–তাহলে তো অনেক সম্ভাবনাই এরকম আপনি পেতে পারেন। ওহ, খুবই দেখছি আতান্তরে পড়ে গেছেন আপনি ইনসপেক্টর।
–পাইউড স্যানাটোরিয়ামের নাম শুনেছেন? আপনাকে সম্ভবত সেখানে সনাক্ত করা যেতে পারে, বললেন, নীল।
–ওই স্যানাটোরিয়ামটা কোথায় আছে?
–সেকথা আপার অজানা নয় নিশ্চয়ই, মিস ডাভ।
–ওই নাম জীবনে এই প্রথম আপনার মুখ থেকে শুনতে পেলাম। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
–তাহলে আপনি রুবি ম্যাকেঞ্জি নন, একথা অস্বীকার করছেন?
–কি বলব ইনসপেক্টর। আমি মেরী ডাভ নই কোন রুবি ম্যাকেঞ্জি একথা যদি আপনি জেনে থাকেন তাহলে তা প্রমাণ করার দায়িত্ব আপনারই।
ইনসপেক্টর নীলের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন মেরী ডাভ।
–আমি রুবি ম্যাকেঞ্জি কিনা, ইনসপেক্টর, আপনি নিশ্চয়ই প্রমাণ করবার চেষ্টা করতে পারেন।
ইনসপেক্টর নীল সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসতেই সার্জেন্ট হে এগিয়ে এলো তার দিকে।
–স্যর, মিস মারপল আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলেন।
–পরে দেখা যাবে। ব্যস্তভাবে বললেন নীল, সব কাজ ফেলে রেখে তুমি আগে মেরী ডাভ তার সম্পর্কে যে কথাগুলো বলেছেন, যাচাই করে দেখো। তার আগের চাকরি ইত্যাদি সবকিছু খুব জরুরী।
–ঠিক আছে স্যর। এখুনি করছি।
নীল লাইব্রেরী ঘরের দিকে পা বাড়ালেন।
হাতের ব্যস্ত সেলাইয়ের কাঁটার দিকে তাকিয়ে মিস মারপল লাইব্রেরীতে বসে মিসেস পার্সিলের সঙ্গে জমিয়ে গল্প করছিলেন।
দরজার সামনে পৌঁছে নীল শুনতে পেলেন, মিস মারপল বলছেন, আমার মনে হয়েছিল, নার্সিং-এর কাজটা আপনি খুবই পছন্দ করেন। ওটা সত্যিই মহৎ কাজ।
নীল নিঃশব্দে আড়াল নিলেন। কিন্তু তাঁর মনে হল, মিস মারপলের চোখকে তিনি ফাঁকি দিতে পারেন নি।
ঘরের ভেতরে তখন মিস মারপল বলছেন, আপনাদের আলাপ পরিচয়ও বোধ হয় এই সেবার কাজের মাধ্যমেই হয়েছিল?
-হ্যাঁ, ব্যাপারটা সেভাবেই শুরু হয়েছিল। আমি এখানে পার্সিভালের সেবার জন্য এসেছিলাম।
–চাকরবাকরদের কথায় অবশ্য কান দেওয়া ঠিক নয়। শুনেছি, আপনার আগে একজন নার্স ছিলেন, তাকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল অযত্ন করার জন্য, তাই কি?
অযত্ন ঠিক নয়। বললেন জেনিফার, ওর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার বদলি হিসেবে আমি এসেছিলাম।
তখনই আপনাদের রোমান্স শুরু হয়? দারুণ ব্যাপার।
-হ্যাঁ। কিন্তু কি জানেন, মাঝে মাঝে কেমন মনে হয়, আবার যদি ওয়ার্ডে ফিরে যেতে পারতাম।
-হ্যাঁ আপনার মন আমি বুঝতে পারি। কাজটা খুবই প্রিয় ছিল আপনার।
–আগে অতটা মনে হত না। কিন্তু… এমন একঘেয়ে জীবন… কোন কিছু করার নেই…ভ্যালও তার ব্যবসা নিয়েই ডুবে থাকে–
–পুরুষরা আজকাল এরকমই হয়েছে। বললেন মিস মারপল।
–কিন্তু ওরা বোঝে না যে এতে স্ত্রীর জীবন কতটা শূন্য একঘেয়ে হয়ে যায়। হয়তো এটা আমার কাজেরই সাজা। তখন মনে হয়, কাজটা করা আমার উচিত হয়নি।
-কোন কাজটার কথা আপনি বলছেন?
–ভ্যালকে বিয়ে করার কথা বলছি।…না মিস মারপল, একটু ইতস্তত করলেন জেনিফার, এসব কথা নিয়ে আর আলোচনা করতে চাই না।
মাথা নাড়লেন মিস মারপল। প্রসঙ্গটা চাপা দেবার জন্যই যেন তিনি এরপর প্যারীতে নতুন চালু হওয়া মেয়েদের পোশাকের প্রসঙ্গ তুললেন।
.
স্টাডিরুমে মিস মারপল আর ইনসপেক্টর নীল কথা বলছেন।
-আমার যেটুকু যাচাই করার বাকি ছিল তা সম্পূর্ণ হয়েছে ইনসপেক্টর। এখন আমি নিশ্চিত। বললেন মিস মারপল।
-কোন ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন? মিষ্টি হেসে বললেন নীল।
–আমি নিশ্চিত জেনেছি, কে মিঃ রেক্স ফর্টেস্কুকে খুন করেছে। আপনার কাছ থেকে মারমালেডের ব্যাপারটা শোনার পরেই সবকিছু আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। কে, কিভাবে খুনটা করেছে, কোন কিছুই আর আমার কাছে অস্পষ্ট থাকে না।
ইনসপেক্টর নীল কোন আগ্রহ প্রকাশ করলেন না। তার মনোভাব বুঝতে পেরে মিস মারপল বললেন, আমার অসুবিধা হল, মাঝে মাঝে পরিষ্কার করে বোঝাতে পারি না।
–আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন, আমি বুঝতে পারছি না মিস মারপল। বললেন নীল।
–তাহলে সব খুলেই বলছি। অবশ্য আপনার সময় থাকলে।
একটু থামলেন মিস মারপল। একটু নড়েচড়ে বসলেন, পরে বলতে শুরু করলেন।
–আমি বাড়ির সকলের সঙ্গেই কথা বলেছি। একদিকে ওই বৃদ্ধা মিস র্যামসবটম থেকে ক্রাম্প ও মিসেস ক্রাম্পকেউই বাদ যায়নি। ক্রাম্পকে আমার মিথ্যাবাদী বলেই মনে হল। সে যাই হোক–এখন সেই টেলিফোনের ব্যাপার থেকে নাইলনের মোজা কোন বিষয়ই আমার অজানা নেই।
নীল মিস মারপলের দিকে চোখ পিটপিট করে তাকালেন। তার মনে হল, বৃদ্ধা হয়তো নতুন অজানা কোন তথ্য সংগ্রহ করেছেন। সেই কথার অবতারণা করার জন্যই হয়তো নানা গোলমেলে প্রসঙ্গ উত্থাপন করছেন।
তবু তিনি অধৈর্য হলেন না। তিনি মিস মারপলের সব কথা শুনবার জন্য নিজেকে তৈরি করে নিলেন।
সব কথাই বলুন আপনি। বললেন নীল, তবে আসল কথাটা দিয়েই শুরু করুন।
–সেই করছি। বললেন মিস মারপল। আসল কথাটা হল গ্ল্যাডিসকে নিয়ে। আপনি তো জানেন, আমি এখানে এসেছিলাম গ্ল্যাডিসের জন্যই। আপনিই দয়া করে তার জিনিসপত্র দেখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তাতেই আমি ওই টেলিফোনের কথা, নাইলনের মোজা ইত্যাদির বিষয় জানতে পারি। আর এই সূত্রেই মিঃ ফর্টেস্কু আর ট্যাকসিনের বিষয় আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়।