–অবশ্যই তাই।
–কিন্তু, গত বসন্তকালে আপনি আপনার ভাইকে বাবার কাজকর্ম সম্পর্কে আপনার দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছিলেন। আপনি চাইছিলেন, আপনার ভাই যেন আপনার সঙ্গে যোগ দিয়ে বাবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তাই নয় মিঃ ফর্টেস্কু?
–একরকম–হ্যাঁ, মনে হয় তাই। ভীতস্বরে বললেন। পার্সিভাল।
নীল এবার ল্যান্সের দিকে তাকালেন।
আপনি চিঠি পেয়েছিলেন।
ল্যান্স মাথা নেড়ে সায় দিলেন।
–কি উত্তর দিয়েছিলেন আপনি?
–আমি পার্সিকে লিখেছিলাম, ওসব ব্যাপার নিয়ে আমি মাথা ঘামাতে চাই না। আর বুড়োকে নিজের পথে চলতে দেওয়াই ভাল। কেন না, উনি কি করছেন, ভালই জানেন।
ইনসপেক্টর নীল পার্সিভালের দিকে তাকালেন।
–আপার ভাইয়ের কাছ থেকে ওরকম উত্তর পেয়েছিলেন?
–মনে হয় মোটামুটি তাই ছিল।
-ইনসপেক্টর নীল, একটা ধারণা আপনার পরিষ্কার হওয়া দরকার। ল্যান্স বললেন, সম্ভবত এরকম একটা কারণেই বাবার কাছ থেকে একটা চিঠি পাই। তারপরই নিজের চোখে সবকিছু দেখার জন্য আমি আসি। বাবার সঙ্গে সামান্যই কথা হয়েছিল আমার। আমি এটা বুঝতে পেরেছিলাম, তিনি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। নিজের সবকিছু সামলাবার মতো ক্ষমতা তার ছিল। যাই হোক, কেনিয়ায় ফিরে গিয়ে প্যান্টের সঙ্গে আলোচনায় ঠিক করি বাড়ি ফিরে আসব আর সব যাতে ঠিক ভাবে চলে দেখব।
কথা শেষ করে ল্যান্স চকিতে পার্সিলের দিকে তাকালেন।
–তোর কথাটা আপত্তিকর। বললেন পার্সিভাল, তুই ইঙ্গিত করতে চাইছিস, আমিই বাবাকে ভারাক্রান্ত করে তুলেছিলাম।
কিন্তু প্রকৃত সত্য তা নয়-তার স্বাস্থ্যের অবস্থাই আমার দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছিল। আর ভাবনা হয়েছিল
পার্সিভালকে কথা শেষ করতে না দিয়ে ল্যান্স বলে উঠলেন, তুমি তোমার পকেটের কথাটাই ভেবেছিলে। ঠিক আছে–
বলে উঠে দাঁড়ালেন ল্যান্স। তার মুখের ভাব সম্পূর্ণ পাল্টে গেল।
–এখানে থাকতে চাই বলে তোমার প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করাই আমার উদ্দেশ্য ছিল। তুমি একা সব লুটেপুটে খাবে তা আর হতে দেব না ভেবেছিলাম। কিন্তু…যাইহোক তোমার সঙ্গে একজায়গায় কাজ করা আমার পোষাবে না। তুমি চিরকালই নোংরা, ধূর্ত। মিথ্যা ছাড়া কিছু বোঝ না।
আর একটা কথাও বলব, অবশ্য প্রমাণ করতে পারব না। তবু বলছি, অতীতে যে চেক জাল করার ঘটনা নিয়ে আমাকে বাড়িছাড়া হতে হয়েছিল, আমার বিশ্বাস সেই জঘন্য কাজটা তুমিই করেছিলে।
তোমার মতো এমন নীচমনা জঘন্য প্রবৃত্তির মানুষকে আমি সহ্য করতে পারি না।
তুমি তোমার সাম্রাজ্য নিয়ে থাক। আমি, যেমন বলেছি, আমার ভাগের যা কিছু নিয়ে প্যাটের সঙ্গে অন্য কোন দেশে চলে যাবো। এদেশে আর নয়।
তোমার ইচ্ছে হলে সিকিউরিটিগুলো বাঁটোয়ারা করতে পার। যেগুলোতে ঝুঁকি নেই এমন সব কিছুই তুমি রাখতে পার, আমি কোন প্রতিবাদ করব না। বাবার যেসব ঝুঁকির লগ্নী ছিল, আমি মনে করি, তার শতকরা দু-তিন ভাগই আমার ভাগ্য ফিরিয়ে দিতে পারে। বাবার বুদ্ধির ওপর আমি আস্থাহীন নই।
ল্যান্সের রুদ্রমূর্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে মনে হচ্ছিল বুঝি তিনি এখুনি পার্সিভালের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বেন। পার্সিভাল দ্রুত নীলের পেছনে কয়েক পা সরে দাঁড়ালেন।
না, পার্সি তোমার গায়ে হাত দেব না। ল্যান্স বললেন, তুমি যা চাইছিলে, তাই হলো, আমি এখান থেকে চলে যাব। তোমার খুশি হওয়া উচিত।
দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে ল্যান্স বললেন, আর একটা কথা বলে যাই, ওই ব্ল্যাকবার্ড খনির ব্যাপারটাও ইচ্ছে হলে আমাকে দিতে পার। এসব খুনখারাবির পেছনে কোন ম্যাকেঞ্জি থাকলে তাদের আমি আফ্রিকায় নিয়ে যাব।
এতবছর বাদে কেউ প্রতিশোধ নিতে এসেছে, এসব আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু সম্ভবত ইনসপেক্টর নীলও ওটাকেই গুরুত্ব দিয়ে ভাবছেন,
–এ একেবারেই অসম্ভব। বললেন পার্সিভাল।
–অসম্ভব হলে উনি কালোপাখি আর বাবার পকেটের রাই নিয়ে এত খোঁজখবর করছেন কেন? কি বলেন ইনসপেক্টর?
–গত গ্রীষ্মের সেই ব্ল্যাকবার্ড বা কালোপাখির ব্যাপারটাই উনি বলছেন মিঃ ফর্টেস্কু। এ বিষয়ে কিছু খোঁজখবর নিতে হয়েছে।
-ওসব বাজে ব্যাপার। ম্যাকেঞ্জিদের কথা অনেককাল সবাই ভুলে গেছে। -কিন্তু আমি শপথ করেই বলতে পারি, একজন ম্যাকেঞ্জি আমাদের মধ্যে রয়েছে। ইনসপেক্টরও মনে হয় এরকম সন্দেহই করছেন।
২. ইনসপেক্টর নীল সার্জেন্ট
দ্বিতীয় পর্ব
ইউট্টি লজে পৌঁছেই ইনসপেক্টর নীল সার্জেন্ট হেঁকে বললেন, মিস মারপলকে বল, আমি এখনই তার সঙ্গে কথা বলতে চাই।
একটু পরেই মিস মারপল ঘরে ঢুকলেন।
–বেশিক্ষণ বসতে হয়নি তো ইনসপেক্টর। আমি মিসেস ক্রাম্পের সঙ্গে রান্নাঘরে কথা । বলছিলাম। আপনাদের পক্ষে কাজ করা সহজ, সরাসরি আসল বক্তব্যে পৌঁছতে পারেন। আমি কথায় কথায় কাজ উদ্ধার করতে পছন্দ করি।
–আপনি নিশ্চয় গ্ল্যাডিস মার্টিনকে নিয়েই কথা বলছিলেন?
-হ্যাঁ। দেখলাম মিসেস ক্রাম্প মেয়েটার সম্পর্কে অনেক কথাই জানে। মানে আমি বলছি গ্ল্যাডিসের নানা ভাবনাচিন্তার কথা।
–ওতে কোন সাহায্য হয়েছে? নীল বললেন।
–হ্যাঁ। অনেক কাজ হয়েছে।
–শুনুন মিস মারপল, আপনাকে একটা জরুরী কথা বলব বলে খোঁজ করছিলাম।
–বলুন ইনসপেক্টর।
–স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডে আপনার কথা অনেক শুনেছি। আপনার বেশ খ্যাতি আছে–