মারমালেডে কে ট্যাকসিন মিশিয়েছিল এবিষয়ে আপনি কি কোন থিয়োরীর কথা বলছেন?
-না ইনসপেক্টর, এটা কোন থিয়োরী নয়। আমি নিশ্চিত ভাবেই জানি ওসব।
একটু থেমে মিস মারপল ফের বললেন, কাজটা করেছিল গ্ল্যাডিসই।
কিছুই যেন বোধগম্য হচ্ছে না এভাবে তাকিয়েছিলেন নীল। তার চোখ পিটপিট করছিল।
–আপনি তাহলে বলছেন, গ্ল্যাডিসই মিঃ ফর্টেস্কুকে মারার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে মারমালেডে বিষ মিশিয়েছিল? বললেন নীল, এ অসম্ভব মিস মারপল। আপনার একথা মেনে নিতে পারছি না, আমি দুঃখিত।
-না, ইনসপেক্টর, মারমালেডে বিষটা মিশিয়েছিল গ্ল্যাডিসই, কিন্তু মিঃ ফর্টেস্কুকে মারা তার উদ্দেশ্য ছিল না। আপনিই বলেছিলেন, জেরার সময় সে খুবই নার্ভাস হয়ে পড়েছিল। উল্টোপাল্টা কথা বলেছিল। ওকে অপরাধী বলেই আপনার মনে হয়েছিল।
-হ্যাঁ, তবে খুনের অপরাধ নয়। বললেন নীল।
-সেকথা ঠিক আসলে কাউকে খুন করা ওর উদ্দেশ্য ছিল না। তবে বিষটা ও মিশিয়েছিল। আমার সন্দেহ, সে জানত না ওই জিনিসটা বিষ।
–বিষটাকে তাহলে কী মনে করেছিল গ্ল্যাডিস। অবিশ্বাসের সুর প্রকাশ পেল নীলের কথায়।
হ্যাঁ, ইনসপেক্টর ওই জিনিসটাকে সে বিষ বলে জানত না। ও জানত ওটা সত্য উদ্রেকের ওষুধ।
মেয়েদের একটা বিচিত্র অভ্যাস হল তারা কাগজ থেকে নানা টুকরো খবর কেটে রেখে দেয়। বিশেষ করে প্রিয় পুরুষকে বশীভূত করার কোন জিনিস বা পদ্ধতির প্রতি মেয়েদের আকর্ষণ যুগ যুগ ধরে একই রকম।
ডাইনীতন্ত্র, কবচ মাদুলি ইত্যাদি তাদের সহজে আকৃষ্ট করে। আজকাল তো বিষয়গুলোকে বিজ্ঞান বলেও চালানোর চেষ্টা দেখা যায়।
এটা সত্যি যে মন্ত্রবলে কিছু করা কিংবা যাদুলাঠির কথা কেউ বিশ্বাস করবে না–যাদুলাঠির ছোঁয়ায় কাউকে ব্যাঙ করে দেওয়া সম্ভব।
কিন্তু কাগজে যদি ছাপা হয়, বিশেষ কোন ইনজেকশন শরীরে নিলে, আপনার মধ্যে ব্যাঙের হাবভাব ফুটে উঠবে, তাহলে কেউ অবিশ্বাস করবে না।
সত্য উদ্রেককারী এমনি কোন ওষুধের কথা যদি কাগজে ছাপা হয় আর গ্ল্যাডিসের মতো মেয়েদের চোখে যদি তা পড়ে, তারা সহজেই বিশ্বাস করে নেবে।
–এরকম কোন ওষুধের কথা তাকে কি কেউ বলেছিল?
–হ্যাঁ। অ্যালবার্ট ইভান্স। মিস মারপল বললেন, নামটা অবশ্য ভুয়ো। তবে ওই নামেই সে একটা হলিডে ক্যাম্পে গত গ্রীষ্মকালে গ্ল্যাডিসের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল এবং উদ্দেশ্যমূলক ভাবেই তার খুব প্রশংসা করে আর ভালবাসার অভিনয় করে।
আমার বিশ্বাস সেই সময়েই সে তার ওপরে খুব অবিচার হয়েছে এমন কোন ঘটনার কথা গ্ল্যাডিসকে জানায়। সেই সূত্রেই রেক্স ফর্টেস্কুর প্রসঙ্গ উঠেছিল। সম্ভবত অ্যালবার্ট জানিয়েছিল এমন কিছু ওষুধের কথা যা প্রয়োগ করলে রেক্স ফর্টেস্তু নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করবে আর ক্ষতিপূরণ করবে।
এসব অবশ্য আমার জানার কথা নয় ইনসপেক্টর নীল, তবে এরকম যে হয়েছিল তাতে আমি নিশ্চিত।
অ্যালবার্ট ইভান্স ভালবাসার অভিনয় করে সহজেই গ্ল্যাডিসের মন জয় করতে সক্ষম হয়। মেয়েটা পুরুষের ভালবাসা লাভের জন্য বড়ই লালায়িত ছিল।
যাইহোক, অ্যালবার্টই উদ্দেশ্যমূলক ভাবে গ্ল্যাডিসকে এখানে কাজ করতে পাঠায়। সহজে আজকাল কাজের লোক মেলে না। তাই কাজটা পেতে তার দেরি হয়নি।
এরপর অ্যালবার্ট আর গ্ল্যাডিস সাক্ষাতের জন্য একটা দিন স্থির করে। আপনি গ্ল্যাডিসের ঘরে কয়েকটা ছবির পোস্টকার্ড পেয়েছিলেন, নিশ্চয় আপনার মনে আছে। তার একটাতে লেখা ছিল। আমাদের দেখা করার তারিখ মনে রেখো।
একটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই ওরা দুজনে কাজে নেমেছিল। তাই পরস্পরের সাক্ষাতের ওই দিনটা দুজনের কাছেই একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন ছিল।
অ্যালবার্ট সেই সত্য উদ্রেককারী বিশেষ ওষুধটা গ্ল্যাডিসকে দিয়েছিল? ওই বিশেষ দিনেই সেটা মারমালেডে মিশিয়ে দেবার কথা ছিল যাতে ওই দিনই মিঃ ফর্টেঙ্কু প্রাতরাশে সেটা খেতে পারেন। অ্যালবার্ট এই কথাও বলেছিল গ্ল্যাডিস যেন কিছু রাই মিঃ ফর্টেস্কুর পকেটে রেখে দেয়।
অ্যালবার্ট কিভাবে কি বুঝিয়েছিল গ্ল্যাডিসকে আমি সেসব জানি না। তবে, গ্ল্যাডিসকে আমি যতটা জানি, সহজেই সে সবকিছু বিশ্বাস করে নিয়েছিল। ওর মত একটি অবাঞ্ছিত মেয়েকে সুপুরুষ কোন তরুণ যা বলবে তাই বিশ্বাস করে নেওয়া তার পক্ষে কিছুমাত্র অসম্ভব ছিল না।
ইনসপেক্টর হাঁ করে যেন গিলছিলেন মিস মারপলের কথাগুলো। তিনি সম্মোহিতের মতোই বলে উঠলেন, তারপর? বলতে থাকুন।
–ব্যাপারটা ছিল এই রকম, ওইদিন অ্যালবার্ট মিঃ রেক্স ফর্টেস্কুর সঙ্গে অফিসে দেখা করতে যাবে। ইতিমধ্যে প্রাতরাশের সঙ্গে খাওয়া সত্য উদ্রেকের ওষুধ কাজ করতে শুরু করবে আর মিঃ ফর্টেষ্ণু সব স্বীকার করবেন।
মিস মারপল কথা শেষ করলেন দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে। পরে বললেন, ইনসপেক্টর নীল, একবার উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন মিঃ রেক্স ফর্টেষ্ণুর মৃত্যুর খবর পাবার পর গ্ল্যাডিসের মনোভাব কি রকম হওয়া সম্ভব।
–কিন্তু মিস মারপল, ঘটনা যদি এরকমই হতো, তাহলে আমার জেরার মুখে গ্ল্যাডিস কথাটা প্রকাশ না করে পারত না।
-তাহলে আপনি মনে করবার চেষ্টা করুন, তীক্ষ্ণ স্বরে বললেন মিস মারপল, আপনি যখন তাকে জেরা শুরু করেন, তখন প্রথমেই সে আপনাকে কি বলেছিল?