মেয়েটা ইতিমধ্যে ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলছিল, ‘কাপুরুষটা আমায় মেরেছে। বেশ্যার একটা দালাল।’
‘মাপ করবেন অফিসার’, বলল রেমন্ড, ‘আইনে কি আছে যে সাক্ষীদের সামনে একটি লোককে বেশ্যার দালাল বলা যেতে পারে?
পুলিশ তাকে তার ‘রকবাজি’ থামাতে বলল।
রেমন্ড তখন মেয়েটার দিকে ফিরে বলল, ‘কিছু ভেবো না সজনী, আবার দেখা হবে।‘
‘ব্যস, যথেষ্ট’, বলল পুলিশটি এবং মেয়েটিকে সেখান থেকে চলে যেতে হুকুম করল। যতক্ষণ থানা থেকে সমন না আসছে ততক্ষণ রেমন্ডকে ঘরে থাকতে হবে। ‘তোমার লজ্জা হওয়া উচিত।’ বলল পুলিশটি, ‘এত কী টেনেছ যে দাঁড়াতেও পারছ না! কী ব্যাপার, টলছ কেন এত?’ রেমন্ড বলল, ‘টানিনি। যখন দেখি আপনাদের কেউ ওখানে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন তখন কাঁপতেই হয়। সেটাই স্বাভাবিক।‘
তারপর সে দরজা বন্ধ করল এবং আমরা সবাই চলে এলাম। মারি আর আমি আমাদের দুপুরের খাবার ঠিক করলাম। কিন্তু তার খিদে ছিল না তাই প্রায় পুরোটাই আমি খেলাম। একটার সময় সে চলে গেল এবং তারপর আমি খানিকক্ষণ ঘুমোলাম।
তিনটের সময় দরজায় টোকা, রেমন্ড ঢুকল ভেতরে। বসল সে আমার খাটের কোনায় এবং দুএক মিনিট কিছু বলল না। কীভাবে সব হল, জিজ্ঞেস করলাম তাকে। বলল সে, পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে বেশ মসৃণ গতিতেই কাজ এগোচ্ছিল; কিন্তু মেয়েটা যখন তাকে চড় মারল এবং চোখে সে সর্ষেফুল দেখতে পেল, ঠিক তখনই মেয়েটাকে ধরে সে পেটাতে লাগল। তার পরের ঘটনা। আমাকে বলার কোনো দরকার নেই। কারণ তখন আমি ছিলাম সেখানে।
‘ভালো’, বললাম আমি, ‘তুমি তাকে একচোট নিয়েছ এবং তোমার ইচ্ছেও ছিল তা-ই, ঠিক না?’
একমত হল সে এবং বোঝাল, পুলিশ যা-ই করুক না কেন তার শাস্তি সে। পেয়েছে। পুলিশের কথা ধরলে, তাদের কীভাবে ঢিট করতে হয় তা তার ভালো জানা আছে। কিন্তু সে জানতে চাইল, পুলিশ যখন তাকে ঘুসি মেরেছিল তখন কি আমি ভেবেছিলাম যে বিনিময়ে সেও একটা মারবে।
আমি তাকে বললাম যে আমি কিছুই ভাবিনি এবং পুলিশের ব্যাপারে মাথা ঘামাতেও আদৌ রাজি নই। মনে হল সন্তুষ্ট হয়েছে রেমন্ড। জিজ্ঞেস করল, আমি তার সঙ্গে বেড়াতে যাব কি না। বিছানা ছেড়ে উঠে আমি চুল আঁচড়াতে লাগলাম। তারপর রেমন্ড বলল, সে যা চায় তা হল আমি যেন তার হয়ে সাক্ষী দিই। জানালাম, আমার কোনো আপত্তি নেই; তবে আমি বুঝতে পারছি না তার হয়ে আমাকে কী বলতে হবে।
‘এ তো সামান্য ব্যাপার’, উত্তর দিল সে, তোমাকে শুধু তাদের বলতে হবে যে মেয়েটা আমাকে অপমান করেছিল।
সুতরাং আমি তার সাক্ষী হতে রাজি হলাম।
একসঙ্গে বেরুলাম আমরা এবং রেমন্ড এক কাফেতে আমাকে ব্রান্ডি খাওয়াল। তারপর এক গেম বিলিয়ার্ড খেলোম আমরা; খেলাটা বেশ জমেছিল এবং মাত্র কয়েক পয়েন্টে হারলাম। তারপর সে প্রস্তাব করল বেশ্যালয়ে যাওয়ার। কিন্তু আমি আপত্তি জানালাম; আমার ইচ্ছে করছিল না। আস্তে আস্তে হেঁটে যখন আমরা ফিরছিলাম তখন সে বলল, তার রক্ষিতাকে একচোট নিতে পারায় সে খুব সন্তুষ্ট হয়েছে। নিজেকে সে অত্যন্ত আন্তরিক করে তুলল আমার কাছে এবং আমাদের বেড়ানোটা আমি বেশ উপভোগ করলাম। বাসার কাছে যখন এলাম তখন দেখি বুড়ো সালামানো দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। অত্যন্ত উত্তেজিত দেখাচ্ছিল তাকে। দেখলাম তার কুকুরটা নেই তার সঙ্গে। লাটুর মতো ঘুরে ঘুরে সে দেখছিল চারদিক এবং মাঝে মাঝে রক্তিম চোখ নিয়ে তাকাচ্ছিল হলঘরের অন্ধকারের দিকে। এবং তারপর বিড়বিড় করে পায়চারি করছিল রাস্তায়।
রেমন্ড ব্যাপারটা জানতে চাইল কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে কোনো উত্তর পেল না। তারপর শুনলাম, ঘোঁতঘোঁত করে সে বলছে, ‘জারজ নোংরা জানোয়ার!’ যখন জিজ্ঞেস করলাম তার কুকুরটা কোথায় তখন ভ্রুকুটি করে সে আমার দিকে তাকাল এবং রুক্ষস্বরে বলে উঠল, ‘চলে গেছে!’ খানিক পর হঠাৎ করে সে সব বলতে লাগল।
‘যথারীতি আমি তাকে প্যারেড গ্রাউন্ডে নিয়ে গেছিলাম। আজ এক মেলা বসার দরুন সেখানে দারুণ ভিড় হয়েছিল। এত ভিড় যে চলাফেরা করাই মুশকিল। আমি এক দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম হাতবন্ধ রাজাকে দেখতে। তারপর যখন আবার রওনা হব তখন দেখি কুকুরটা উধাও। ভাবছিলাম ছোট্ট একটা কলার কিনব কিন্তু স্বপ্নেও ভাবিনি ব্যাটা এভাবে কলারের ফাঁক দিয়ে হাওয়া হয়ে যাবে।‘
রেমন্ড তাকে আশ্বাস দিল যে কুকুরটি পথ খুঁজে ফিরে আসবে এবং তাকে সে সেইসব কুকুরের গল্প শোনাল যারা মাইলের পর মাইল হেঁটে ফিরে গিয়েছিল নিজ নিজ মনিবের কাছে। কিন্তু এসব শুনে মনে হল বুড়োটা আরও চিন্তিত হয়ে পড়েছে।
‘বুঝতে পারছ না, তাকে তো মেরে ফেলবে; মানে পুলিশের কথা বলছি। আর ঐ ঘেয়ো কুকুরটাকে নিয়ে গিয়ে কেউ যত্নআত্তি করবে তাও তো মনে হয় না।’
আমি তাকে জানালাম, পুলিশস্টেশনে একটি খোয়াড় আছে। সেখানে সব হারানো কুকুর নিয়ে রাখা হয়। তার কুকুর নিশ্চয় আছে সেখানে। কিছু জরিমানা দিলেই তারা কুকুর দিয়ে দেবে। জিজ্ঞেস করল সে, কত জরিমানা দিতে হবে। কিন্তু আমি তা বলতে পারলাম না। সে আবার রেগে গেল। ‘ঐ হতচ্ছাড়া কুত্তাটার জন্যে বুঝি আমি টাকা দেব? মোটেই না। তাকে মেরে ফেললেই আমি খুশি হব।’ অতঃপর কুকুরটাকে সে তার পুরনো গালিগালাজ শুরু করল।