ‘মঁসিয়ে আমি নিঃসন্দেহে আমার স্বামী আমার বিশ্বাসঘাতক স্বামী কার্ডিনাল-এর লোক নিয়ে চিঠিটা উদ্ধারের জন্য আসছে।’
‘মাদাম আপনি দয়া করে আমার ঘরে চলুন। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি সেখানে আপনার মর্যাদা নষ্ট হবে না। সময় নেই মাদাম আমায় অনুসরণ করুন।’
মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের ঘরে মাদাম বোনাসিক্সও অ্যাট্রাগঁন ঢুকে পড়তেই মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্স কার্ডিনাল-এর লোক নিয়ে তাঁর ঘরে এলেন। মঁসিয়ে বোনাসিক্স বললেন তাঁর স্ত্রী সম্ভবত আগেই বিপদ আঁচ করে লুভেতে আশ্রয় নিয়েছে। আগন্তুক খুবই বিরক্ত হয়ে চিঠিটা বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশ করার আগন্তুক আদেশ দিয়ে মঁসিয়ে বোনাসিক্সকে বলল যেন দ্রুত চিঠিটা উদ্ধার করে তাকে পৌঁছে দেয়া হয়, পৌঁছে দেবার সাথে সাথেই কার্ডিনালকে সে চিঠির পাঠিয়ে দেয়া হবে।
অন্ধকারে চুপিসারে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন সেই রাত্রেই ক্যাপটেন মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলের সাথে গিয়ে দেখা করল। রানীর বিপদের কথা জানিয়ে বলল এখনি সেই চিঠি নিয়ে সে লন্ডন যেতে চায় আর তার জন্য পনেরো দিনের দরকার।