কাগজটা এগিয়ে দিলেন তিনি। নীল দেখলেন প্যারী থেকে এসেছে বার্তাটা।
ফর্টেস্কু ইউট্টি লজ বেডন হীথ, সারে, দেরিতে তোমার চিঠি পেয়েছি। আগামীকাল চা পানের সময় উপস্থিত হব। রোস্টকরা ভীল নৈশভোজে আশা করছি। ল্যান্স।
কাগজটা টেবিলে রেখে ভ্রু কুঁচকে নীল বললেন, তাহলে দেখা যাচ্ছে, বিতাড়িত ছেলেকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল।
.
০২.
মিঃ রেক্স ফর্টেষ্ণু যখন তাঁর জীবনের শেষ চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন খাস কামরায় বসে, সেই সময় তাঁর ছোট ছেলে ল্যান্স ফর্টেস্কু আর তার স্ত্রী সাঁজ এলিজে হোটেলের বাগানে গাছের নিচে বসে নিজেদের মধ্যে গল্প করছিলেন। আসলে স্বামীর কাছ থেকে মিসেস ল্যান্স অর্থনৈতিক জগতের শঠতার গল্পই শুনছিলেন।
যে শ্বশুরকে তিনি কখনো চোখে দেখেননি, তার সম্পর্কে তার ধারণা তিনি সবসময়ে কৌশলে আইন বাঁচিয়ে চলা মানুষ। সতোর অভাব ছিল না তার মধ্যে।
মিসেস ল্যান্স সুন্দরী না হলেও স্বাস্থ্যবতী ও দীর্ঘাঙ্গী হওয়ায় তাকে অসুন্দর দেখায় না। মাথায় একরাশ বাদামী চুল, চলার গতিও ছন্দময়। মনটাও উদার, ব্যক্তিত্বময়।
বাবাকে পছন্দ করি না এটা ঠিক, কিন্তু তার ডাকে আবার ফিরে না গিয়েও পারছি না। একবার যখন বুড়ো মত বদলেছে, তখন সুযোগটা হাতছাড়া করতে মন চাইল না, বুঝলে প্যাট।
একটু থেমে ল্যান্স আবার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, বাবার চিঠিটা পেয়ে অবশ্য বুঝতে পেরেছিলাম, পার্সি তাকে চূড়ান্ত হতাশ করেছে। এটা চিরকালই মহাধূর্ত–নিজের মতলব ছাড়া কিছু বোঝে না
প্যাট্রিসিয়া বললেন, তোমার ভাইকে মনে হয় না আমার পছন্দ হবে।
-না, না প্যাট, তুমি তোমার মতো থাকবে। আমার কথায় প্রভাবিত হয়ো না। পার্সির সঙ্গে আমি মানিয়ে চলতে পারতাম না, তোমাকে আমি সেকথাই বলতে চাইছি। হাতখরচের টাকা আমি বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে উড়িয়ে দিতাম কিন্তু ও সব জমিয়ে রাখতো। আমি ভাল মন্দ সবার সঙ্গেই মিশতে অভ্যস্ত ছিলাম। পার্সি বেছে বেছে বন্ধুত্ব করতো। আমি বুঝতে পারতাম ও মনে মনে আমাকে ঘৃণা করে। তবে কারণটা জানতাম না।
–আমি জানি কেন। বলল প্যাট্রিসিয়া।
-তুমি বুদ্ধিমতী, হয়তো বুঝতে পার। ওকে ওই চেকের ঘটনাটা কিন্তু পার্সিভালই ঘটিয়েছিল। আমি যে চেক জাল করিনি একথা অবশ্য বিশ্বাস করবে না।
ইতিমধ্যেই অবশ্য আমি কোম্পানির একজন অংশীদার হয়েছিলাম। ঘোড়ার পেছনে লাগাবার জন্য যে টাকাটা দেরাজ থেকে নিয়েছিলাম, সত্যিকথা বলতে সেটা আমারই ছিল। তবু ভেবেছিলাম, টাকাটা ফেরত দিতে পারব। তবে চেকের ব্যাপারটা পার্সিই করেছিল, আর শাস্তি পেয়ে বাড়ি থেকে বিতাড়িত হতে হয়েছিল আমাকে।
তুমি বলতে চাও, কোম্পানি থেকে তোমাকে হঠাবার জন্য সে একাজটা করেছিল? বলল প্যাট্রিসিয়া।
–হতেও পারে। তবে ওসব আমি কিছু আর মনে রাখতে চাই না। এখন ভাবছি, এতদিন পরে আমাকে দেখে ও কি ভাববে।
-কিন্তু তোমার বাবা তার ওপরে এমন খেপে গেলেন কেন?
–সেটা জানতেই ইচ্ছে হচ্ছে। যেভাবে বুড়ো আমাকে চিঠি লিখেছে তাতে মনে হয়েছে গুরুতর কোন অপরাধই হবে
-তোমার বাবার প্রথম চিঠি কবে পেয়েছিলে?
-তা মাস চার-পাঁচ হবে। ওই চিঠি পেয়েই আশ্বস্ত হয়েছিলাম। লিখেছিলেন, পার্সি খুবই অসন্তোষজনক হয়ে উঠেছে। আরও লিখেছিলেন, অর্থকরী দিক থেকে তোমার সুব্যবস্থা করব, তোমার স্ত্রীকেও সাদরে গ্রহণ করব। বুঝলে প্রিয়া, অভিজাত ঘরে বিয়ে করায় বুড়ো খুবই খুশি হয়েছিল।
–অভিজাতদের ওই আবর্জনা কেউ পছন্দ করে? হেসে বললেন প্যাট্রিসিয়া।
–অভিজাতরা আবর্জনা কিনা বলতে পারব না, তবে তোমাকে যে বিয়ে করেছি, তার আহ্বান হয়তো এজন্যেই। পার্সিভালের স্ত্রী কেমন হয়েছে দেখা যাক।
-তোমার বোনের কথা তো বললে না।
চিন্তিত ভাবে বলল প্যাট্রিসিয়া। যে পরিবারের বউ তিনি হয়েছেন, সেখানকার মেয়েদের কথাই হয়তো তার মাথায় ঘুরছিল।
-ইলেইনের কথা বলছ, বলল ল্যান্স, ও খুবই ভাল মেয়ে। আমি যখন বাড়ি ছেড়ে আসি তখন ও খুবই ছোট ছিল।
–তোমাকে ও কোন চিঠি লিখেছিল? বলল প্যাট।
–কি করে লিখবে? কোন ঠিকানা তো দিয়ে আসিনি। আমাদের পরিবারের পারস্পরিক হৃদ্যতাও তেমন ছিল না কোন দিন।
প্যাট বড় বড় চোখ করে তাকিয়েছিল ল্যান্সের দিকে। তা লক্ষ করে ল্যান্স বললেন, এসব জেনে আর কি হবে, আমরা তো ওদের সঙ্গে থাকতে যাচ্ছি না। নিজেদের অন্য আলাদা একটা বাড়ি কোথাও নিয়ে নেব, সেখানেই আমরা থাকব।
–তোমার মায়ের কথা বিশেষ ভাবতে চাও না, তাই না? প্যাট জানতে চাইল।
–আমাদের মা ছিলেন বৃদ্ধ। ইলেইনের যখন জন্ম হয় তখন তার বয়স পঞ্চাশ। ছেলেবেলায় মনে পড়ে তিনি আমাকে নাইট আর রানির গল্প শোনাতেন। আমার সেসব একদম ভাল লাগত না।
–তুমি কাউকেই তেমন ভালবাসতে না।
–আমি তোমাকে ভালবাসি, প্যাট। বলে তিনি স্ত্রীর হাত নিজের মুঠোয় নিলেন।
.
০৩.
বড় হলঘরে ইনসপেক্টর নীল যখন টেলিগ্রামের কাগজটা টেবিলে রাখছেন ঠিক সেই সময়েই বাইরে একটা গাড়ির ব্রেক কষার শব্দ শোনা গেল।
কিছুক্ষণ পরেই দরজার সামনে এসে দাঁড়ালেন যে মহিলা তার মোহিনী মূর্তি যে কোন পুরুষের কাছেই আকর্ষণীয়। ইনিই অসামান্য সুন্দরী মিসেস ফর্টেস্কু। তার পেছনের গলফ ক্লাব হাতে পুরুষটিকে দেখে নীল অনুমান করলেন, যেমন শুনেছেন, মিঃ ভিভিয়ানই হওয়া সম্ভব।