মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্স বাস্তিলের অল্প আলোর পরিসরে কার্ডিনালকে চিনতে না পেরে বললেন–
‘মঁসিয়ে কার্ডিনাল ডি রিচেলিউ মিথ্যে চিঠির আশ্রয় নিয়ে বাকিংহানের ডিউককে প্যারিসে নিয়ে এসেছেন এবং তাঁকে ও আমাদের প্রিয় রানীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন।’
‘আপনার স্ত্রী এই কথা আপনাকে বলেছে?’ চিৎকার করে বলল কার্ডিনাল।
‘হ্যাঁ মঁসিয়ে আমার স্ত্রী আমায় একথা বলেছিল।’
একটা লোককে ডেকে কার্ডিনাল আদেশ করল ‘যাও রকফোর্টকে এখনি পাঠিয়ে দাও।’
রকফোর্ট আসতেই মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্স চিৎকার করে বলে উঠল ‘এই সেই লোক, যে আমার স্ত্রীকে অপহরণ করেছিল।’ একটা ঘণ্টা বাজাতেই দু-জন রক্ষী এসে অভিবাদন করে দাঁড়াল কার্ডিনাল এর সামনে। কার্ডিনাল আদেশ দিলেন ‘একে আমার অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত দুর্গে বন্দি করে রাখো।’ কার্ডিনাল আর রকফোট একটা ছোট রাস্তা দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে যেতেই দুর্গের দরজা বন্ধ হলো। এরই মধ্যে মঁসিয়ে বোনাসিক্স রকফোর্ট আর কার্ডিনাল-এর আলোচনা দরজায় কান পেতে শুনল।
রকফোর্ট কার্ডিনালকে জানাল—
‘রানী আর ডিউকের সাক্ষাৎ হয়েছে।’
‘কোথায়?’
‘লুভেতে।’
‘কখন তাদের মধ্যে সাক্ষাৎ হলো?’
‘প্রায় রাত সাড়ে বারোটায় রানীর দাসীরা লুকিয়ে লুভের পেছনের দরজা দিয়ে ডিউককে নিয়ে যায়।’
‘তারপর?’
‘তারপর রানী তাঁর দাসীদের উদ্দেশ্যে বলে তোমরা দশ মিনিটের জন্য এখানে অপেক্ষা করো আর রানী ডিউককে নিয়ে প্রাসাদের ভেতর নিজের ঘরে নিয়ে যায়।’
‘তাঁর সাথে কোনো দাসীই ছিল না।’
ক্রুব্ধ স্বরে কার্ডিনাল বলল–‘বল রকফোর্ড, ডোনা তোমায় আর কি বলেছে।’
‘মঁসিয়ে আমি যতটুকু জেনেছি তা আপনাকে সবই জানাচ্ছি।’
‘ডিউক ঘরের মধ্যে প্রবেশ করেই দেখলেন, রানীর সুন্দর মুখ ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। রানী ডিউককে দিয়ে প্রতিশ্রুতি আদায় করলেন যে ডিউক যেন শীঘ্রই রাজদূত হিসেবে সালে রক্ষীবাহিনী নিয়ে একবার ফ্রান্সে আসে, আহলে রানী বুঝতে পারবে যে ডিউক নিরাপদ।’
এরপর ডিউক বললেন–‘খুব ভালো, জানো এ্যান আমি যখন প্যারিস পৌঁছলাম তখন বুঝলাম ষড়যন্ত্র করে তোমার নামে চিঠি দিয়ে আমায় এখানে এনেছে। আমি সেখান থেকেই ফিরে যেতে পারতাম, কিন্তু মনে হলো একবার তোমার সাথে দেখা করেই যাই। আর সময় নেই আমি চলে যাচ্ছি–আচ্ছা এ্যান তুমি কি আমায় এমন কিছু দিতে পারো না যেটা আমি পড়ে থাকব আর তোমার কথা স্মরণ করব! একটা চমৎকার আংটি কিংবা গলার চেন?’
একটু থেকে রকফোর্ট বলল, ‘ডোনা এসটেকেনা আমাদেরই লোক,’ সে বলল। এরপর রানী সিন্দুক খুলে গোলাপ কাঠের একটা সুন্দর বাক্স বার করল আর তার থেকে উজ্জ্বল একটা নেকলেশ বার করল যাতে বারোটা হীরে বোতামের মতো বসানো ছিল। তাকে মনে রাখার জন্য ডিউককে সেটা দিল।
খুব খুশির সাথে কার্ডিনাল বলল–‘রকফোর্ট হতাশ হবার কোনো কারণ নেই, সব কিছুই বিফল হয়ে যায়নি, ডিউক আমাদের ফাঁকি দিয়ে প্যারিসে রানীর সাথে গোপনে দেখা করে আবার ইংল্যান্ড ফিরে গিয়েছে। আমি ভেবে ছিলাম আমাদের সব মতলব-ই বিফলে গেল কিন্তু না রকফোর্ট আমাদের হাতে এখনও যথেষ্ট প্রমাণ আছে।’
রকফোর্ট বলল,–‘মঁসিয়ে আমায় পরবর্তী নির্দেশ দিন।’
‘হ্যাঁ, তুমি ভিটারীকে পাঠিয়ে দাও।’
সশস্ত্র ভিটারী অভিবাদন করে কার্ডিনাল-এর সামনে দাঁড়াল, অদ্ভুত এই ভিটারী লোকটি। মুখে কোনো কথা নেই যন্ত্রের মতো সে শুধু নির্দেশ মেনে চলতেই অভ্যস্ত।
‘শোনো ভিটারী এই চিঠি আর দু’শ স্বর্ণ মুদ্রা নিয়ে তুমি এখনই ইংল্যান্ড চলে যাও। সেখানে মেলাডীকে এই চিঠিটা দেবে। এই চিঠি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অন্য কেউ যেন চিঠির কথা না জানতে পারে, একমাত্র মিলাডীর হাতেই এটা তুমি দেবে। আর যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি তুমি রওনা হবে রাস্তায় কোথাও দাঁড়াবে না।’ ভিটারী কোনো কথা না বলে শুধু অভিবাদন জানিয়ে চলে গেল। চিঠিতে লেখা ছিল–
‘মিলাডী–
প্রথম যে নাচের অনুষ্ঠানে বাকিংহামের ডিউক উপস্থিত থাকবে সেই অনুষ্ঠানে দেখবে ডিউক বারোটা হীরের বোম বসানো একটা হার গলায় পরবে তুমি যতখানি সম্ভব ডিউকের সামনে থাকতে আর সময় মতো সুযোগ বুঝে তার থেকে দুটো বোতাম খুলে নেবে আর ওই দুটো তোমার হেফাজতে আসার সাথে সাথেই আমায় জানাবে।’
কার্ডিনাল রিচেলিউ রাজপ্রাসাদে গিয়ে এক গোপন কক্ষে রাজাকে জানাল–‘মহাশয়, আপনি হয়তো জানেন না বাকিংহামের ডিক গত পাঁচ দিন প্যারিস শহরে ছিল আর মাত্র আজ সকালেই লন্ডন ফিরে গিয়েছে।’
‘মঁসিয়ে দ্য বাকিংহাম প্যারিসে ছিল? প্যারিসে আসার তাঁর উদ্দেশ্য কি?’ রাজাকে উদ্বিগ্ন দেখালো।
‘এটা তো বোঝাই যাচ্ছে আপনার বিরুদ্ধে চক্রান্ত ছাড়া আর কি-ই বা উদ্দেশ্য থাকতে পারে!’
‘মঁসিয়ে কার্ডিনাল আপনি কি জানেন বাকিংহাম আমার স্ত্রী অ্যানের সাথেও দেখা করেছিল কি না?’
‘আপনাকে বলতে কুণ্ঠা হচ্ছে ডিউক আপনার স্ত্রীর সাথেও দেখা করেছিল এ-সব আমি গোপন সূত্রে জেনেছি।’
‘আমার স্ত্রী… আমার স্ত্রী অ্যান…’
‘মহামান্য রাজা আপনি উত্তেজিত হবেন না, আমি নিঃসন্দেহে আপনার স্ত্রী আপনাকে ভালোবাসেন।’
‘স্ত্রী লোকেরা দুর্বল মঁসিয়ে কার্ডিনাল’ রাজা বললেন, ‘আর যদি আমার স্ত্রী সত্যিই আমায় ভালোবেসে থাকে তাহলে আমার কাছ থেকে ভালোবাসাই পাবেন।’