–এরকম কোন আভাস কি পাওয়া গেছে?
–কিছুদিন আগে সম্ভবত পার্সিভাল গোপনে কিছু একটা করে ফেলেছিলেন। সেটা বাপ জানতে পেরে প্রচণ্ড রেগে যান। সেইসময় ছোট ছেলেকে আবার ফিরিয়ে আনার কথা বলেছিলেন। তারপর থেকে পার্সিভালও কেমন ভীত হয়ে থাকতেন সব সময়।
-বাড়ির চাকরবাকরদের মধ্যে ক্রাম্পের কথা তো বলেছেন। অন্য চাকরবাকররা কিরকম?
-এবাড়িতে পার্লারমেড মানে ওয়েস্ট্রেস হিসেবে আছে গ্ল্যাডিস মার্টিন। সে ঘর গুছানোর কাজকর্মের সঙ্গে ক্রাম্পকেও সাহায্য করে। মেয়েটি ভাল। তবে বড্ড বেশি সরল।
এলেন কার্টিস হল হাউসমেড। কাজের মানুষ, তবে ভয়ানক বদমেজাজী।
এছাড়া বাইরের কিছু বুড়ি আসে বাড়িতে কাজের জন্য। বাড়িতে আর একজন আছেন–তিনি মিস র্যামসবটম।
–তিনি কে? নীল জানতে চান।
–মিঃ ফর্টেস্কুর প্রথম পক্ষের স্ত্রীর দিদি। সেই স্ত্রী বয়সে মিঃ ফর্টেস্কুর চেয়ে বড় ছিলেন। দিদিটি তার চেয়েও বড়। এখন প্রায় সত্তরের মতো বয়স।
তিনতলায় একখানা ঘরেই তিনি থাকেন। খুব একটা নিচে নামেন না। রান্নাবান্না, অন্যান্য কাজ নিজেই করে নেন। একজন কাজের মেয়ে আসে তাকে সাহায্য করতে।
এই বৃদ্ধা কোনদিন তার ভাগ্নীপতিকে সহ্য করতে পারেননি। বোন বেঁচে থাকতে এখানে এসেছিলেন, তার মৃত্যুর পরেও থেকে যান। মিস ফর্টেস্কু ও ছেলেরা তাকে ডাকে এফি মাসি বলে।
বাড়ির লোকজন বলতে এই সব?
–হ্যাঁ, ইনসপেক্টর, এরাই সব।
–এবারে আপনার কথা কিছু বলুন মিস ডাভ।
–আমি..আমি একজন অনাথা। সেন্ট অ্যালফ্রেড সেক্রেটারিয়েল কলেজে সেক্রেটারি কোর্স পাস করেছি। কিছুদিন এক অফিসে কাজও করেছি। এখানে আসার আগে মোট তিন জায়গায় আমি কাজ করেছি। কিন্তু এক দেড় বছরের মধ্যেই হাঁপিয়ে উঠতে থাকি। তাই, একটু বেশি স্বাধীনতা নিয়ে থাকব বলে এই ইউট্টি লজে চলে এসেছি। এখানে আছি একবছরের কিছু বেশি।
কথা বলতে বলতে মিস ডাভ সম্বন্ধে একটা ছবি মনে মনে এঁকে নিয়েছিলেন নীল। তার কথা শেষ হতেই বললেন, এবারে আমি ওই পার্লারমেড গ্ল্যাডিস আর পরিচারিকা এলেনের সঙ্গে কথা বলতে চাই।
আর একটা কথা মিস ডাভ, মিঃ ফর্টেঙ্কু কি কোন কারণে পকেটে শস্যের দানা রাখতে পারেন?
–শস্যদানা? আমার কোন ধারণা নেই ইনসপেক্টর। অবাক হয়ে বললেন মিস ডাভ।
–তার পোশাক কে দেখাশোনা করতেন?
–ক্রাম্প।
–আর একটা কথা–মিসেস ফর্টেস্কু কি স্বামীর সঙ্গে একই ঘরে থাকেন?
–হ্যাঁ। মনে হয় তাঁর আসার সময় হয়েছে। হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন মিস
–তিনি তো বললেন গলফ খেলতে গেছেন। কাছাকাছি তত তিনটে গলফের মাঠ রয়েছে। তবুও এখনও পর্যন্ত তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না দেখে আশ্চর্য হচ্ছি।
-এটা আশ্চর্যের কিছু নয় ইনসপেক্টর। গলফ ক্লাব নিয়েই অবশ্য বেরিয়ে গেছেন গাড়ি নিয়ে, তবে গলফ আদৌ নাও খেলতে পারেন।
নীল তীব্র দৃষ্টিতে তাকালেন মিস ডাভের দিকে। একটু পরে জিজ্ঞেস করলেন, কার সঙ্গে খেলেন জানেন?
–সম্ভবত তার সঙ্গী মিঃ ডিকিয়াল ডুবরে। আমি গ্লাডিসকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। একটা কথা ইনসপেক্টর, আপনাকে যেসব কথা বললাম, তা নিয়ে খুব ঘাঁটাঘাঁটি না করার জন্যই আপনাকে পরামর্শ দেব।
মিস ডাভ বিদায় নিলেন। তিনি যে কথাগুলো তাকে বললেন, তার অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে নীলের অসুবিধা হল না। ইউট্টি লজের অভ্যন্তরীণ ছবিটা বেশ পরিষ্কার হয়েই উঠেছে তার কাছে। যদিও কথাগুলো বিদ্বেষমূলকভাবে বললেন কিনা মিস ডাভ, তা তার কাছে স্পষ্ট নয়।
এই বাড়ির যা হালচাল, তাতে মিঃ ফর্টেস্কুকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিষপ্রয়োগের মোটিভের কোন অভাব নেই।
নিজের ভাবনা থেকে বাস্তবে ফিরে এলেন ইনসপেক্টর নীল। ঘরে প্রবেশ করল ভয়ে জড়োসড়ো একটি মেয়ে–গ্ল্যাডিস মার্টিন।
ঘরে ঢুকেই সে বলতে শুরু করল, আমি কিছু করিনি–আমি এসবের কিছুই জানি না।
মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে গুরুত্বপূর্ণ কিছুই জানা সম্ভব হল না।
নতুন কথা যা সে জানালো তা হল সে আগে বিভিন্ন কাফেতে কাজ করেছে। সবে দুমাস হয়েছে এসেছে ইউট্টি লজে।
জিজ্ঞাসাবাদের শেষ দিকে নীল জিজ্ঞেস করলেন, আজকে মিঃ ফর্টেঙ্কু যে স্যুট পরেছিলেন, সেটা কে ব্রাশ করেছিল, বলতে পার?
–ওনার তো অনেক স্যুট আছে, আজ কোনটা পরেছিলেন বলতে পারব না।
–তার পকেটে কোনদিন শস্যের দানা দেখেছ?
–শস্যের দানা? শস্যের দানা কি? অবাক হল গ্ল্যাডিস।
–রাই দানা। কালো রঙের রুটি হয়, জানো তো–এই দানা তোমার মনিবের স্যুটের পকেটে পাওয়া গেছে।
-রাই দানা-
-হ্যাঁ, ওগুলো কি করে পকেটে এলো তুমি কিছু বলতে পার?
–আমি ওসব দেখিনি, কিছু বলতে পারব না।
গ্ল্যাডিসকে বিদায় দিয়ে ইনসপেক্টর রান্নাঘরে এলেন। বিশাল চেহারার লাল মুখ এক স্ত্রীলোক রান্নার কাজ করছিল।
রাঁধুনী মিসেস ক্রাম্পের সঙ্গে দু-চারটে কথা বলে কোনরকমে পালিয়ে বাঁচলেন নীল। পুলিস দেখে এতটুকু টসকায়নি সে। এবাড়িতে যে কখনো বাজে বাজে খাবার দেওয়া হয়েছে, এমন কথা সে কারোর মুখে শুনতে রাজি নয়।
ইনসপেক্টর নীলের অবস্থা দেখে সার্জেন্ট হে দূরে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছিলেন।
নীল হলঘরে ফিরে এলেন। মেরী ডাভ তখন টেলিফোনের রিসিভার কানে ধরে রেখে একটা কাগজে কিছু লিখে নিচ্ছিলেন।
রিসিভার নামিয়ে রেখে মিস ডাভ নীলকে বললেন, একটা টেলিগ্রাম। এই যে—