-হ্যাঁ, নৈতিক দিক থেকে এক।
–আমি তাই ঠিক করেছিলাম, তাকে কিছু শিক্ষা দেব। বললেন জেনিফার, সেই উদ্দেশ্যেই আমি এখানে তার ছেলের দেখাশোনার কাজটা নিয়েছিলাম। আমার আসার আগে আমার এক বান্ধবীই কাজটা করছিল। কিন্তু ইনসপেক্টর, সত্য কথা বলতে ঠিক কি ভাবে কি করব তা আমি কিছুই জানতাম না।
মিঃ ফর্টেস্কুকে খুন করার ইচ্ছা আমার ছিল না। কেবল এটুকুই মাথায় ছিল তাঁর ছেলের সেবাযত্নে ত্রুটি রাখব, তাইতেই সে মারা যাবে। কিন্তু আমি তা পারি নি। কোন নার্সই সম্ভবত এমন কাজ করতে পারে না।
আমি রীতিমত পরিশ্রম করে ভ্যালকে সুস্থ করে তুলি। এর মধ্য দিয়েই সে আমাকে ভাল বাসতে শুরু করে। পরে বিয়ের কথা বলে।
আমি তখন ব্যাপারটাকে অন্যভাবে দেখার চেষ্টা করি। ভ্যালকে বিয়ে করেই আমি প্রতিশোধ নেবার কথা ভাবি।
অর্থাৎ ভ্যালকে বিয়ে করে তার বাবার সব টাকাকড়ির মালিক হব আমি। এভাবেই বাবাকে ঠকিয়ে তিনি যে টাকা আত্মসাৎ করেন তা আমার হাতে আসবে। এই কাজটা আমার কাছে যুক্তিসঙ্গতই মনে হয়েছিল।
হ্যাঁ, আপনার মনোভাব অযৌক্তিক ছিল না। বললেন নীল, আপনিই মনে হয় পাইয়ের মধ্যে আর টেবিলে কালোপাখি রেখেছিলেন?
-হ্যাঁ, ইনসপেক্টর নীল, বললেন জেনিফার, কাজটা খুবই বোকার মতো হয়ে গিয়েছিল। তবে যেভাবে মিঃ রেক্স ফর্টেঙ্কু অহঙ্কার করে তার কীর্তিকাহিনী শোনাতেন, কি ভাবে আইন মেনেই মানুষকে একের পর এক বোকা বানিয়ে ঠকিয়েছেন, তাতে মনে হয়েছিল তাকে বেশ ভয় দেখিয়ে দিতে হবে।
আর সেই কালোপাখির ঘটনার পরে তিনি বেশ ভয়ই পেয়েছিলেন। মানসিকভাবে খুবই ভেঙ্গে পড়েছিলেন।
একটু থামলেন জেনিফার। শান্ত চোখে তাকালেন নীলের দিকে।
–এটুকুই কেবল, ইনসপেক্টর, এর বেশি আমি কিছুই করিনি। কাউকে খুন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, নিশ্চয়ই আপনি তা বুঝতে পারবেন।
-তা হয়তো পারি, হাসলেন নীল, তবে একটা কথা, আপনি কি ইদানীং মিস ডাভকে কোন টাকা দিয়েছিলেন।
জেনিফার রীতিমত চমকে উঠলেন। ভীত স্বরে বলে উঠলেন, আপনি কি করে জানলেন একথা?
–আমাকে অনেক কিছুই জানতে হয় মাদাম। বললেন নীল।
–আপনি তাকে রুবি ম্যাকেঞ্জি বলে ভাবছেন, একদিন সে এসে আমাকে একথা জানায়। সে বলে, ওকে যদি পাঁচশো পাউণ্ড দিই তাহলে সে আপনার কাছে রুবি ম্যাকেঞ্জি হয়েই থাকবে। আরও বলে, আমিই রুবি ম্যাকেঞ্জি একথা আপনি জানতে পারলে মিঃ ফর্টেঙ্কু ও তাঁর স্ত্রীকে খুনের অপরাধে আমাকেই অভিযুক্ত করা হবে।
ভ্যালকে এসবকথা জানাতে পারিনি, আমার কথাটাও জানত না। তাই অনেক কষ্ট করে আমাকে টাকাটা জোগাড় করতে হয়েছিল।
আমার বিয়ের বাগদানের হীরের আংটি আর মিঃ ফর্টেল্ক দিয়েছিলেন একটা নেকলেস–এই দুটো জিনিস বিক্রি করে দিতে হয়েছিল।
–দুঃখ করবেন না মাদাম, সহানুভূতির সঙ্গে বললেন নীল, টাকাটা মনে হয় আদায় করে দিতে কষ্ট হবে না।
.
পরদিন মিস মেরী ডাভের সঙ্গে দেখা করলেন ইনসপেক্টর নীল।
–মিস ডাভ, আবার একবার আপনার কাছে আসতে হল।
একই রকম নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে নীলের দিকে তাকালেন তিনি।
-বলুন, ইনসপেক্টর।
-ভাবছি, মিসেস পার্সিভালের নামে আপনি পাঁচশো পাউণ্ডের একটা চেক লিখে দেবেন কিনা?
মুহূর্তে মেরী ডাভের মুখের চেহারা পাল্টে গেল। নীলের মনে হল, তার মুখের সমস্ত রক্ত যেন কেউ শুষে নিয়েছে।
–ওই বোকা স্ত্রীলোকটা দেখছি সবই আপনাকে বলে দিয়েছে।
ধীর শান্ত কণ্ঠে বললেন মেরী ডাভ।
-হ্যাঁ, তা বলেছেন। আপনার জানা নেই বোধহয় মিস ডাভ, ব্ল্যাকমেল গুরুতর অপরাধ।
–এটা ব্ল্যাকমেল নয় ইনসপেক্টর। তার কিছু কাজ আমি করে দিয়েছিলাম। ওটা তারই পারিশ্রমিক।
–সেরকমই না হয় আমি ভাবব, আপনি চেকটা দিয়ে দিলেন।
মেরী ডাভ আর কথা বাড়ালেন না। চেকবইটা এনে নীরবে মাথা গুঁজে একটা চেক লিখলেন।
–মনে হয় আপনি অন্য কাজ খুঁজছেন?
–হ্যাঁ। এই কাজটা ঠিক মনঃপুত হয়নি।
–তাই দেখছি। বললেন নীল। সব কিছুই আপনাকে বেশ অসুবিধায় ফেলে দিয়েছে।
আমাদেরও হয়তো যে কোন মুহূর্তে আপনার অতীত সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে হতে পারে।
–কিছুই পাবেন না ইনসপেক্টর, আমার অতীত সম্পূর্ণ নিষ্কলুষ।
আবার শান্ত নির্লিপ্তভাব ফিরে এলো ডাভের কণ্ঠে।
–তেমন হলে তো সত্যিই সুখের ব্যাপার। তবে একটা ব্যাপার খুবই অদ্ভুত যে গত তিন বছর যে সব জায়গায় আপনি কাজ করেছেন আপনি কাজ ছেড়ে চলে আসার তিন মাসের মধ্যেই সেখানে ডাকাতি হয়। এটাকে আশ্চর্য সমাপতনই বলা যায়, কি বলেন?
–এরকম তো ঘটতেই পারে ইনসপেক্টর।
-তা পারে অবশ্যই, বললেন নীল, তবে প্রতিক্ষেত্রেই এরকম হওয়াটা কি ঠিক মিস ডাভ? আমার মনে হচ্ছে, ভবিষ্যতেও আমাদের আবার দেখা হয়ে যেতে পারে।
–কিছু মনে করবেন না ইনসপেক্টর, আমাদের দেখা না হয় সেটাই আশা করি।
.
-ওর বউটার জন্যই দুঃখ হয়। বললেন মিস র্যামসবটম। ছেলেটা সব সময়ই অন্যরকম ছিল। অবাক হয়ে ভেবেছি আমার বোন এলভিরার ছেলে কেন এরকম হল। অনেক কিছুই বুঝতে পারতাম কিন্তু স্নেহের বশে কিছু বলতে পারতাম না।
কিন্তু খারাপ কাজ সবসময়ই খারাপ। সেজন্য শাস্তি হওয়া উচিত। এটাই চিরন্তন রীতি। আপনার মাধ্যমেই এখানে হয়তো সেকাজটা হবার ছিল। আমি অখুশি নই মিস মারপল। আশাকরি পুলিস ইনসপেক্টরকে সব জানিয়ে দিয়েছেন?