- বইয়ের নামঃ থ্রি মাস্কেটিয়ার্স
- লেখকের নামঃ আলেকজান্ডার ডুমা
- প্রকাশনাঃ শিশুরাজ্য প্রকাশন
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর,গোয়েন্দা কাহিনী
থ্রি মাস্কেটিয়ার্স
১. ফ্রান্সের ছোট্ট শহর মেয়ঙ্গ
[ফরাসি সাহিত্যের অন্যতম লেখক আলেকজান্ডার দ্যুমা তাঁর জীবনদশায় যে কয়টি বই রচনা করেছেন তার মধ্যে অন্যতম হলো-দ্য থ্রি মাস্কেটিয়ার্স এবং টুয়েনটি ইয়ার্স আফটার। সপ্তদশ শতকের পটভূমি নিয়ে রচিত দ্য থ্রি মাস্কেটিয়ার্স অ্যাডভেঞ্চার কাহিনিটি দ্যুমা রচনা করেন ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে। এ ক্ল্যাসিক সাহিত্যটির বিপুল জনপ্রিয়তার কারনে দ্যুমা পরবর্তীতে বইটির সিকুয়েল বা দ্বিতীয় খণ্ড রচনা করেন। ১৮৪৫ সালে দ্যুমা দ্য থ্রি মাস্কেটিয়ার্স-এর সিকুয়েল টুয়েনটি ইয়ার্স আফটার রচনা করেন। যথারীতি এ বইটিও পাঠকপ্রিয়তা পায়। উল্লেখ্য, বই দুইটি নিয়েই অসংখ্যবার মঞ্চ নাটক এবং সিনেমা তৈরি হয়েছে।]
মাস্কেটিয়ার্স / কিশোর ক্লাসিক / আলেকজান্ডার দ্যুমা / অনুবাদ ও সম্পাদনা – ফারুক হোসেন
১৬২৫ খ্রিস্টাবদের এপ্রিল মাসের প্রথম সোমবার ফ্রান্সের ছোট্ট শহর ‘মেয়ঙ্গ’-এ একটা হৈচৈ দেখা দিল। সেই সময় ফ্রান্সে যুদ্ধ বিগ্রহ খুব সাধারণ বিষয় ছিল। রাজা যুদ্ধ করত পোপ ও মন্ত্রিসভার উচ্চাভিলাষি ‘রিচেলিউ’-এর সঙ্গে। এই ‘রিচেলিউ’ নিজেকে রাজার সমান ক্ষমতাসম্পন্ন বলে ভাবতেন। পোপ বা গীর্জার আয়ত্তে যেমন অনেক জমিজমা থাকত তেমনি অনেক সৈন্য সামন্তও থাকত। সার ‘স্পিন’ সে তো সব সময়ই যুদ্ধ করার প্রবৃত্তি নিয়ে থাকত। যুদ্ধের আতঙ্ক থাকলেও সেই সময় কয়েকটা দিন শহরে এবং আশে পাশে কোনো গোলমাল ছিল না।
কিন্তু সেই নির্দিষ্ট দিনটায় অর্থাৎ এপ্রিল মাসের প্রথম সোমবার ‘মেয়ঙ্গ শহরের একটা সরাইখানার বাইরে উৎসুক জনতা ভিড় জমাতে লাগল। জনতার এই উত্তেজনা ও ভিড়ের কারণ ছিল একটি যুবককে কেন্দ্র করে। যুবকটির একটু বর্ণনা দেয়া যাক। যুবকটির পরনে ছিল একটা পশমের। জামা, লম্বা বাদামি রঙের মুখমণ্ডল, শক্ত সমর্থ চোয়াল, মাথায় ছিল চ্যাপ্টা। টুপি তাতে কয়েকটা পালক হাওয়ায় উড়ছে। তার চোখদুটো ছিল বড় বড় এবং বুদ্ধিমত্তার পরিপূর্ণ, নাকটা সামান্য বাঁকা হলেও শিল্পীর বাটালী দিয়ে কাটার মতো তীক্ষ্ণ। কোনো অভিজ্ঞ লোক হঠাৎ তাকে দেখলে একটা চাষির ছেলে বলেই ভুল করবে। কিন্তু যুবকটির কোমরের পাশে চামড়ার খাপে ঢাকা যে বিরাট তলোয়ারটা ঝুলছে সেটা দেখলে অবশ্য তাকে চাষির ছেলে বলে মনে হবে না।
এবার যুবকটির ঘোড়াটার, ভুল হলো ওটা ঘোড়া নয় একটা টার্টু। সেটার বর্ণনা দেয়া যাক, কনেনা উৎসুক জনতার এই গোলমাল তার টাটুকে কেন্দ্র করেই। যে কোনো অভিজ্ঞ লোকই বলবেন টাটুটার বয়স কম করেও বারো থেকে চৌদ্দ বছর, গায়ের রঙ হলুদ, ল্যাজটা নেড়ি কুকুরের মতো। সেখানে একটাও চুল নেই, টাট্টুটা চলতে গিয়ে মাথাটা এতই সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে দিয়েছে যে গাঁট বার করে হাঁটুকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। আর টাট্টা দিনে আঠাশ মাইলের বেশি যেতে পারে না বা তার সাধ্যে কুলোয় না, সেটা বেশ ভালো ভাবেই বোঝা যায়।
মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন প্যারিসের দিকে যাত্রার উদ্দেশ্যই ফ্রান্সের এই ছোট শহরে এসে পৌঁছেছে, মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রগনের আন্তরিক ইচ্ছে যে সে রাজার রক্ষী বাহিনীর একজন বন্দুকধারী সৈনিক হিসেবে তার জীবন উৎসর্গ করবে।
যাই হোক মেয়ঙ্গ শহরের দিকে আবার তাকানো যাক। মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের পোশাক, টাটু ও তার চালচলন সবটাই খুব হাস্যকর ছিল। শহরের লোকেরা এই দৃশ্য কখনও দেখেনি সেই কারণে সকলের মধ্যে একটা চাপা হাসি ফুটে উঠেছিল কিন্তু দ্য অ্যাট্রাগঁনের দীপ্ত চোখ ও লাম্বা তলোয়ারটা দেখে হাসিটা সকলে চেপেই রেখেছিল।
মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন তার টাট্টু থেকে সরাইখানার সামনে নামলো কিন্তু সরাইখানা থেকে কোনো ভূত্য বা আর কেউ বেড়িয়ে এসে টাটুর জিনটা ধরে সেটাকে আস্তাবলে নিয়ে গেল না।
হঠাৎ মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের নজর পড়ল সরাইখানার একতলার একটা খোলা জানালার দিকে। সুন্দর পোশাক পরা প্রায় চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সের এক সুপুরুষ লোক বসে আছে, উল্লেখ করার মতো একটা জিনিসই বারবার চোখে পড়ছিল সেটা একটা ক্ষত চিহ্ন। ক্ষত চিহ্নটা কপালের বাঁ-পাশে, বেশ গভীর।
লোকটি যেখানে বসেছিল তার পাশে বসেছিল আরও দু-জন লোক। ক্ষতচিহ্ন লোকটা তার সাগরেদ দু-জনকে কিছু বলছিল আর লোক দুটো খুব মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনছিল।
লোকটা এবার মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের দিকে দৃষ্টি ফেরাল–কিছুক্ষণ সে দিকে তাকিয়ে তার টাট্টু সম্বন্ধে এমন কিছু চোখা মন্তব্য করল যে তার। সাগরেদ দু-জন উচ্চস্বরে হেসে উঠল।
‘এই যে ভদ্র মহাশয়–আপনার হাসবার কারণটা কি জানতে পারি? জানতে পারলে আমরা সবাই একসাথে হাসিতে যোগ দিতে পারি।’
মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের কথাটা লোকটার কানে যেতে টাটু থেকে চোখ তুলে অ্যাট্রাগঁনের দিকে তাকিয়ে বলল–‘মহাশয় আমি আপনার সাথে কোনো কথা বলছি না।’
মৃদু হেসে কপাল কাটা সুপুরুষ লোকটা সরাইখানার জানলা থেকে সরে এসে ধীর পদক্ষেপে সরাইখানার প্রধান ফটক পেরিয়ে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের সামনে দাঁড়াল।