–হ্যাঁ, স্যর, আমিও ওরকম ভেবে রেখেছি। তাহলে আমি স্যর পার্সিভাল ফর্টেস্কুর সঙ্গে কথাবার্তা বলে নিই।
-হ্যাঁ তাই কর।
.
বছর ত্রিশের যুবা পার্সিভাল ফর্টেস্কু। মাথায় হালকা রঙের চুল। পোশাকপরিচ্ছদে নিখুঁত।
ইনসপেক্টর নীলের মুখ থেকে বাবার মৃত্যুর বিবরণ শোনার পর পার্সিভাল স্বাভাবিক ভাবেই বিস্ময় প্রকাশ করলেন।
-বলছেন ট্যাকসিন বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল…কিন্তু ওরকম কোন বিষের কথা তো শুনিনি।
–কমই শোনা যায় এ বিষের কথা। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া আচমকা হয়–আর তা মারাত্মক।
–আপনি বলছেন, ইচ্ছাকৃতভাবেই বাবাকে কেউ বিষ খাইয়েছিল? খুবই ভয়ানক কথা।
–আপাতদৃষ্টিতে তাই মনে হচ্ছে।
এব্যাপারে, কারো সন্দেহ করার মতো আপনার কোন ধারণা
–আমাদের তদন্ত এখনো চলছে, স্যর। আমাদের কাজের পক্ষে সুবিধা হবে যদি আপনি আপনার বাবার সম্পত্তি বিলিব্যবস্থার ব্যাপারে আমাদের কিছু ধারণা দেন। আপনি আপনার বাবার সলিসিটরের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারেন।
সলিসিটর হলেন বিলিংসবি, হর্সথর্প ও ওয়াল্টার্স। বেডফোর্ড স্কোয়ারে ওদের অফিস। উইলের ব্যাপারে আমি মোটামুটি আপনাকে জানাতে পারব।
–এটা যদিও আমাদের রুটিন মাফিক কাজ, তবে আমাদের কাজে সুবিধা হবে।
–দুবছর আগে বিয়ের পরে একটা নতুন উইল করেন বাবা। তাতে তিনি তার স্ত্রীকে ১,০০,০০০ পাউণ্ড সরাসরি দিয়েছিলেন, আর ৫০,০০০ পাউণ্ড দিয়েছেন আমার বোন ইলেইনকে। বাকি অংশের অধিকার দিয়েছেন আমাকে। অবশ্য আমি প্রতিষ্ঠানের একজন অংশীদারও।
–আপনার ভাই ল্যান্সলট ফর্টেস্কু, তিনি তাহলে কি পাচ্ছেন? জানতে চাইলেন নীল।
-বাবা তাকে কিছু দিয়ে যাননি। ওদের দুজনের মধ্যে দীর্ঘদিন আগের এক মনোমালিন্যের জেরই এটা বলতে পারেন।
-তাহলে দেখা যাচ্ছে, উইল অনুযায়ী উত্তরাধিকার সূত্রে আপনারা তিনজনই লাভবান হচ্ছেন–মিসেস ফর্টেস্কু, আপনি আর মিস ইলেইন?
–আমার ক্ষেত্রে কতটা কি থাকবে বলতে পারি না। কেননা, অর্থকরী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাবা ইদানীং কিছু ভুল করে ফেলেছিলেন। তাছাড়া মৃত্যুকর ইত্যাদিও আমাকে দিতে হবে।
ইনসপেক্টর নীল তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেললেন মিঃ পার্সিভাল ফর্টেস্কুর দিকে।
সম্প্রতি ব্যবসা সংক্রান্ত ব্যাপারে আপনি আর আপনার বাবা একমত হতে পারেননি, তাই না স্যর?
–আমার মতামত তাকে জানিয়েছিলাম কেবল
–ওই নিয়ে আপনাদের মধ্যে বচসাও হয়েছিল?
–না, ইনসপেক্টর কোন বচসা হয়নি।
–যাক, কিছু এসে যায় না। তবে আপনার বাবা আর ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্ক আগের মতোই বিরূপ ছিল, এটা নিশ্চয়ই ঠিক?
-হ্যাঁ, কথাটা ঠিক।
–যদি তাই হয় তাহলে এটা সম্পর্কে আপনার কি ধারণা।
মেরী ডাভের দেয়া টেলিগ্রামের বয়ান লেখা কাগজটা নীল এবারে এগিয়ে দিলেন।
পার্সিভাল পড়লেন। তার মুখভাব বিরক্তিতে কুঁচকে উঠল। তিনি বেশ রাগতভাবেই বললেন, ব্যাপারটা কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না।
–এটা যে সত্যি তার প্রমাণ আপনার ভাই আজই প্যারি থেকে আসছেন। আপনার বাবা আপনাকে এসম্পর্কে কি কিছু জানিয়েছিলেন?
–কখনোই না। আমার কাঁধে সমস্ত কাজের দায়িত্ব চাপানো আর এভাবে ল্যান্সকে ডেকে পাঠানো–এ সম্পূর্ণ অসঙ্গত।
–আপনার বাবা কেন এরকম একটা কাজ করলেন এসম্পর্কে নিশ্চয় আপনার কোন ধারণা নেই?
–অবশ্যই নেই। এ তার নিছক পাগলামি ছাড়া আর কি। ইদানীংকালে তার এমন অনেক অদ্ভুত কাজেরই কোন কারণ খুঁজে পেতাম না। যে করেই হোক এটা বন্ধ করতে হবে
পর মুহূর্তেই তিনি বলে উঠলেন, কিছু মনে করবেন না ইনসপেক্টর, মনেই ছিল না যে বাবা মারা গেছেন।
ইনসপেক্টর নীল সহানুভূতির সঙ্গে মাথা নাড়লেন। অপেক্ষা করতে লাগলেন পার্সিভাল নিজে থেকে আর কি বলেন শুনবার জন্য।
–ইনসপেক্টর…আমি ভাবতে পারছি না এরকম একটা ঘটনা ঘটবে।
বলতে বলতে মিঃ পার্সিভাল দরজার দিকে এগোলেন।
–কোন প্রয়োজন হলে আমাকে ডাকতে পারেন। অফিসের কাজকর্ম সেরে সন্ধ্যায় ইউট্রি লজেই ফিরব।
–আমি সেখানে একজনকে রেখে এসেছি স্যর। আশাকরি আবার দেখা হবে।
পার্সিভাল ফর্টেস্কু বেরিয়ে গেলেন।
–কিরকম বুঝলেন স্যর?
–সার্জেন্ট হে জানতে চাইলেন।
–এখনো কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। একদল বিরক্তিকর মানুষ–খুবই অদ্ভুত।
.
০৫.
ল্যান্স ফটেন্ডু আর তার স্ত্রী প্যাট্রিসিয়া আকাশ পথে বাড়ির পথে। হিথরো বিমান বন্দরের দিকে উড়ে চলেছে তাদের আকাশযান।
লে বুর্জে ছেড়ে আসার পাঁচ মিনিট পরে ডেইলি স্মেলের পৃষ্ঠায় বাবার মৃত্যুর খবরটা দেখতে পেলেন ল্যান্স।
–তিনি মারা গেছেন! বাবা
অস্ফুটে কথাকটা উচ্চারণ করে স্ত্রীর দিকে তাকালেন ল্যান্স।
-তোমার বাবা মারা গেছেন
–হ্যাঁ, প্রিয় প্যাট। অফিসেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেন্ট জিউস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখানেই তিনি মারা যান।
উঃ অদ্ভুত ঘটনা, সত্যিই আমি দুঃখিত। ঠিক তুমি যখন বাড়ি ফিরতে চলেছ–কি হয়েছিল, স্ট্রোক?
–তাই মনে হয় আমার। বুড়ো মানুষটাকে যে আমি পছন্দ করতাম তা বলব না, কিন্তু এখন তো তিনি নেই…ভাল হতে গিয়েও আমার ভাগ্যটা আবার খারাপ হয়ে গেল, প্যাট।
–হ্যাঁ, আমিও তাই ভাবছি। ঘটনাটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।
প্লেন থেকে নামার কিছুক্ষণ আগে একজন অফিসার উঠে এলেন। ঘোষণা করলেন, মিঃ ল্যান্সলট ফর্টেঙ্কু প্লেনে আছেন?