-ওহ, নিশ্চয়ই, বললেন মিস ডাভ। পরে পাশে দাঁড়ানো বাটলারের দিকে তাকিয়ে বললেন, ক্রাম্প, তুমি সার্জেন্ট হে-কে রান্নাঘরে নিয়ে যাও। তিনি যা যা দেখতে চান দেখিয়ে দেবার ব্যবস্থা কর।
দুজনে বিদায় নিলে মিস ডাভ ইনসপেক্টরকে একটা ছোট ঘরে নিয়ে এলেন। দুজনে মুখোমুখি একটা টেবিলে বসলেন।
–এই মুহূর্তে বাড়িতে পরিবারের কেউ উপস্থিত নেই, এটা খুবই দুর্ভাগ্যের কথা। তবে মিসেস ফর্টেস্কু যে কোন মুহূর্তে ফিরে আসতে পারেন। মিসেস পার্সিভালও তাই। আমি অবশ্য মিঃ পার্সিভালের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করে চলেছি।
–ধন্যবাদ মিস ডাভ। বললেন নীল।
-প্রাতরাশের কিছু খাবার পেয়ে মিঃ ফর্টে অসুস্থ হয়েছেন আপনি বলছেন, কিন্তু তা কি করে সম্ভব?
–বাড়ি থেকে বেরনোর আগে প্রাতরাশে তিনি কি শস্যদানার মতো কিছু খেয়েছিলেন?
–না, ওসব কিছু তার পছন্দ নয়।
–সকালে তিনি কোনরকম ওষুধ খেতেন? হজমের ওষুধ বা টনিক জাতীয় কিছু?
–না, এ ধরনের কিছু খেতেন না।
–প্রাতরাশে কে কে উপস্থিত ছিলেন?
মিসেস ফর্টেস্কু, মিস ফর্টেস্কু, মিসেস ভাল ফর্টেস্কু। মিঃ পার্সিভাল বাইরে ছিলেন।
কথাটা শুনে একটু চিন্তিত হলেন ইনসপেক্টর নীল। স্ত্রী, আর পুত্রবধূ মাত্র দুজন ব্যক্তি মৃত ব্যক্তির সঙ্গে প্রাতরাশ করেছিলেন। এদের মধ্যে যে কোন একজনের পক্ষে কফিতে ট্যাকসিন মিশিয়ে দেওয়া অসম্ভব কিছু নয়। কফির সঙ্গে ট্যাকসিনের কটুস্বাদ ধরা পড়বার কথা নয়।
মিস ডাভ নিবিষ্ট চোখে নীলকে দেখছিলেন। তার চোখে চোখ পড়তেই মিস ডাভ বলে উঠলেন, কোন বিষক্রিয়ার ঘটনায় কখনো জড়িয়ে থাকিনি।
-কাজটা কে করতে পারে আপনার কোন ধারণা আছে মিস ডাভ?
প্রশ্নটা করে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তার দিকে তাকালেন নীল।
-কোন ধারণা নেই, মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন মিস ডাভ, তবে কি জানেন, সত্যি কথা বলতে তিনি এমন বিরক্তিকর মানুষ ছিলেন যে, বাড়ির কোন মানুষ তার প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন না।
ব্যাপারটা আরো গভীরের মিস ডাভ। এই বাড়ির সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করতে নিশ্চয় আপনার আপত্তি নেই?
নির্লিপ্ত মুখে হাসি ফোঁটাবার চেষ্টা করলেন মিস ডাভ।
–আমার বক্তব্য যদি আদালতে বলা না হয় তাহলে ব্যক্তিগত ভাবে যা জানি বলতে পারি।
–তাহলে নিশ্চিন্তে বলুন আপনি। আমার কাজে সাহায্য হবে।
একটু ঝুঁকে বসলেন মিস ডাভ। একমুহূর্ত চুপ করে কি ভাবলেন। পরে বলতে শুরু করলেন।
-দেখুন ইনসপেক্টর, আমাকে যাতে আপনি ভুল না বোঝেন তাই শুরুতেই একটা কথা বলে নেই। আমার মনিবের প্রতি বিদ্বেষ বা আনুগত্য কোনটাই নেই। আমি টাকার জন্য কাজ করি। প্রয়োজনে আমি সব কাজ যেমন করতে পারি তেমনি, টাকা খরচ করে পাকা লোকদেরই কাজে লাগাই।
এই বাড়িতে টাকা খরচ করতে কেউ কার্পণ্য করে না। তাই মিসেস ক্রাম্পের মত পাকা রাঁধুনি রয়েছে এখানে। আর বাটলার ক্রাম্পও তার কাজ ঠিকঠাকই করে।
বাড়ির লোকদের সম্পর্কে আমার ধারণার কথাই নিশ্চয় আপনি জানতে চেয়েছেন; তাই না ইনসপেক্টর।
-যদি কিছু মনে না করেন। বললেন নীল।
–আমাদের মনিব প্রয়াত মিঃ ফর্টেস্কুর প্রশংসা করা সম্ভব নয়। কেননা, প্রায়ই তিনি তার চতুর শঠতার বিষয় বাড়িতে গল্প করতেন। তাছাড়া এমন কটুভাষী ছিলেন যে…তাছাড়া বাড়ির সকলেই বলতে গেলে সমান বিরক্তিকর।
মিসেস ফর্টেস্কু–অ্যাডেল, তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী, বয়সে তিনি স্বামীর চেয়ে প্রায় ত্রিশ বছরের ছোট। দেখতে সুন্দরী…যৌনআবেদনময়ী, তবু যে তিনি মিঃ ফর্টেস্কুকে বিয়ে করেছিলেন, তা কেবল টাকার লোভে। অসম্ভব টাকার নেশা তার।
এই বিয়েতে মিঃ ফর্টেস্কুর দুই ছেলেমেয়ে পার্সিভাল ও ইলেইন মোটেও খুশি হতে পারেনি। তাদের অশোভন ব্যবহার মিসেস বুদ্ধিমতীর মতই অগ্রাহ্য করেন।
প্রথমে মিঃ পার্সিভালের কথাই শোনা যাক।
–পার্সিভালের কথা? ওর স্ত্রী তাকে ভ্যাল বলে ডাকে। নিজেও ওই নাম পছন্দ করেন। পিতার মতই শঠ আর ধূর্ত। সবসময় নিজের কাজ হাসিল করার মতলবে থাকেন। তবে বাবার
মত খরচে নয়, বরং খুব বিপরীত।
পার্সিভালের স্ত্রী বিয়ের আগে হাসপাতালের নার্স ছিল। খুব ভীরু প্রকৃতির আর খানিকটা বোকাটে। তাদের প্রেমের বিয়েতে মিঃ ফর্টেঙ্কু খুশি হতে পারেননি। বাপ ছেলে পরস্পরকে ঘৃণার চোখেই দেখতেন বলতে পারেন।
মিসেস ভ্যালও শ্বশুরকে অপছন্দ করত।
-মেয়ে ইলেইন কিরকম?
মেয়েটি অতটা খারাপ নয়। তার জন্য আমার দুঃখ হয়। খেলাধূলায় ভাল, পড়াশোনাতেও। এক হতাশ তরুণ স্কুলমাস্টারের সঙ্গে তার একবার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বাপ টের পেয়ে সম্পর্কের ইতি ঘটান। মেয়েটি দেখতে তেমন ভাল নয়। তারও লক্ষ্য বাপের টাকার দিকে।
–অন্য ছেলেটি–মিঃ ল্যান্সলট?
–শুনেছি খুবই সুপুরুষ তবে বদ চরিত্রের। তাকে কখনো দেখিনি আমি। অতীতে একটা চেক জাল করার ঘটনা ঘটিয়েছিল। সে এখন বিদেশে–পূর্ব আফ্রিকায়।
-বাবার সঙ্গে কি ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিল?
-তা ঠিক হয়নি। তবে বহু বছর তার সঙ্গে তিনি কোন যোগাযোগ করেননি। ল্যান্সের নাম একেবারেই শুনতে পারতেন না। তবে টাকাকড়ি থেকে বঞ্চিত করতে পারেননি। কারণ আগেই তাকে কোম্পানির জুনিয়র অংশীদার করে নিয়েছিলেন।
তবে যতদূর মনে হয় ল্যান্স হয়তো আবার ফিরে আসবে।