এলেনকে বিদায় দিয়ে নীল এলেন তিন তলার ছোট্ট ঘরে মিস র্যামসবটমের সঙ্গে দেখা করতে।
ঘরে ঢোকার মুখেই নীল জানালা দিয়ে দেখতে পেলেন নিচে সার্জেন্ট হে ইউ গাছের পাশে দাঁড়িয়ে একজন লোকের সঙ্গে কথা বলছে। লোকটাকে বাগানের মালী বলেই তার মনে হল।
মালপত্রে ঠাসা ছোট্ট ঘরটা। গ্যাসের আগুনের পাশে এক বৃদ্ধা টেবিলে বসে পেসেন্স খেলছেন। পরণে হালকা বেগুনী রঙের পোশাক। মাথায় এলোমেলো পাকাচুল।
মুখ না তুলেই তিনি বললেন, আসুন, ইচ্ছে হয় বসতে পারেন।
কিন্তু বসার প্রতিটি চেয়ারই নানা ধর্মীয় পত্রপত্রিকায় বোঝাই। ওসব সরিয়ে কোন রকমে একটা চেয়ারে নীল জায়গা করে নিলেন।
–বলুন, কি ব্যাপার। মুখ তুললেন মিস র্যামসবটম।
নীল যথারীতি দুঃখপ্রকাশ করে মিঃ ফর্টেস্কুর মৃত্যুসংবাদ জানালেন।
–অহঙ্কার আর পাপের পরিণতি। কোনরকম প্রতিক্রিয়া ছাড়াই মন্তব্য করলেন মিস র্যামসবটম।
-আশাকরি ভগ্নীপতির মৃত্যুতে আঘাত পাননি আপনি। বললেন নীল।
-ঠিকই বলেছেন আপনি। দুঃখ না হওয়াই স্বাভাবিক। রেক্স ফটেন্ডু চিরকালই পাপী মানুষ ছিলেন। তাকে আমি পছন্দ করতে পারিনি।
-তাকে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছিল।
বৃদ্ধা একথার কোন উত্তর না দিয়ে তাস হাতে তুলতে লাগলেন।
নীল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করতে লাগলেন। কিন্তু হতাশ হলেন।
–আমি কি বলব আশা করেছিলেন?
এটুকু বলতে পারি, আমি তাকে বিষ খাওয়াইনি।
–কাজটা কে করে থাকতে পারে এরকম কোন ধারণা আপনার আছে?
–প্রশ্নটা অসঙ্গত। আমার মৃত বোনের দুই ছেলে এবাড়িতে রয়েছে। র্যামসবটমের রক্ত যাদের শরীরে রয়েছে তারা খুনের মতো কোন জঘন্য কাজ করতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি না।
–আমি সেকথা বলতে চাইনি মাদাম।
–রেক্স খুবই অসৎপ্রকৃতির মানুষ ছিল। বহু লোকই আছে যারা তাকে খুন করতে চেয়েছে।
–বিশেষ কারো কথা কি আপনি ভাবছেন?
মিস র্যামসবটম এবার তাস ঠেলে সরিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। তারপর শান্ত ধীর কণ্ঠে বললেন, আমার মতামত যদি জানতে চান তাহলে বলব, বাড়ির চাকরবাকরদের মধ্যেই কেউ একাজ করেছে। ওই বাটলারকে আমার সুবিধার লোক মনে হয় না। আর পার্লারমেইড মেয়েটাও যেন অন্যরকম। আচ্ছা…শুভসন্ধ্যা।
কিছুই বার করা গেল না বৃদ্ধার মুখ থেকে। অগত্যা নীল চুপচাপ নিচে নেমে এলেন।
হলঘরে ঢুকতেই দীর্ঘাঙ্গী গাঢ় বর্ণের এক তরুণীর মুখোমুখি হলেন নীল।
–আমি এই মাত্র ফিরেছি ইনসপেক্টর ওরা বলছে…বাবা নাকি মারা গেছে?
–খুবই দুঃখের হলেও কথাটা ঠিক। বললেন নীল। মেয়েটি একটা চেয়ারের পিঠ চেপে ধরল। চোখ বুজে ধীরে ধীরে বসে পড়ল।
–ওহ,…না-না।
দু গাল বেয়ে চোখের জল নেমে এলো মেয়েটির।
-বাবাকে পছন্দ করতাম একথা বলতে পারব না। তবু…তবু…আমি মেনে নিতে পারব না…কখনও না…
দরদর ধারায় অশ্রু নামতে লাগল। দাঁতে ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে সামলে নেবার চেষ্টা করতে লাগল সে।
ইনসপেক্টর নীল বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ইলেইন ফর্টেস্কুর দিকে। তার মনে হল ইউট্রি লজে এই প্রথম মৃতমানুষটির জন্য একজন সত্যিকার শোকপ্রকাশ করল।
.
০৪.
ইনসপেক্টর নীলের কাছ থেকে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ শোনার পর অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার বললেন, কমবয়সী সুন্দরী স্ত্রী–তাকেই তো আমার সন্দেহ হচ্ছে।
–এরকম ক্ষেত্রে এটাই সাধারণত দেখা যায়। বললেন নীল।
–কিন্তু মোটিভ তো খুঁজে বার করা দরকার।
–তাও আছে স্যর…মিঃ ডুবয় অবশ্যই।
–সে এর মধ্যে ছিল বলে তোমার মনে হয়?
–তা অবশ্য মনে হয় না স্যর। লোকটা খুবই সাবধানী–গা বাঁচাতে চায়। তবে মতলবটা মনে হয় মহিলার মাথাতেই ছিল।
-যাইহোক, আমাদের উচিত হবে ভোলা মনে কাজ করা। আর যে দুজনের সুযোগ থাকা সম্ভব, তাদের অবস্থা কিরকম বুঝছ?
–মিঃ ফর্টেস্কুর মেয়ে আর পুত্রবধূ! মেয়েটি একজনকে বিয়ে করতে চেয়েছিল, কিন্তু বাবার আপত্তি ছিল। লোকটার টাকার দিকেই নিশ্চয় চোখ রেখেছিল। এটাই তার মোটিভ হতে পারে।
তবে পুত্রবধূ–মিসেস পার্সিলের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। কিছুই জানা সম্ভব হয়নি। এই তিনজনের যেকোন একজনের পক্ষেই বিষপ্রয়োগ সম্ভব বলে মনে হয়। অন্য কারও পক্ষে কতটা সম্ভাবনা ছিল তা অনুসন্ধান সাপেক্ষ।
প্রাতরাশ গুছিয়ে ছিল পার্লারমেইড, বাটলার আর রাঁধুনি। নিয়েও গিয়েছিল এরাই। মিঃ ফর্টেস্কুর খাবারেই যে কেবল ট্যাকসিন মেশানো থাকতে পারে এটা তাদের পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না। অবশ্য যদি বিষটা ট্যাকসিনই হয়ে থাকে।
–প্রাথমিক রিপোর্টে ট্যাকসিন বলেই উল্লেখ করা হয়েছে দেখলাম।
–তাহলে নিশ্চিত হওয়া গেল। আমরা এবারে এগিয়ে যেতে পারব। নীল বললেন।
–চাকরবাকরদের মধ্যে কিছু পাওয়া যায়নি বলছ?
–না স্যর। ওদের ব্যবহারে কোনরকম অস্বাভাবিকতা নেই। –আর কাউকে তোমার সন্দেহ হয়?
-না স্যর, তেমন কেউ নেই। তবে এবারে সাক্ষ্যপ্রমাণ কিছু পাওয়া যেতে পারে–ট্যাকসিন যখন তৈরি বা জোগাড় হয়েছে, তার কিছু প্রমাণও থাকবার কথা।
বেশ তুমি তোমার মতোই এগিয়ে যাও। ওহো, তোমাকে বলতে ভুলে গেছি। মিঃ পার্সিভাল ফর্টেস্কু এখানেই আছেন। তোমার সঙ্গে দেখা করবার জন্য অপেক্ষা করছেন।
অন্য ছেলের সঙ্গেও প্যারিতে আমরা যোগযোগ স্থাপন করেছি। সে আজই রওনা হচ্ছে–তুমি তার সঙ্গে এয়ারপোর্টে দেখা করতে পার।