এই সময়ে একজন তাঁকে চার বীরের কথা বলল, চারজনই সৈনিক তারা, কিছুদিন আগে দেশের তদানীন্তন পরাক্রমশালী কার্ডিনান রিশনকে পরাজিত করেছিল, তাদের একজনের নাম লেফটেনান্ট দ্যার্তেগা।
ম্যাজারিন উফুল্ল হয়ে উঠলেন। তখনই ডেকে পাঠালেন দ্যার্তেগাকে। একটা চুক্তি হলো তাদের মধ্যে। চুক্তিটা হলো এই যে, আসন্ন প্রজা বিদ্রোহে দ্যাগো তার আগের তিন বন্ধুকে নিয়ে সমর্থন ও সাহায্য করবে ম্যাজারিনকে বদলে ম্যাজারিন দ্যার্তেগাকে দেবেন ক্যাপ্টেন পদ এবং বন্ধুদের যে যা চাইবে তাকে তা দেবেন।
দ্যাগে বিশ বছর কোনো খবর রাখে না বন্ধুদের। ম্যাজারিনের কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়ে, সে তাদের খুঁজতে বের হলো, কে কোথায় আছে। বেশি খুঁজতে হলো না সহজেই সন্ধান মিলল তাদের, কিন্তু কেউ রাজী হলো
ম্যাজারিনের প্রস্তাবে। অ্যারামিস আর অ্যাথোস সোজা বলে দিল রাজা ছাড়া আর কারও জন্যে তারা অস্ত্র ধরবে না। ম্যাজারিন যতই রাজার মন্ত্রী হোক, আসলে সে রাজার শত্রু, শত্রু এই জন্যে যে রাজার নাবালকত্বের সুযোগ নিয়ে দেশটাকে শোষণ করছে, প্রজাদের করে তুলেছে রাজার উপর অসন্তুষ্ট। সুতরাং অ্যারোমিস ও অ্যাথোসের মতে, ম্যাজারিনের সাহায্য করা মানেই হলো আসলে রাজার ক্ষতি করা।
একমাত্র পোর্থস রাজী হলো। সহজ সরল বুদ্ধির মানুষ পোর্থস। সে রাজনীতি বোঝে না, রাজার স্বার্থ আর মন্ত্রীর স্বার্থ যে ভিন্ন হতে পারে এমন চিন্তাই নেই তার। ম্যাজারিন যদি তাকে ব্যারন উপাধি দেয়, তা হলে সে ম্যাজারিনকে সাহায্য করতে প্রস্তুত। কারণ, প্রচুর অর্থ এবং তিনটি জমিদারির মালিক হওয়ার পরেও শুধুমাত্র একটা উপাধির অভাবে সে অভিজাত সমাজে স্বীকৃতি পাচ্ছে না।
একমাত্র পোর্থসকে নিয়েই দ্যার্তেগা পারিতে ফিরছে। পোর্থসের লম্বা চওড়া গঠন দেখে খুশী হয়েছেন ম্যাজারিন। রাজী হয়েছেন তাকে ব্যারন উপাধি দিতে। কথাবার্তা পাকা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই খবর এসেছে, ভিনসেন দুর্গ থেকে বোফট পালিয়েছেন। কাজেই দ্যার্তেগা এবং পোর্থসের প্রথম কর্তব্য বোফর্টকে ধরে আনা, কারণ বোফর্ট যদি বিদ্রোহী প্রজাদের নেতা হওয়ার সুযোগ পায়, তবে সে বিদ্রোহ দমন করা অসম্ভব হয়ে উঠবে বলে ম্যাজারিনের বিশ্বাস।
.
ঝড়ের বেগে ছুটে চলেছে বেয়ার্ড আর ভলকান। সারাদিন চলেছে দ্যার্তেগা আর পোর্থর্সকে নিয়ে, এক মুহূর্তের জন্যে বিশ্রাম পায়নি ঘোড়া দুটো। শেষ পর্যন্ত আর পারল না, একই সময়ে একযোগে আছড়ে পড়ল ওদুটো এবং পড়ার সাথে সাথে মারা গেল।
অশ্বারোহী দুজনই ঘোড়া পড়ে যাচ্ছে বুঝতে পেড়ে সময়মতো নেমে পড়েছে।
এরপর?
সঙ্গের সৈনিকেরা পিছিয়ে পড়েছে সেই সকাল বেলাতেই পোর্থসের চাকর মাস্কেটনও আছে তাদের মধ্যে। পিছনে আছে, কিন্তু তার ঘোড়াও দুর্বল।
বোফর্টকে এখন ধরা যায়নি, বেয়ার্ড ভলকানের মতো তেজী ঘোড়া
ববস্থা করেছেন, নির্দিষ্ট আস্তানায় ঘোড়া রাখা আছে, বোফক্ট আসছেন, ক্লান্ত ঘোড়া ছেড়ে দিয়ে নতুন ঘোড়ায় উঠে ঝড়ের বেগে এগিয়ে যাচ্ছে ভেন্ডেসের উদ্দেশে এই ভেন্ডেসে প্রদেশের ডিউক বোফট। দ্যার্তেগা পোর্থসের ঘোড়া খতম। তার মানে কি এই অভিযানের এখানেই সমাপ্তি কি হবে একজনের ক্যাপ্টেনের অন্যজনের ব্যারণ পদের! সবই কি স্বপ্নই থেকে যাবে?
কিন্তু ওই ঘোড়ার ডাক শোনা যায়। তাড়াতাড়ি দুই বন্ধু ঐ ডাক লক্ষ্য করে ছুটল, তখন সন্ধ্যার আঁধার ঘনিয়ে এসেছে। পথের দুই পাশে জঙ্গল সেই জঙ্গলের ভেতরে আলো দেখা যায়, আবার ঘোড়ার ডাকও শোনা গেল, সেই আলোর কাছ থেকেই। দ্রুত এবং সংগোপনে বড় বড় গাছের আড়ালে দুই বন্ধু আলো লক্ষ্য করে ছুটছে, আলোর কাছে দেখতে পেল, চারটি বড় ঘোড়া রয়েছে। সহিসেরা দলাইমলাই করে খেতে দিয়েছে তাদের।
দ্যার্তেগা ও পোৰ্থস সহিসদের সামনে গিয়ে বলল, ‘ঘোড়াগুলো আমরা কিনতে চাই। সহিস প্রথমে অবাক হলো তারপর রেগে গেল, কিনব! কিনব বললেই কেনা যায় নাকি? এ ঘোড়ার মালিক কে জান? মন্টবেজনের ডিউক। তিনি ঘোড়া বিক্রি করবেন ভেবেছ?
‘না বিক্রি করলে এমনি নিয়ে নেব। রাজার দরকার। মন্টবেজনই হোক বা অন্য যে হোক, রাজার প্রয়োজনের কাছ সবাইকে মাথা নোয়াতে হবে।‘
সহিসেরা শেষ চেষ্টা করল, ‘মাত্র আধঘণ্টা আগে ঘোড়াগুলো অনেকদূর থেকে ছুটে এসেছে, বিশ্রামের দরকার ওদের।‘
‘আধ ঘণ্টা বিশ্রাম যথেষ্ট।’ বলে ঘোড়াগুলোকে খুলে নিল দ্যার্তেগা। ‘রাজার কোষাগার থেকে মন্টবেজনকে ঘোড়ার দাম পাঠিয়ে দেয়া হবে। একটার পিঠে দ্যার্তেগা অন্য একটাতে পোৰ্থস চড়ে অন্য দুটোকে সামনে তাড়িয়ে নিয়ে চলল, একটা তো মস্কেটনের এখনই দরকার হবে। মরিয়া হয়ে সহিসেরা বন্দুক বার করে গুলি ছুঁড়তে শুরু করল দ্যার্তেগাকে লক্ষ করে। সহিসের গুলি সৈনিকের গায়ে লাগে না।’ হেসে উঠল পোর্থস। জোরে ঘোড়া চালিয়ে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে গেল তারা।
রাজপথে উঠতেই মাস্কটনের সঙ্গে দেখা হলো। তার ঘোড়াও পড়ে গিয়েছে। নতুন একটা ঘোড়া দেয়া হলো তাকে। দ্যার্তেগা বলল, ‘ঘোড়াগুলো আধঘণ্টা আগে বহুদূর থেকে ছুটে এসেছে। অর্থাৎ বোফর্টই এসেছেন এই ঘোড়ায়। মন্টবেজনের ডিউক বোফর্টের আত্মীয়। বোফর্টের ঘোড়াতেই বোফর্টকে ধরতে চলেছি আমরা, মজা মন্দ নয়।’ বলে হেসে উঠল পোর্থস। কিছুটা সামনে এগুতেই বহু ঘোড়ার খুঁড়ের শব্দ শোনা গেল।