বয়স্ক ধনী মানুষের যুবতী স্ত্রীদের যেসব পুরুষমানুষ বন্ধুত্বের জন্য বেছে নেয় তাদের চরিত্র সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রয়েছে ইনসপেক্টর নীলের।
বাড়িতে পুলিস অফিসারের উপস্থিতি এবং তার মুখে স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুসংবাদ পেয়ে অ্যাডেল ফর্টেস্কু একটু টলে গেলেন। একটা আরাম কেদারায় তার শরীর এলিয়ে পড়ল, দু হাতে চোখ চেপে ধরলেন তিনি।
ক্রাম্প দৌড়ে গিয়ে একগ্লাস ব্র্যাণ্ডি নিয়ে এসে এগিয়ে দিল। একচুমুক খেয়ে তিনি তা। সরিয়ে দিলেন।
-বেচারি রেক্স। কোনরকমে উচ্চারণ করলেন অ্যাডেল ফর্টেস্কু।
একজন ডিটেকটিভ ইনসপেক্টরের উপস্থিতিতে মিঃ ডুবয় স্বভাবতই ভীত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি অপ্রস্তুত স্বরে কোনরকমে দুঃখপ্রকাশ করে বিশেষ কাজের অজুহাত দেখিয়ে কোনরকমে গা বাঁচিয়ে স্থান ত্যাগ করতে বিলম্ব করলেন না।
নীল সবই বুঝলেন। তিনি অ্যাডেল ফর্টেস্কুকে দুঃখের সঙ্গে তাঁর স্বামীর মৃত্যুর কারণ জানালেন।
–আপনি বলছেন তাকে বিষ খাওয়ানো হয়েছিল? এ আমি কখনো বিশ্বাস করি না—
নিশ্চয় খাদ্যে বিষক্রিয়া..কিন্তু সকালেই তো আমরা একই খাবার খেয়েছি–
বাড়ির সকলেই কি খেয়েছিল? নীল প্রশ্ন করলেন।
-না…তা অবশ্য বলতে পারব না।
–আপনার এখানে দেখছি প্রচুর ইউগাছ রয়েছে। এই গাছের পাতা বা ফল কোন ভাবে খাবারে মিশে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
–ইউফল? এগুলো কি বিষ?
–এসব খেয়ে বাচ্চারা প্রায়শই বিপদ ঘটায় মাদাম।
–আর সহ্য হচ্ছে না ইনসপেক্টর, দু হাতে মাথা টিপে ধরলেন মিসেস ফর্টেস্কু, আমি কিছু পারব না, সব ব্যবস্থা করবেন মিঃ পার্সিভাল ফর্টেস্কু।
–আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি মাদাম, তিনি তো এখন উত্তর ইংলণ্ডে কোথাও রয়েছেন।
–ওহ হ্যাঁ, ভুলে গিয়েছিলাম।
–এই অবস্থায় আপনাকে আর বিরক্ত করব না। কেবল একটা কথা, আপনার স্বামীর পকেটে কিছু শস্যদানা পাওয়া যায়, এর কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেন?
-না, আমার কোন ধারণা নেই। মাথা ঝাঁকালেন মিসেস ফর্টেস্কু।
চোখে রুমাল চাপা দিয়ে তিনি ফুঁপিয়ে কেঁদে চললেন। নীলের মনে হল এ কান্না অভিনয় নয়।
চোখে রুমাল চেপে রেখেই তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দরজা অতিক্রম করে চলে গেলেন।
ইনসপেক্টর নীলের চোখ এড়িয়ে গেল, রুমালের ফাঁকে মিসেস ফর্টেস্কুর ঠোঁটে ঠোঁটে জেগে উঠেছিল সূক্ষ্ম একটা হাসি।
.
ইতিমধ্যে সার্জেন্ট হে রান্নাঘর থেকে মারমালেড, হ্যাম, চায়ের নমুনা, কপি, চিনি ইত্যাদি যা প্রয়োজনীয় মনে করেছেন কিছুটা করে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়েছেন।
তার অভিযানের সংবাদ জানিয়ে সার্জেন্ট হে নীলকে বললেন, কিন্তু স্যর, ইউ ফল বা পাতা কোথাও চোখে পড়েনি। আর তার পকেটের শস্যদানার কথাও কেউ কিছু বলতে পারল না।
ঠিক সেই সময়েই টেলিফোন বেজে উঠল। নীল ধরলেন। সদর দপ্তর থেকে জানানো হলো মিঃ পার্সিভাল ফর্টেস্কুর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছে, তিনি লণ্ডনে ফিরে আসছেন।
রিসিভার নামিয়ে রাখতে রাখতেই বাড়ির সদরের সামনে একটা গাড়ি থামার শব্দ পেলেন নীল।
একটু পরেই নানা প্যাকেট হাতে এক মহিলা এসে ঘরে ঢুকলেন। ক্রাম্প প্যাকেটগুলো হাতে নিল। নীলের দিকে ফিরে বলল, ইনি মিসেস পার্সিভাল, স্যর।
গোলগাল চেহারার মহিলা, বয়স ত্রিশের কাছাকাছি। অসন্তোষ মাখানো মুখভাব। নীলের মনে হল মহিলা অত্যন্ত ক্লান্ত।
মিঃ রেক্স ফর্টেস্কুর আকস্মিক মৃত্যুর খবর তাকেও জানানো হলো।
–সত্যিই অদ্ভুত খবর, প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করলেন মিসেস পার্সিভাল, নিজের অর্ধেক বয়সের মেয়েকে বিয়ে করে মারাত্মক ভুল করেছিলেন–এবারে যা হবার তাই হলো…
নীল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মহিলাকে দেখতে লাগলেন। তার মনে হলো, ব্যাপারটা মহিলার খারাপ লাগেনি।
-মৃত্যুর কারণ নিশ্চয় আপনারা জেনেছেন, না হলে এখানে আসতেন না।
–হ্যাঁ, খাদ্যে বিষক্রিয়া। প্রাতরাশে তিনি এমন কিছু খেয়েছিলেন, যার প্রতিক্রিয়াতেই…
–প্রাতরাশ। কিন্তু..বুঝতে পারছি না ও কিভাবে বিষটা—
এই সময় পাশ থেকে কে বলে উঠল, আপনার চা লাইব্রেরীতে দিয়েছি মিসেস ভ্যাল।
–ওহ, চা, ধন্যবাদ মিস ডাভ, যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন, চা বড্ড দরকার—
বলতে বলতে বিদায় নিলেন মিসেস ভ্যাল।
–মিস ডাভ, হাউসমেড এলেনকে একবার দরকার।
–আসুন আপনাকে তার কাছে নিয়ে যাচ্ছি। দুজনে ওপরে উঠে এলেন। এলেনকে মোটেই বিমর্ষ বা ভীত মনে হল না।
এলেনের কথায় বিষের ঝাঁঝ মেশানো ছিল। সে গৃহকর্ত্রীর বিরুদ্ধে একপ্রস্থ বিষ উদগার করল।
এখানে সবাই জানে…ওদের সর্বত্রই দেখা যায়…টেনিস বা গলফ ওসব সবই ধাপ্পা…আমি নিজের চোখে অনেক কিছু দেখেছি। লাইব্রেরীর দরজা খোলা ছিল…দুজনে…উনি আর ওই লোকটা…আমাদের মনিব সবই টের পেয়েছিলেন…নজর রাখার জন্য একজনকে লাগিয়েও ছিলেন…শেষ পর্যন্ত মনিব মরলেন…জানতাম….
নীল আচমকা জিজ্ঞেস করলেন, বাড়িতে কখনো ইউফল দেখেছ?
–ইউ…ওগুলো তো বিষাক্ত। ওই ফল ওরা দিয়েছিল নাকি স্যর?
–আমরা এখনো ঠিক জানি না, কি দেওয়া হয়েছিল। একটু চিন্তা করল এলেন। পরে বলল, আমি অবশ্য ওঁকে কখনো ইউফল ঘাঁটতে দেখিনি..না…কখনো দেখিনি।
তার কাছ থেকেও মিঃ ফর্টেস্কুর পকেটে শস্যদানা থাকার ব্যাপারে কিছু জানতে পারলেন না নীল।