অ্যাডেল নিশ্চয়ই বলে, এজন্য সে কিছু মনে করেনি। এই চিনি মেশানোর ব্যাপারটা খুব সহজ মনে হলেও খুব ঝুঁকির সন্দেহ নেই। দুঃসাহসী ল্যান্স ঝুঁকির কাজই বরাবর করেছে।
–আপনার ব্যাখ্যা অসম্ভব নয় মিস মারপল, বললেন নীল, বাস্তবে এরকমটা সম্ভবপর। কিন্তু, একটা ব্যাপার আমি বুঝতে পারছি না। তিন তিনটে খুনের ঘটনা ঘটিয়ে সে কি পেতে চেয়েছিল।
নিজের প্রাপ্য যাতে হাতছাড়া না হয় তার জন্য ব্যবসায় বিপর্যয় ঠেকাবার প্রয়োজন ছিল, তার জন্য রেক্স ফর্টেস্কুর মৃত্যু না হয় মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু বাকি দুটি মৃত্যু থেকে তো তার প্রাপ্য কিছু বেশি হবার ব্যাপার ছিল না।
–আপনার সঙ্গে আমি একমত ইনসপেক্টর, বললেন মিস মারপল, আর ঠিক এই কারণেই ব্ল্যাকবার্ড খনির দিকে চোখ ফেলতে হয়। আমার ধারণা, ওই খনির ব্যাপারটা সত্যিই ভুয়ো ছিল না। ল্যান্স সেটা জানতো।
ইনসপেক্টর নীল, স্মৃতি হাতড়ে নানা টুকরো কথা মনে আনবার চেষ্টা করতে লাগলেন। আজ লণ্ডনের অফিসে পার্সিভালকে বলা ল্যান্সের কথাগুলো তার মনে পড়ল। ঝুঁকির লগ্নীর সঙ্গে অলাভজনক সোনার খনি ব্ল্যাকবার্ড নেবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল সে।
খনিটার ব্যাপারে এমন ভুল করা মিঃ রেক্স ফর্টেস্কুর পক্ষে কতটা সম্ভব তা ভাববার চেষ্টা করলেন নীল।
যদি ধরে নেওয়া যায় খনিটা অলাভজনকই ছিল, কিন্তু বর্তমানে এর উন্নতি ঘটেছে।
তাহলে খনিটা কোথায়? ল্যান্স বলেছে পশ্চিম আফ্রিকায়। অথচ মিস র্যামসবটমই সম্ভবত বলেছিলেন সেটা পূর্ব আফ্রিকাতে।
ল্যান্সের তাহলে এরকম ভুল বলার উদ্দেশ্য কি হতে পারে? তবে এমনও হতে পারে বৃদ্ধা র্যামসবটমের স্মৃতিভ্রম ঘটেছে। আবার নাও হতে পারে।
ল্যান্স এসেছে পূর্ব আফ্রিকা থেকে। আর যদি খনিটা পূর্ব আফ্রিকাতেই হয়ে থাকে, তাহলে খনি সম্পর্কে নতুন খবর শোনা তার পক্ষে সম্ভব।
নানা কথা চিন্তা করতে করতে আচমকা নীলের মনে পড়ে গেল–আজই ট্রেনে বেডন হীথ ফেরার সময় খবরের কাগজে একটা সংবাদ তার নজরে পড়েছে। টাইম পত্রিকায় খবরের হেডিংটা ছিল এরকম : টাঙ্গানাইকায় ইউরেনিয়ামের স্তর আবিষ্কার।
নীল ভাবলেন, যদি ওই ইউরেনিয়াম ব্ল্যাকবার্ড খনির এলাকায় হয়ে থাকে, তাহলে সমস্ত ব্যাখ্যাই সুন্দরভাবে মিলে যায়।
ওই খনির ভেতরে ইউরেনিয়ামের স্তর রয়েছে ল্যান্স হয়তো সেখানে এই খবর শুনেছিল। আর এই কারণেই সে এতকালের অলাভজনক ঝুঁকিকর খনি নেবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। ল্যান্স জেনে গিয়েছিল ওখানে ইউরেনিয়ামের স্তরে তার জন্য বিশাল সৌভাগ্য অপেক্ষা করে আছে। কিন্তু…
নীল মিস মারপলের দিকে তাকালেন। বললেন, কিন্তু এসব কি করে প্রমাণ করা যাবে বলে ভাবছেন আপনি?
-আপনি নিশ্চিত প্রমাণ করতে পারবেন আমার বিশ্বাস। গোড়া থেকেই লক্ষ করেছি, আপনি যথেষ্ট বুদ্ধিমান। খুনী কে যখন আপনি জানতে পেরেছেন, দরকারী সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতেও আপনার অসুবিধা হবে না।
যেমন ধরুণ, ওই হলিডে ক্যাম্পের ঘটনা। সেখানে তার ছবি দেখে সকলেই তাকে সনাক্ত করতে পারবে। অ্যালবার্ট ইভান্স নামে একসপ্তাহ সেখানে কাটিয়েছিল সে। কিন্তু ওই নাম নেবার কি দরকার হয়েছিল, তার ব্যাখ্যা সে দিতে পারবে না। বলতে পারেন, এখানেও সে একটা বড় ঝুঁকি নিয়েছিল।
ইনসপেক্টর নীল মাথা ঝাঁকালেন। পরে বললেন, কিন্তু মিস মারপল, এসব কিছুই তো কল্পনা নির্ভর।
-হলেও আমি নিশ্চিত এরকম চরিত্র আপনি আগেও দেখেছেন।
–হ্যাঁ। দেখেছি। মৃদু হাসলেন নীল।
-বেচারী প্যাটকে দেখেই ল্যান্সের দিকে নজর পড়েছিল আমার। বড় দুর্ভাগা মেয়ে–সবসময় বদ লোককেই ও বিয়ে করেছে।
-কিন্তু রুবি ম্যাকেঞ্জির ব্যাপারটা আমার কাছে পরিষ্কার নয় এখনো।
–কারণ আপনি বরাবর ভুল মানুষকেই ভেবেছেন। মিসেস পার্সির সঙ্গে গিয়ে কথা বলুন, তাহলেই আপনার ধন্দ ঘুচবে।
.
ইনসপেক্টর নীল জেনিফার ফর্টেস্কুর ঘরে এলেন।
মিসেস ফর্টেস্কু, বিয়ের আগে আপনার নাম কি ছিল, জানতে পারি?
–ওহ।
প্রশ্ন শুনে বেশ চমকে গেলেন জেনিফার। তার চোখে ভয়ের ছায়া পড়ল।
–সত্য কথাটা ভোলাখুলি বলাই ভাল মাদাম। আমার মনে হয় বিয়ের আগে আপনার নাম ছিল রুবি ম্যাকেঞ্জি; তাই না?
–আমি–মানে–এতে ক্ষতি কি হল?
–না, ক্ষতি বা দোষের কিছু নয়। বললেন নীল, কদিন আগে পাইউড স্যানেটোরিয়ামে আপনার মায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলাম।
-মায়ের সঙ্গে এখন আর দেখা করতে যাই না। মা আমার ওপর রাগ করে আছেন। নিশ্চয়ই জানেন, মা বাবাকে খুব ভালবাসতেন।
–আর তাই তিনি আপনাকে স্বামীর হত্যার প্রতিশোধ নেবার মতো করে তৈরি করেছিলেন?
–হ্যাঁ, বললেন জেনিফার ফর্টেস্কু, ছেলেবেলা থেকেই তিনি বাইবেল স্পর্শ করিয়ে আমাদের শপথ করাতেন–যেন আমরা ভুলে না যাই তাকে একদিন খুন করতে হবে। বড় হয়ে যখন হাসপাতালের কাজ করতে যাই, তখন বুঝতে পেরেছিলাম, মার মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল না।
–তার পরেও, আপনার মনে প্রতিশোধ নেবার ইচ্ছা ছিল?
-হ্যাঁ, ইনসপেক্টর, সেটা ছিল। আমি জানতাম মিঃ রেক্স ফর্টেষ্ণু বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিলেন। তিনি গুলি করে বা ছুরি মেরে বাবাকে হত্যা করেননি। কিন্তু তার জন্যই বাবাকে মরতে হয়েছিল। দুটো ব্যাপারই এক, তাই নয়?