-ওসব নিশ্চয় স্যর হেনরি ক্লিদারিং-এর কাজ। আমার দীর্ঘ দিনের বন্ধু উনি। বললেন মিস মারপল।
–যাই হোক, দেখুন আপনার আর আমার দৃষ্টিকোণ সম্পূর্ণ আলাদা। আমার মত হলো আসল ঘটনাটাকে বাস্তব দৃষ্টিতে দেখা।
–আপনার কথাটা একটু পরিষ্কার করে বলুন। বললেন মিস মারপল।
–মিঃ ফর্টেস্কুর খুনের পরিণতিতে দেখা যাচ্ছে অনেকেই লাভবান হচ্ছে, বিশেষ করে একজনের কথাই বলব।
দ্বিতীয় যে খুনটা হল, দেখা যাচ্ছে তাতেও একই লোক লাভবান হচ্ছে। তৃতীয় খুনটাকে বলতে পারেন নিরাপত্তার জন্য খুন।
কিন্তু ইনসপেক্টর, আপনি কোন খুনকে তৃতীয় বলছেন? তীক্ষ্ণকণ্ঠে বললেন মিস মারপল।
-আপনার ইঙ্গিত ঠিক। আমি সেই ছড়ার কথাই ভাবছিলাম। রাজা তার কোষাগারে রানী তার পার্লারে আর পরিচারিকা কাপড় শুকোতে দিচ্ছে–পরপর।
-হ্যাঁ, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এই ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয়নি। গ্ল্যাডিস মিসেস ফর্টেস্কুর আগেই খুন হয়েছেন।
ঘটনা এরকমই। যদিও গ্ল্যাডিসের মৃতদেহ আবিষ্কৃত হয়েছে অনেক রাতে। তার মৃত্যুর সঠিক সময় জানা সম্ভব হয়নি। অবশ্য আমার ধারণা সে বিকেল পাঁচটা নাগাদ খুন হয়েছে।
তা না হলে দ্বিতীয় ট্রেটা সে নিশ্চয়ই ড্রইংরুমে নিতে যেত।
–হ্যাঁ, এতে কোন ভুল নেই। বললেন ইনসপেক্টর নীল, প্রথমে সে চায়ের ট্রেটা নিয়ে যায়। দ্বিতীয়বারে খাবারের ট্রেটা নিয়ে হলঘরে আসতেই কিছু একটা ঘটে যায়। হয় সে কিছু দেখে থাকবে নয়তো শুনে থাকতে পারে।
এমন হওয়াও অসম্ভব নয়, সেই সময়েই মিসেস ফর্টেস্কুর ঘর ছেড়ে নেমে আসছিলেন। অথবা মিসেস ইলেইনের ছেলে বন্ধু জেরাল্ট রাইটও হতে পারে।
যেই হোক, গ্ল্যাডিসকে ইশারায় বাগানে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানেই তাকে মরতে হয় শেষ পর্যন্ত।
-আপনার অনুমান যথার্থ ইনসপেক্টর। গ্ল্যাডিস বাগানে কাপড় তুলতে গিয়েছিল, আমি তা মনে করি না। ওরকম সন্ধ্যার সময়ে কেউ কাপড় শুকোতে দিতে যায় না। গোটা বাপারটাই একটা ধোঁকা। আসলে ওই ছড়ার সঙ্গে সঙ্গতি রাখারই অপচেষ্টা বলতে পারেন। তারপর ওই নাকে ক্লিপ আটকে দেয়া–সবই।
–পাগলামি ছাড়া কিছু নয় ওসব। আর এখানেই আপনার সঙ্গে আমার দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য। আপনার ওই ছেলেভুলানো ছড়ার ব্যাপারটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না।
-কিন্তু ওটা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন, ঘটনাগুলো, মিলে যাচ্ছে।
–তা অস্বীকার করছি না। কিন্তু ছড়ায় রয়েছে, পরিচারিকা তৃতীয় খুন। বাস্তবে আমরা দেখছি খুন হচ্ছেন রানী অর্থাৎ অ্যাডেল ফর্টেস্কু। তার আগেই অর্থাৎ পাঁচটা পঁচিশ থেকে ছটার মধ্যে, আমার বিশ্বাস গ্ল্যাডিস তার আগেই মারা গিয়েছিল। ছড়ার কথার সঙ্গে সংগতি তো রইল না মিস মারপল?
–আমার মনে হচ্ছে আপনি অসংগতিটা আরোপ করবার চেষ্টা করছেন। বললেন মিস মারপল।
ইনসপেক্টর উঠে দাঁড়ালেন। মিস মারপলের কথাটা কানে তুললেন না। ঘর ছেড়ে যাবার আগে স্বগতোক্তির মতো বললেন, একজনই মাত্র হতে পারে।
.
মেরী ডাভ ছোট্ট একটা ঘরে থাকেন। নিজের ঘরে বসে তিনি পরিবারের হিসেবের খাতায় চোখ বোলাচ্ছিলেন।
এমনি সময় দরজায় টোকা দিয়ে ইনসপেক্টর নীল ঘরে ঢুকলেন।
চোখ তুলে নিস্পৃহ চোখে তাকালেন মিস ডাভ।
–সামনের চেয়ারটায় বসুন ইনসপেক্টর। এই মাসের হিসেবটা একটু দেখে নিচ্ছি।
ধন্যবাদ জানিয়ে চেয়ারে বসলেন নীল। তিনি মিস ডাভের ভাবভঙ্গির সঙ্গে মনে মনে মানসিক হাসপাতালে দেখা মিসেস ম্যাকেঞ্জির ভাবভঙ্গির মিল খুঁজবার চেষ্টা করলেন। কিন্তু হতাশ হলেন।
একটু পরেই হিসেবের খাতাটা বন্ধ করে একপাশে সরিয়ে রাখলেন মিস ডাভ।
-এবারে বলুন, ইনসপেক্টর।
-এই তদন্তে একটা ব্যাপারের ব্যাখ্যা কিছুতেই পাওয়া যাচ্ছে না। মিঃ ফর্টেস্কুর পকেটে কিছু রাই পাওয়া গিয়েছিল, তার কথাই বলছি আমি যদি
ব্যাপারটা সত্যিই অদ্ভুত, বললেন মিস ডাভ, কিন্তু এর কোন ব্যাখ্যা আমারও জানা নেই।
–আরো একটা ব্যাপার। গত গ্রীষ্মে মিঃ ফর্টেস্কুর টেবিলের ওপরে চারটে কালোপাখি পাওয়া গিয়েছিল। আর পাইয়ের পাত্রেও মাংসের বদলে পাওয়া গিয়েছিল কালোপাখি।
–হ্যাঁ, আমি জানি।
–দুটো ঘটনার সময়েই আপনি এখানে ছিলেন?
–হ্যাঁ, ছিলাম। খুবই বিশ্রী কাজ ছিল এগুলো। তবে উদ্দেশ্যহীন কাজ বলেই ভেবেছিলাম।
-উদ্দেশ্যহীন হয়তো বলা যাবে না। বললেন নীল, ব্ল্যাকবার্ড খনির বিষয়ে আপনার কিছু জানা আছে মিস ডাভ?
-ওরকম নামের কোন খনির কথা শুনেছি বলে মনে হয় না।
–আপনি মেরী ডাভ। তার চোখে ভয়ের আভাস দেখতে পেলেন নীল।
–এ কিরকম অদ্ভুত প্রশ্ন, ইনসপেক্টর? আপনি কি আমার আসল নামে সন্দেহ করছেন?
–ঠিক তাই। আমি বলতে চাইছি, আপনার নাম রুবি ম্যাকেঞ্জি।
মেরী ডাভ কোন প্রতিবাদ করলেন না। অদ্ভুত এক দৃষ্টিতে নীলের দিকে তাকিয়ে রইলেন কয়েক মুহূর্ত।
নীল লক্ষ করলেন, মেরী ডাভের দৃষ্টি ভাবলেশহীন।
-তাহলে, আমি কি বলব আশা করছেন?
দয়া করে বলুন, আপনার নাম কি রুবি ম্যাকেঞ্জি?
–আমার নাম মেরী ডাভ।
–এর সত্যতা প্রমাণ করতে পারবেন?
–কি দেখতে চান আপনি? আমার জন্মের প্রমাণপত্র?
-সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি না। কেন না আপনার কাছে কোন মেরী ডাভের বার্থ সার্টিফিকেট থাকতে পারে। আপনার কোন বান্ধবী হয়তো, এখন মৃত।