–সে বলেছিল, আমি এ কাজ করিনি। নীল বললেন।
-ঠিক তাই, গর্বিত স্বরে বললেন মিস মারপল, আপনার জানার কথা নয় ইনসপেক্টর, ঠিক ওরকম কথাই ও বলতে অভ্যস্ত ছিল। কোন গহনা কিংবা বাসন ভেঙ্গে ফেললেও, গ্ল্যাডিস সব সময় বলত, আমি একাজ করিনি মিস মারপল। কি করে হল ঠিক বুঝতে পারছি না।
আমার বিশ্বাস ওর মতো মেয়েরা এরকম বলতেই অভ্যস্ত। কোন দোষ ঘটে গেলে, ওদের সবার আগে চিন্তা হয় কি করে দায় এড়িয়ে যাওয়া যায়। এটাই তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।
কোন দুর্বল মনের তরুণী যখন কাউকে খুন করতে না চাইলেও তার খুনের কারণ হয়ে পড়ে তখন সে কথাটা স্বীকার করে নেবে, এরকমটা নিশ্চয়ই আপনি ভাববেন না। এরকম হলে তা খুবই অস্বাভাবিক বলতে হবে।
ইনসপেক্টর নীলের মনে পড়ল গ্ল্যাডিসের কথাগুলো। মেয়েটা খুবই নার্ভাস ছিল। অস্থিরভাবে বারবারই এককথা উচ্চারণ করছিল, আর এলোমেলো দৃষ্টি ফেলছিল। এসবের যে কোন গূঢ় কারণ থাকতে পারে তা তার তখন মনে হয়নি। এখন নিজের ভুলটা বুঝতে পারছিলেন।
–সবকিছু অস্বীকার করবে স্বভাবতঃই এই সিদ্ধান্ত করে নিয়েছিল গ্ল্যাডিস। তারপর কি করে কি হলো এসব হয়তো ভেবে দেখার চেষ্টা করেছিল। ভেবেছিল হয়তো অ্যালবার্ট জানত না ওষুধটা কতটা কড়া। কিংবা নিজে বেশি মাত্রায় দিয়ে ফেলেছে এরকমও ভেবে থাকতে পারে।
অ্যালবার্ট যে তার সঙ্গে যোগাযোগ করবে তা অনুমান করেছিল গ্ল্যাডিস। সে তা করেও ছিল অবশ্য। আমার ধারণা অ্যালবার্ট টেলিফোন করেছিল তাকে।
সেদিন বাড়িতে অনেক টেলিফোন এসেছিল। যখনই মিসেস ক্রাম্প বা ক্রাম্প রিসিভার তুলেছে অমনি লাইন কেটে যায়।
এরকমই হয়তো অ্যালবার্ট করতো, যতক্ষণ না গ্ল্যাডিস ফোন ধরত। অ্যালবার্ট তাকে ওইদিন গ্ল্যাডিসকে তার সঙ্গে দেখা করার কথাই বলতো।
আমার এই অনুমানের একটা সমর্থন পাওয়া যায় মিসেস ক্রাম্পের কথায়। তিনি বলেছেন, ওইদিন ও সবচেয়ে ভাল নাইলনের মোজা আর জুতো পরেছিল। সে কারো সঙ্গে দেখা করতে যাবার জন্য তৈরি হয়েছিল।
গ্ল্যাডিস জানত অ্যালবার্ট ইউট্রিলজেই আসছিল। এই কারণেই খুব চঞ্চল হয়ে উঠেছিল গ্ল্যাডিস। অন্যদিনের চাইতে অনেক দেরিতে চা এনেছিল।
আমার ধারণা দ্বিতীয় ট্রেটা নিয়ে ও যখন হলঘরে যায় তখনই পাশের দরজা দিয়ে অ্যালবার্টকে দেখতে পায়।
অ্যালবার্ট হাতছানি দিয়ে ওকে ডাকছিল। ট্রে নামিয়ে রেখে গ্ল্যাডিস তার সঙ্গে দেখা করতে চলে যায়।
এরপরই ওকে গলা টিপে হত্যা করে? বললেন নীল।
–অ্যালবার্ট কোন ঝুঁকি রাখতে চায়নি। সে এক মিনিটের মধ্যেই কাজ সেরেছিল। বোকা মেয়েটাকে শয়তান খুনীর হাতে মরতে হল। সে ওর নাকে একটা ক্লিপ এঁটে দেয়। এই কাজটা খুনী করেছিল ছড়ার কথার সঙ্গে ব্যাপারটাকে খাপ খাওয়ানোর জন্য। সবই ছিল যথারীতি-রাই, কাতলোপাখি, কোষাগার, রুটি আর মধু। আর পাখির নাক ঠোকরানোর ব্যাপারটাকে বোঝাতে চেয়েছিল ক্লিপ আটকে।
-তার মানে বলতে চাইছেন, নিজেকে উম্মাদ প্রতিপন্ন করে শাস্তি এড়াবার ফন্দি এঁটেছিল খুনী? বললেন নীল।
শাস্তি সে এড়াতে পারবে না ইনসপেক্টর। কারণ হল, সে মোটেও উম্মাদ নয়, সম্পূর্ণ সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ।
নীল এবারে নড়েচড়ে বসলেন। পরে বলতে লাগলেন।
-আপনি যা পেশ করলেন, এটাকে একটা থিওরীই বলা চলে মিস মারপল। হয়তো আপনি বলবেন, থিওরী নয় আপনি এসব জানেন। আপনি বলতে চাইছেন, অ্যালবার্ট নামে একটা লোক উদ্দেশ্য মূলক ভাবে খুনগুলো করে। নিজের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সে হলিডে হোমে গ্ল্যাডিসের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিল।
সেই পুরনো ব্ল্যাকবার্ড খনির ব্যাপারে প্রতিশোধ নেবার জন্যই অ্যালবার্ট ইভান্স এই সব করেছিল, এই যদি আপনার বলার উদ্দেশ্য হয় তাহলে মেনে নিতে হয় মিসেস ম্যাকেঞ্জির ছেলে ডন ম্যাকেঞ্জি যুদ্ধে মারা যায়নি।
জীবিত থেকে সেই এই সমস্ত করেছে।
ইনসপেক্টর নীল অবাক হয়ে দেখলেন, মিস মারপল তার কথা অস্বীকার করে সজোরে মাথা ঝাঁকালেন।
-না, ইনসপেক্টর না, ওরকম কিছুই আমি বলছি না। কালোপাখির ব্যাপারটা কেউ একজন জানতো, যেগুলো লাইব্রেরীতে আর পাইয়ের মধ্যে রাখা হয়েছিল। সেই এই ব্যাপারটাকে কাজে লাগিয়েছিল।
কালোপাখিগুলো যে রেখেছিল সে নিশ্চয় ব্ল্যাকবার্ড খনির কথা জানত। প্রতিশোধ নেবার কথাটাও তার মাথায় ছিল।
তবে মিঃ রেক্স ফর্টেস্কুকে খুন করা তার ইচ্ছা ছিল না। সে চেয়েছিল ভয় ধরিয়ে দিয়ে মিঃ ফর্টেস্কুকে মানসিকভাবে কষ্ট দিয়ে প্রতিশোধ নিতে।
মিসেস ম্যাকেঞ্জি আপনাকে বলেছিলেন বাচ্চাদের তিনি প্রতিশোধ নেবার জন্য তৈরি করে তুলেছিলেন। কিন্তু ইনসপেক্টর, আমি বিশ্বাস করি না একাজ করা সম্ভব। বাচ্চাদের এভাবে তৈরি করা যায় না।
কেন না, অপরিণত বুদ্ধি হলেও বাচ্চাদের একধরনের বুদ্ধিবিবেচনা থাকে। তারা বড়জোর এটুকু করতে পারে, বাবার মৃত্যুর যে কারণ হয়েছে, যাতে সে মানসিক কষ্ট পায়। এই ক্ষেত্রে এরকমই কিছু হয়েছিল আর খুনী সেটা কাজে লাগায়। তাই বলছি কালোপাখির ব্যাপারটা পুরোপুরি ধাপ্পা।
–তাহলে একজন খুনীকে আলাদাভাবে পাওয়া যাচ্ছে। বললেন নীল, আপনি এবারে খুনীর সম্পর্কে বলুন, লোকটি কে?
-খুনী। মৃদু হাসলেন মিস মারপল, খুনী সম্পর্কে আমার বিবরণ শুনলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন লোকটি কে। অন্তত খুনগুলো করার মতো মানসিক গঠন কার থাকতে পারে তা আপনি বুঝতে পারবেন।