‘তা আমি আগেই জানতাম’–অ্যারামিস বলল।
.
১০.
আজ তিনদিন দ্যার্তেগা আর পোৰ্থস রুইন প্রাসাদে বন্দি হয়ে আছে। মাটির নিচে কবরখানায় নয়। ম্যাজারিন এখনও অতটা সাহস করে উঠতে পারেনি। কারণ ফ্রন্ডির নায়ক অ্যাথোস ও অ্যারামিস এখনও বাইরে আছে। দ্যার্তেগা পোর্থসের অপঘাতে মৃত্যু হলে, তাই নিয়ে একটা চাল চালবে ফ্রন্ডির দল। ম্যাজারিন যে মিটমাটের চেষ্টায় আপ্রাণ পরিশ্রম করে যাচ্ছে সেটা একটা দারুণ হোঁচট খাবে।
কাজেই এখনও জীবিত দ্যার্তেগা এবং পোর্থস। তবে যতক্ষণ না ফ্রন্ডি সন্ধি করছে ততক্ষণই তাদের জীবনের মেয়াদ।
বন্দিশালার জানালায় সন্ধ্যার সময়ে এসে কমিঞ্জে দেখা দিল। নমস্কার লেফটেন্যান্ট। নমস্কার দ্যা ভ্যালো।
কমিঞ্জে রীতিমতো শ্রদ্ধা করে দ্যার্তেগাকে। বীরের মর্যাদা বীরই বোঝেন। তাছাড়া দ্যার্তেগার সাহায্যে কমিঞ্জের জীবন একদিন বেঁচে গিয়েছিল। এই ফ্রন্ডির যুদ্ধে বাধাবার পরেই ব্রুসেলকে বন্দি করার সময়। কমিঞ্জকে প্রতি নমস্কার জানিয়ে দ্যার্তেগা বলল–খবর কি লেফটেন্যান্ট?
‘খবর এই যে আপনাদের বন্ধু কাউন্ট দ্যা-লা-ফেয়ারও বন্দি হয়ে এসেছেন। তার অনুরোধেই খবরটা আপনাকে দিতে এলাম।
‘অ্যাথোস বন্দি? এখানে?’–দ্যার্তেগা বিমর্ষ না হয়ে উফুল্ল হয়ে উঠল। তার ধারণা দুইজনকে যদিও বন্দি করে রাখতে পেরেছে ম্যাজারিন, তিনজনকে পারবে না। হ্যাঁ, এই প্রাসাদের অন্য অংশে।’ এই বলে কমিঞ্জ বিদায় নিল। ম্যাজারিনের অজান্তে বন্দিদের সঙ্গে বেশি কথা বলার সাহস তার নেই।
দুইদিন এই প্রাসাদে কাটিয়েছে দ্যার্তেগা। চক্ষু বুজে দিন কাটায়নি। লক্ষ করেছে প্রতি সন্ধ্যায় দুইজন প্রহরী এসে টহল দেয় এই বন্দিশালার সামনে। আর ম্যাজারিন বন্দিশালার সামনে দিয়ে রোজ একবার বাগানের দিকে বেড়াতে যায়। ফিরে আসে আধঘণ্টা পরে।
সেদিন সন্ধ্যায় দুই বন্ধু পরিপাটি করে ডিনার খেলো। তারপর দ্যাগো বলল, ‘পোর্থস, তোমার গায়ের জোর কমে যায়নি তো।
‘কমবে’–অবাক পোর্থস দুই হাতের মাংস পেশী দুলিয়ে দেখাল বন্ধুকে ‘কি মনে হয়?
‘মনে হয় যে এই জানালার মোটা মোটা লোহার শিকল তুমি বাঁকিয়ে ফেলতে পার ইচ্ছে করলে।
‘ফেলব নাকি?’–বলেই ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল পোর্থস। তারপর দ্যার্তেগা আপত্তি করছে না দেখে জানালার একটা শিক দুই হাতে ধরে এমন টান দিল যে মাঝখানে ধনুকের মতো বেঁকে গেল শিকলটা এবং দুই মাথা সিমেন্টের খাজ থেকে চড়চড় করে উঠে বেরিয়ে এল পোর্থসেনরের হাতে।’
‘ঠিক আছে। এখন দেখি ওই ফাঁক দিয়ে তুমি বেরুতে পার কিনা? চেষ্টা করে দেখে পোর্থস বলল–পারি তবে ছাল-চামড়া খানিক উঠে যাবে বোধ হয়।—প্রাণ বাঁচার জন্য ছাল চামড়া কিছু যদি দিতে হয় দিও। এখন শোনো দুজনে চুপে চুপে বেশ কিছুক্ষণ পরামর্শ হলো। অবশ্য এক তরফা পরামর্শ ‘দ্যার্তেগা বলে যায়। পোর্থর্স মাথা নাড়ে।
একটু পরেই বন্দিশালার সামনে দুইজন প্রহরী দেখা গেল। একজন ডানে দেখতে দেখতে চলে গেল। আর একজন বাঁ দিয়ে যায়, জানালার সামনে দিয়ে ‘নমস্কার সাথী, বড় শীত বটে, উত্তর দেয় প্রহরী। দ্যার্তেগার পরিচয় মেজাজে ভদ্রতা বজায় রেখে উত্তর দেয়াতে সে কোনো ক্ষতি দেখল না।
‘কার্ডিনাল একটা ভালো মদ পাঠিয়েছিলেন। দুজনে আর কত খাব? একটা আস্ত বোতলই রয়েছে, জানালার ধারে দাঁড়িয়ে এক গ্লাস খেয়ে যান না–শীতটা কমবে।
‘বলছেন যখন, তা দিন, ধন্যবাদ।’
দ্যার্তেগা মদ ঢালছে গ্লাসে, পোর্থস জানালার পাশে দাঁড়িয়ে, জানালার কাছে প্রহরি আসতেই পোর্থস দুই হাত বাড়িয়ে তার গলা টিপে ধরল। সে শক্ত মুঠির চাপে দম বন্ধ বেচারীর। চোখের পলকে দুই হাতে তাকে উঁচু করেছে পোর্থস আর শিকের ফাঁক দিয়ে তাকে টেনে এনেছে ভেতরে।
একটা কাপড় মুখে গুঁজে দেয়া। পিছনে হাত বাঁধা এবং পোশাক খুলে বিছানায় কম্বল চাপা দিয়ে রাখা কয়েক সেকেণ্ডের কাজ। পোর্থসই পোষাকটা পরে নিল চটপট। হতে পায়ে ছোট হলো এবং সেলাইগুলো পটপট করে ছিঁড়ে গেল দু’এক জায়গায়। কিন্তু তাতে কি? দূর থেকে দেখে কে বুঝবে?
সুইস গার্ডের পোষাক পরে পোর্থস বাইরে এসে দাঁড়াল জানালা গলে। ডান দিক থেকে টহল দিয়ে অন্য প্রহরীও এসে পড়ল। জানালার কাছাকাছি এসে সে জিজ্ঞাসা করল–‘দাঁড়িয়ে করছ কি?
সে কথার উত্তর পেল না। পোর্থস শক্ত মুঠি তারও গলা টিপে ধরল। তারপর তাকে টেনে হিঁচড়ে ঘরের ভেতর তুলে ফেলল দ্যাগো আর পার্থস মিলে। তারও পোষাক খুলে নিয়ে বেঁধে কম্বল চাপা দিতে আর ক’সেকেন্ডের কাজ। সে পোষাকটি পড়ল দ্যার্তেগা।
এবার দুইজনে জানালা দিয়ে বাইরে চলে এল। একজনে ডানে, অন্যজন বামে টহল দিতে লাগল মনোযোগের সঙ্গে।
কিছুক্ষণ পরে ম্যাজারিন মূল প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে এলেন। সঙ্গে তার খাস চাকর বেদুঈন। ম্যাজারিন আদেশ দিল–‘আমি একবার বাগানটা ঘুরে আসি। তুমি কাউন্ট দ্যা-লা-ফেয়ারকে বলল আমি আধঘণ্টা পরে তার ঘরে গিয়ে তার কথা শুনব। তার ঘরের চাবিটা আমায় দাও।
বেদুঈন চাবি দিয়ে চলে গেল।
হাতে একটি লণ্ঠন নিয়ে ম্যাজারিন ধীরে ধীরে চলেছেন। সুই প্রহরীদের বলছেন সঙ্গে আসতে হবে না। এখানে অপেক্ষা কর। কাউন্ট দ্যা-লা ফেয়ারের ঘরে যাওয়ার সময় তোমাদের সঙ্গে নেব। কোনো বন্দির ঘরে একা একা ঢুকতে নেই। কারণ সাধারণত বন্দিরা মরিয়া হয়।