ল্যান্স একটু গম্ভীর হলেন। বুঝতে পারলেন না পার্সিভাল তার সেক্রেটারি পরিবর্তন করল নিরাপদ থাকার জন্য না খরচ কমাবার জন্য।
ল্যান্স এগিয়ে গিয়ে তার বাবার ব্যক্তিগত কামরার দরজা খুলে ধরলেন। তিনি আশ্চর্য হয়ে দেখলেন, পার্সিভাল কামরায় নেই। ডেস্কের পেছনে তার বদলে বসে আছেন ইনসপেক্টর নীল। একরাশ কাগজ ঘাঁটাঘাটি করছেন। শব্দ পেয়ে মুখ তুলে তাকালেন তিনি।
–সুপ্রভাত মিঃ ফর্টেস্কু। আপনি নিশ্চয়ই কাজকর্ম বুঝে নিতে এসেছেন?
–পার্সি তাহলে আপনাকে বলেছে আমি অফিসে ফিরে আসছি?
–হ্যাঁ বলেছেন।
–পার্সি নিশ্চয়ই খুশি হতে পারেনি। ও ভাবছে আমি ওর পিঠেয় ভাগ বসাতে চাইছি। ভয়ও পাচ্ছে, পাছে ব্যবসার টাকা নষ্ট করব বলে।
তবে কি জানেন ইনসপেক্টর, আমি মুক্ত বাতাসের মানুষ অফিসের ধরাবাঁধা জীবন আমার সইবে না। দম বন্ধ হয়ে যাবে। তবে কথাটা দয়া করে পার্সিকে জানাবেন না। ওকে নিয়ে একটু মজা করতে হবে। পুরনো পাওনা মেটাতে হবে।
–আপনার পুরনো পাওনা? কথাটা কেমন অদ্ভুত শোনাচ্ছে? নীল বললেন।
–সে পুরনো কাহিনী
–হ্যাঁ, চেক নিয়ে কিছু একটা ঘটেছিল শুনেছি। আপনি কি এর কথাই বলছেন?
–আপনি অনেক কিছুই জানেন ইনসপেক্টর। আমার বাবা আমাকে এই নিয়ে লাথি মেরে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
নীল এবারে অন্যভাবে কথা শুরু করলেন। আমার মনে হয়, আপনার ভাই আপনার বাবার ছায়াতেই ছিলেন।
-বাইরে থেকে তাই মনে হয়। কিন্তু আমি জানি পার্সি বরাবর নিজের পথেই চলেছে। কেউ সেটা বুঝতে পারেনি।
নীল ডেস্কের কাগজপত্র হাতড়ে একটা চিঠি বার করে এগিয়ে ধরলেন।
-এই চিঠিটা আপনিই লিখেছিলেন, তাই না মিঃ ফর্টেস্কু?
ল্যান্স চিঠিটা হাতে নিয়ে দেখলেন। পরে ফেরত দিলেন।
প্রিয় বাবা,
প্যাটের সঙ্গে সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। তোমার প্রস্তাবে রাজি হতে আমার আর কোন আপত্তি নেই। এখানে সব গুছিয়ে নিতে নিতে একটু সময় লাগবে। আগামী অক্টোবর মাসের শেষ নাগাদ বা নভেম্বরের গোড়ার দিকে রওনা হতে পারব। সময়টা চিঠিতে জানাব। আশাকরি আমাদের সম্পর্ক আগের চেয়ে ভালই হবে। সাধ্যমত আমি সেরকম চেষ্টাই করব। শরীরের দিকে লক্ষ্য রেখো। —
তোমার ল্যান্স
–গত গ্রীষ্মে কেনিয়ায় পৌঁছে লিখেছিলাম। বাবা এটা রেখে দিয়েছিলেন বুঝি? কিন্তু অফিসের কাগজপত্রে কেন?
-না, মিঃ ফর্টেষ্ণু। এটা ইউট্টি লজের কাগজপত্রে পাওয়া গেছে। চিঠিটা আপনি কোন ঠিকানায় পাঠিয়েছিলেন?
ল্যান্স একটু ভাবতে চেষ্টা করলেন। পরে বললেন, হ্যাঁ মনে পড়েছে, তিনমাস আগের কথা ততা–চিঠিটা অফিসেই পাঠাই। কিন্তু ইনসপেক্টর, একথা জানতে চাইছেন কেন?
–দেখলাম যে আপনার বাবা এটা এখানে ব্যক্তিগত ফাইলে রাখেন নি। ইউট্রি লজে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমি সেটা ডেস্কের মধ্যে পেয়েছি। ভাবছি, তিনি এরকম করলেন কেন?
-মনে হয় পার্সির চোখের আড়ালে রাখতে চেয়েছিলেন। হেসে বললেন ল্যান্স।
–তাহলে আপনার বাবার ব্যক্তিগত কাগজপত্র দেখার সুযোগ আপনার ভাইয়ের ছিল, বলছেন?
-না, ঠিক তা বলছি না, ইতস্তত করলেন ল্যান্স, তবে পার্সি বরাবর এ ধরনের কাজ করে এসেছে।
-বুঝতে পারলাম। বললেন নীল।
ঠিক এই সময়েই পার্সিভাল ফর্টেস্কু দরজা খুলে ঘরে ঢুকলেন। ল্যান্সকে দেখে তিনি অবাক হলেন।
–হ্যাল্লো, তুই এসে গেছিস?
–হ্যাঁ, কাজের জন্য তৈরি হয়েই এসেছি। আমার করার কি কাজ আছে দাও।
পার্সিভাল তিক্ত হাসলেন। বললেন, আপাতত কোন কাজ তো দেখছি না। তবে মনে হয় আগে আমাদের ঠিক করে নেওয়া দরকার, ব্যবসার কোন দিকটা দেখা তোর পক্ষে সম্ভব। একটা অফিস কামরাও তোর জন্য ঠিক করতে হবে।
-ভালকথা, মৃদু হাসলেন ল্যান্স, রূপসী মিস গ্রসভেনরকে সরালে কেন? বড় বেশি জেনে ফেলেছিল বলে?
–কি সব আজেবাজে কথা বলছিস, ক্রুদ্ধস্বরে বলে উঠলেন পার্সিভাল। মিস গ্রসভেনরের কাজের ওপর আর আস্থা রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। মিসেস হার্ডক্যাসল খুবই কাজের : তাছাড়া মাইনেও কম।
-মাইনে কম? কিন্তু ওই অজুহাতে, মনে হয়, অফিস কর্মচারীদের বাছাই করে সরিয়ে দেওয়া ঠিক কাজ নয়। তাছাড়া আমাদের এই দুঃসময়ে অফিস কর্মচারীরা যেভাবে সবদিক সামলেছে, তাতে তাদের সকলের মাইনে বাড়িয়ে দেওয়াই উচিত বলে মনে করি আমি।
–আমি এটাই ভয় পাচ্ছিলাম। অযথা খরচ করার মতলব সবসময় তোর মাথায় ঘোরে। ব্যবসার যা বর্তমান অবস্থা, এখন খরচ না কমালে সামাল দেওয়া যাবে না।
ইনসপেক্টর নীল সামান্য কাশলেন। তারপর বললেন, মাপ করবেন মিঃ ফর্টেস্কু, এই ব্যাপারেই আমি কয়েকটা কথা বলতে চাই।
-হ্যাঁ, বলুন ইনসপেক্টর। বললেন পার্সিভাল।
–যা দেখছি, গত একবছর ধরে আপনার বাবার কাজকর্ম প্রতিষ্ঠানের খুবই ক্ষতির কারণ হয়ে উঠেছিল।
–হ্যাঁ। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
–আপনি বারবার ডাক্তার দেখাবার কথা বলেও তাকে রাজি করাতে পারেননি তাই না?
–ঠিক তাই, ইনসপেক্টর। আমার বাবা ব্যবসার প্রচণ্ড ক্ষতির কারণ হয়ে উঠেছিলেন।
-খুবই দুর্ভাগ্যজনক অবস্থা। বললেন নীল। তবে ব্যবসার দিকে থেকে তার মৃত্যু। মঙ্গলজনক হয়েছে বলতে হবে।
পার্সিভাল বললেন, হ্যাঁ, তা হয়েছে, বলা চলে।
–আর একটা কথা মিঃ ফর্টেস্কু, আপনি বলেছিলেন যে আপনার ভাই ইংলণ্ড ছেড়ে যাওয়ার পর তার সঙ্গে কোন যোগাযোগ হয়নি–