–হ্যাঁ। তিনি নিজেও যথেষ্ট বুদ্ধিমান। বললেন মিস মারপল।
–তিনি এসব কিছু প্রমাণ করতে পারবেন?
–আমি নিশ্চিত তিনি পারবেন? একটু সময় হয়তো লাগতে পারে।
সুটকেস গোছগাছ করে মিস মারপল আগেই ক্রাম্পের হাতে নিচে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। মিস র্যামসবটমকে তার আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে এবারে তিনি নিচে নেমে এলেন।
প্যাট ফর্টেস্কু তাকে বিদায় জানাবার জন্য হলঘরে অপেক্ষা করছিলেন।
–আপনি আমাদের একজন হয়ে গিয়েছিলেন। আপনার অভাব বেশ বোধ করব।
–কাজের জন্য এসেছিলাম, সেটা শেষ হল, এবারে তো যেতেই হবে। দুঃখ রইল কাজটা তেমন সুখকর হল না। তবে মন্দ কাজের জয় তো হয় না।
প্যাট কথাটা বুঝতে না পেরে বিস্মিতভাবে তাকালেন।
–আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
-তা আমি জানি। একদিন হয়তো পারবেন। তবে যাবার আগে একটা পরামর্শ দিয়ে যাই, যদি কোথাও কোন গোলমাল হয়, আপনি বিপর্যস্ত বোধ করেন, তাহলে আপনার ছেলেবেলার সেই আয়ারল্যাণ্ডেই ফিরে যাবেন।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেদনাকাতর চোখে প্যাটের দিকে তাকালেন মিস মারপল।
–এখানে আর আমাদের থাকবার ইচ্ছা নেই, বলল প্যাট, ল্যান্স বলেছে, সব মিটে গেলে পূর্ব আফ্রিকাতেই আমরা চলে যাব। সেখানেই আনন্দে থাকব।
–ঈশ্বর আপনাকে আশীর্বাদ করুন। ভাল মন্দ মিশিয়েই জীবন, মানুষকে সব কিছুই সাহসের সঙ্গে গ্রহণ করা উচিত।
প্যাটের হাতে মৃদু চাপ দিয়ে সদর দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন মিস মারপল। বাইরে তার জন্য ট্যাক্সি দাঁড়িয়েছিল।
.
সেদিনই সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরলেন মিস মারপল।
ঘরের কাজ করে দেয় যে মেয়েটি, বিটি, মিস মারপলের নামে আসা চিঠিপত্র তার টেবিলে গুছিয়ে রেখেছিল। কুশল বার্তা নেবার পর চিঠিগুলো নিয়ে বসলেন তিনি।
একটা চিঠির ওপরে আঁকাবাঁকা অক্ষরে ছেলেমানুষী লেখার ঠিকানা দেখে সেটা তুলে নিলেন তিনি। খাম ছিঁড়ে চিঠিটা বার করে আনলেন।
.
প্রিম মাদাম,
কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না, তাই আপনাকে লিখছি। আমাকে মাপ করবেন।
ওরা বলেছে খুন–কিন্তু শপথ করে বলছি আমি এমন খারাপ কাজ করিনি। কখনো করতে পারি না। আর আমি জানি, একাজ অ্যালবার্টও করেনি। আমি জানি।
গত গ্রীষ্মকালে ওর সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল। আমরা বিয়ে করব ঠিক ছিল, কিন্তু সব গোলমাল করে দিচ্ছিলেন যিনি মারা গেলেন, সেই মিঃ ফর্টেষ্ণু। তিনি অ্যালবার্টের সব পাওনা মেটাননি; ওকে ঠকিয়ে ছিলেন। কিন্তু তিনি সবই অস্বীকার করছিলেন।
অ্যালবার্ট গরীব, তার কথায় কেউ কান দিচ্ছিল না। লোকেরা বড়লোক মিঃ ফর্টেস্কুর কথাই বিশ্বাস করেছে।
অ্যালবার্টের এক বন্ধু একজায়গায় কাজ করত, সেখানে নতুন একরকম ওষুধ তৈরি হয়। খবরের কাগজেও ওষুধটার কথা বেরিয়েছে, নিশ্চয় আপনি পড়েছেন। ওটা সত্যের ওষুধ, খেলে ইচ্ছে না থাকলেও মানুষ সত্যকথা বলে ফেলে।
মিঃ ফর্টেস্কুর অফিসে অ্যালবার্ট দেখা করতে যাচ্ছিল ৫ই নভেম্বর। আমাকে বলেছিল ওষুধটা মিঃ ফর্টেস্কুর খাবারে মিশিয়ে দিতে। তাহলে ওষুধটা ঠিক সময়ে কাজ করবে আর মিঃ ফর্টেঙ্কু সব স্বীকার করে অ্যালবার্টের পাওনা মিটিয়ে দেবেন।
মাদাম, আমি খুশি হয়ে ওষুধটা তার মারমালেডে মিশিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তারপরেই তিনি মারা যান। আমার মনে হয় ওষুধটা খুবই কড়া ছিল, অ্যালবার্ট নিশ্চয়ই এটা জানত না। জানা থাকলে একাজ ও আমাকে করতে বলতো না। অ্যালবার্ট জানত না, ওর দোষ নেই।
মাদাম, পুলিসকে আমি বলতে পারিনি। আমার ভয় হয়েছিল, তারা অ্যালবার্টকেই দোষী করত। কিন্তু আমি জানি সে একাজ করেনি। এখন সারা বাড়িতে পুলিস, আমি কি করব বুঝতে পারছি না। কি বলা উচিত তা-ও বুঝতে পারছি না। ওদের দেখলেই আমার বড় ভয় করে, কেমন সব প্রশ্ন করে ওরা। মাদাম, অ্যালবার্টের কাছ থেকে খবর পাইনি। আপনাকে কি করে বলব বুঝতে পারছি না, তবু আপনি যদি একবার আসতেন, আমার বিশ্বাস, ওরা আপনার কথা ঠিক শুনবে। আমি আর অ্যালবার্ট কোন দোষ করিনি। আপনি নিশ্চয় সাহায্য করবেন। আমার শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। —স্নেহের
গ্ল্যাডিস মার্টিন
পুনঃ-আমার আর অ্যালবার্টের একটা ছবি পাঠালাম। হলিডে ক্যাম্পে একজন তুলেছিল, সেই আমাকে দেয়। অ্যালবার্ট ছবি ভোলা পছন্দ করে না, তাই ওকে ছবিটার কথা বলিনি। দেখলেই বুঝবেন ও কি চমৎকার ছেলে।
চিঠি পড়া শেষ করে ছবিটা তুলে নিলেন মিস মারপল। সঙ্গে সঙ্গে ঠোঁট চেপে ধরলেন।
ছবিতে ওরা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আছে। মিস মারপলের চোখ যে ছবিটার ওপর নিবদ্ধ হল, তার মুখে হাসি, সে মুখ ল্যান্স ফর্টেস্কুর।
হৃদয়হীন এক খুনীর ছবির দিকে তাকিয়ে প্রচণ্ড ক্রোধে বুকে চাপ সৃষ্টি হলেও দেখা গেল বেদনার অশ্রু ভরে তুলেছে মিস মারপলের দুই চোখ।